
ভলতেয়ারের একটি প্রেমের চিঠি
ভাষান্তর: হৃদ্য আবদুহুপ্রকাশিত : নভেম্বর ২১, ২০২২
ফরাসি চিন্তাজগতে আলোদায়ী প্রধান দিকপাল ভলতেয়ারের আজ জন্মদিন। তার আসল নাম ফ্রঁসোয়া মারি আরুয়ে। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ১৬৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২১ নভেম্বর তার জন্ম। পিতা ফ্রঁসোয়া আরুয়ে ছিলেন নোটারি ও সরকারের ট্রেজারি দফতরের কর্মকর্তা। মাতা মেরি মার্গারিট দোমার ছিলেন পোয়াতু প্রদেশের সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে। হেগে অলিম্পি দ্যুনোয়ার প্রতি ভলতেয়ারের ছিল দুর্নিবার আকর্ষণ। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে যে কোনো নারীর প্রতি তার আকর্ষণ কমে যেতে থাকে। জীবন অভিজ্ঞতায় তিনি বুঝতে পারেন, সৌন্দর্য তৃষ্ণা মেটানোর চূড়ান্ত গন্তব্য নারী নয়। আর তাই সেই গন্তব্যের খোঁজে তিনি ডুব দিয়েছিলেন নিজের আত্মার ভেতর। এ কারণে জীবনের শেষদিকে তিনি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গিয়েছিলেন। ১৭১৩ খ্রিস্টাব্দে দ্যুনোয়াকে লেখা ভলতেয়ারের একটি চিঠি:
প্রিয়তমা,
রাজার নামে আমি এখানে বন্দি। তারা আমার জীবন নিয়ে নিতে পারে, কিন্তু তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা কখনোই নয়। আজ রাতে তোমার সঙ্গে আমি দ্যাখা করব। এর জন্য যদি আমার ফাঁসিও হয়, পরোয়া করি না। নিরাশার যে ভাষায় তুমি চিঠি লেখ, ঈশ^রের দোহায়, সে ভাষায় আমার সঙ্গে কথা বোলো না। তোমাকে বাঁচতে হবে। সাবধানে চলতে-ফিরতে হবে। তোমার সবচেয়ে শক্তিশালী শত্রæ ভেবে তোমার মা সম্পর্কে সবসময় সাবধান থাকবে। কী বলছি শোনো, সবার সম্পর্কেই সাবধানে থাকবে। কাউকে বিশ্বাস করবে না। তৈরি থেকো। চাঁদ ওঠার সাথে সাথেই হোটেল থেকে ছদ্মবেশে আমি বেরিয়ে পড়ব। এরপর গাড়ি ভাড়া নেব। বাতাসের গতিতে আমরা শেভেনিঞ্জনে পৌঁছব। সঙ্গে আমি কাগজ ও কালি নেব। আমরা সেখানে প্রেমের চিঠি লিখব। সত্যিই যদি আমাকে ভালোবাসো তাহলে নিজেকে ভরসা দাও আর তোমার সব শক্তি ও উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগাও। তোমার মা যেন কিছুই টের না পান। তোমার একটা ছবি আনতে চেষ্টা কোরো। বিশ্বাস রেখো, পৃথিবীর সবচেয়ে নিষ্ঠুর অত্যাচারও তোমার থেকে আমাকে ফেরাতে পারবে না। না, তোমার থেকে আমাকে বিচ্ছিন্ন করার কোনো শক্তি ভূপৃষ্ঠে নেই। আমাদের ভালোবাসার ভিত্তি নৈতিকতা। যতদিন আমরা বাঁচব, আমাদের ভালোবাসাও ততদিন বেঁচে থাকবে। পৃথিবীতে এমন কিছুই নেই যা তোমার জন্য আমি দুঃসাহস দেখিয়ে বরণ করব না। অবশ্য এসবের চেয়েও অনেক বেশি কিছু পাবার যোগ্য তুমি। আমার আপন হৃদয়, বিদায়।