চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ীকে পাথর মেরে হত্যা করলেন যুবদল নেতা

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : জুলাই ১১, ২০২৫

চাঁদা না দেওয়ায় ভাঙারি ব্যবসায়ী মো. সোহাগকে (৪৩) পাথর মেরে হত্যা করেছে যুবদল নেতা মঈন ও তার সহযোগীরা। বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটসংলগ্ন রজনী ঘোষ লেনে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।

অভিযুক্ত যুবদল নেতা মঈনসহ দুজনকে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ গ্রেফতার করে। ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে এবং জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

নিহত সোহাগ কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পূর্ব নামাবাড়ি গ্রামের ইউসুফ আলী হাওলাদারের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে রজনী ঘোষ লেনে ভাঙারি ব্যবসা করতেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত মঈন নিজেকে যুবদলের চকবাজার থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী বলে পরিচয় দিয়ে এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি, হুমকি ও দখলদারির মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত সোহাগের বন্ধু মামুন বলেন, “২-৩ মাস ধরে মঈন নিয়মিতভাবে সোহাগের কাছে চাঁদা দাবি করছিল। সোহাগ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে কিছুদিন আগে মঈন তার দোকানের সামনে এসে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বলে, ‘তুই পারবি না পালাতে, দেখে নেব তোকে।’ সেই হুমকিরই বাস্তবায়ন ঘটে বুধবার সন্ধ্যায়।”

মামুন আরও বলেন, “মঈনসহ ৪-৫ জন সোহাগকে একা পেয়ে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তার মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করে। হামলাকারীরা সোহাগের শরীর থেকে পোশাক খুলে ফেলে এবং অমানবিকভাবে মারধর করে। ঘটনাস্থলেই সোহাগ মারা যায়।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা ভয়ে কেউ এগিয়ে যেতে পারিনি। কারণ, মঈন এলাকার চিহ্নিত দুর্বৃত্ত ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে এসব অপকর্ম চালিয়ে আসছে।”

মঈনের বিরুদ্ধে এর আগেও মিটফোর্ড হাসপাতালের আশপাশের ফুটপাত ও রাসায়নিক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে ঘুস বাণিজ্যসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

এমনকি স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বহুবার তাকে নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তাদের।

লালবাগ থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব রাব্বি বলেন, “আমি মঈনকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি, সে যুবদলের সক্রিয় কর্মী। তবে চকবাজার থানা যুবদলের কোনো কার্যকর কমিটি নেই বহুদিন ধরে। বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় সে এ ধরনের নৃশংস কাজ করবে, তা আমার বিশ্বাস হয় না।”

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, “ভাঙারি ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। সেই বিরোধ থেকেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। এরই মধ্যে মঈন ও জনি নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”

সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও এবং স্থানীয়দের বয়ান মিলিয়ে ধারণা করা হচ্ছে, এটি পূর্বপরিকল্পিত ও সংগঠিত হত্যাকাণ্ড। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষও এই নৃশংসতার দ্রুত বিচার ও অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছে।