রাজা রামমোহন রায়ের আজ জন্মদিন

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : মে ২২, ২০২৫

অবিভক্ত বাংলার সমাজ, শিক্ষা ও ধর্মীয় সংস্কারক রাজা রামমোহন রায়ের আজ জন্মদিন। ১৭৭২ সালের ২২ মে হুগলি জেলার রাধানগর গ্রামে তার জন্ম। পিতা রামাকান্ত রায়, মাতা তারিণী দেবী।

রামমোহন রায় প্রথম ভারতীয় ধর্মীয়-সামাজিক পুনর্গঠন আন্দোলন ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা ও বাঙালি দার্শনিক। তৎকালীন রাজনীতি, জনপ্রশাসন, ধর্মীয় ও শিক্ষাক্ষেত্রে তিনি উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখেন।

বেদ, বাইবেল, কোরআন, পুরাণ, উপনিষদ, গীতা, ভাগবত, জেন্দাবেস্তা, ত্রিপিটক ইত্যাদি সব ধর্মশাস্ত্র গভীর মনোনিবেশ সহকারে অধ্যয়নের পর তিনি এই সত্যে উপনীত হন যে, সব ধর্মই মূলত এক।

১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে রামমোহন ‘আত্মীয় সভা’ গঠন করেন। ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে তিনি একে ‘ব্রাহ্মসভা’য় পরিণত করেন। ১৮২৮ সালে এটি আবার ‘ব্রাহ্মসমাজ’ নামে পরিচিত হয়। ব্রাহ্মসভার মূল বক্তব্য, ঈশ্বর এক ও অভিন্ন, সব ধর্মের মূল কথা এক।

ভারতীয় নারীদের জন্য রাজা রামমোহন রায়ের চিরস্মরণীয় অবদান হলো সতীদাহ প্রথার অবসান ঘটানো। তৎকালে হিন্দু সমাজে মৃত স্বামীর জ্বলন্ত চিতায় বিধবাদের পুড়ে মরতে হতো। মৃত স্বামীর জ্বলন্ত চিতায় বিধবাদের সহমরণকে ‘সতীদাহ প্রথা’ বলা হতো।

এই নিষ্ঠুর প্রথা দূরীকরণের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দ থেকেই রাজা রামমোহন রায় এই প্রথার বিরুদ্ধে প্রবল জনমত গড়ে তুলতে প্রয়াসী হন। তার প্রচেষ্টায় বড়লাট লর্ড বেন্টিংক ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে ‘সপ্তদশ-বিধি’ নামে আইন পাস করে এই বর্বর ‘সতীদাহ প্রথা’ নিষিদ্ধ করেন।

রামমোহন রায় ১৮২৮ সালের ২০ আগস্ট কলকাতায় ইংল্যান্ড যাত্রার আগে দ্বারকানাথ ঠাকুরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে এই ব্রাহ্মসমাজ এক সামাজিক ও ধর্মীয় আন্দোলন এবং বাংলার নবজাগরণের পুরোধা হিসেবে কাজ করে।

সম্ভ্রান্ত ও বিজ্ঞ সমাজে তিনি খুব সমাদর পেয়েছিলেন। মোঘল সম্রাট দ্বিতীয় আকবর রামমোহন রায়কে ‘রাজা’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৮৩১ সালে মুঘল সাম্রাজ্যের দূত হিসেবে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ভ্রমণ করেন তিনি। ১৮৩৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর মেনিনিজাইটিসে আক্রান্ত হয়ে ব্রিস্টলে তিনি মারা যান।