অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়ের গদ্য ‘মনের জানালা বেয়ে’

প্রকাশিত : আগস্ট ১৪, ২০২২

বাড়ির দেয়ালঘেঁষা প্রতিবেশীদের বাড়িগুলোর চাপে যখন হাঁসফাঁস করে উঠি, মনে হয়ে বেরিয়ে পড়ি। ইঁট, বালি, সিমেন্টের ধূসর জগৎটার বাইরে কোথাও চলে যাই। চলে যাই যেখানে রামধনু রঙ খেলা করে বেড়ায়। দমবন্ধ করা শহুরে গন্ধেরা যেখানে নাক চেপে ধরে না। যেখানে বাতাসে ফুলের আঘ্রাণ... পায়ের তলায় মাটির স্পর্শ, শিশিরে ভেজা ঘাসের নরম ছোঁয়া।

বেশ সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ব। সাথে থাকবে না কোনও বোঝা। অত সকালে তো রাস্তায় রিকশা চলবে না। তাই পায়ে হেঁটেই পৌঁছে যাব কিলোমিটার দুয়েক দূরের রেলস্টেশনে। পথে দেখা হবে কিছু প্রাতঃভ্রমণকারীর সাথে। জিজ্ঞাসা করবে, চললেন কোথায়? আমিও হাত তুলে সামনে দেখাব। পথ তো সামনেই চলে। স্টেশনে পৌঁছে আগে কান পেতে শুনব, কোথাকার ট্রেন আসছে। তারপর টিকিট কেটে সেই ট্রেনে উঠে পড়ব।

ট্রেন ছাড়লেই এক-জানলা হাওয়া আমার চুল উড়িয়ে দেবে। জামার হাতা, গলার ফাঁক দিয়ে হাওয়া ঢুকবে। কংক্রিটের বাড়ি-ঘরের গা থেকে বেরোনো উষ্ণতায় ঘামতে থাকা শরীর আস্তে আস্তে শীতল হবে। গরম কেটলি হাতে চা-ওয়ালা উঠবে কামরায়। মাটির ভাঁড়ে ঢেলে দেবে গরম চা। আমি বলব, এত ছোট ভাঁড় কেন গো তোমার? এইটুকুতে তেষ্টা মেটে? বড় ভাঁড় রাখতে পারো না? সেই শুনে আধখালি ভাঁড়ে আরও একটু চা ঢেলে দেবে সে। ট্রেনটা বাঁক নেবে মেন লাইন থেকে। নগরসভ্যতাকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাবে ধূ ধূ মাঠের মধ্যে দিয়ে। লাইনের পাশে পাশে চলবে ইলেক্ট্রিকের তার আর সেই তারে বসে থাকা মাছরাঙা, বাঁশপাতি, ঘুঘু, নীলকণ্ঠ, ফিঙে অভিবাদন জানাবে জানলার শিকে মাথা রেখে একদৃষ্টে সবুজের দিকে তাকিয়ে থাকা আমাকে। আমার ঠোঁটের কোণায় হাসি ওদের ভালোবাসা জানাবে। এমন সময় লাইনের পাশে বিরাট দিঘি। তার জলে হাঁস চরবে, পানকৌড়ি ডুব দেবে। জলের ধারে এক পা তুলে দাঁড়িয়ে থাকবে বক।

জলস্তরের নিচে সামান্য চলাচলেও সে বুঝে নেবে খাদ্যের উপস্থিতি। তার লম্বা ঠোঁটে উঠে আসবে ছটফট করতে থাকা মাছ। দিঘি পেরোতেই এসে পড়বে একটা স্টেশন। গাঁয়ের কিছু লোক ব্যাগ-বস্তা নিয়ে দাঁড়িয়ে প্লাটফর্মে। নামার কেউ থাকলে নামবে। তারপর ওই ব্যাগ-বস্তারা উঠে পড়বে ট্রেনে। ট্রেনের মেঝেয়, সিটের তলায় জায়গা খুঁজে নেবে তারা। বস্তার মালিক উবু হয়ে বসবে ট্রেনের দরজায়। ট্রেন ছেড়ে দিলে একটা বিড়ি ধরিয়ে সুখটান দেবে। ট্রেন চলবে মাঠ, জঙ্গল, খাল, বিল পেরিয়ে। খালের ধারে একটা নৌকো দেখা যাবে। জাল ফেলেছে জেলেরা। মাছ উঠছে কিনা বোঝার আগেই ট্রেন পৌঁছে যাবে পরের স্টেশনে। খাঁ খাঁ স্টেশনে জনা চারেক যাত্রী। একটা পান-বিড়ির দোকান। প্লাটফর্মের শেডের তলা থেকে শোনা যাবে পায়রার বক্ বক্ বকম্ বকম্। আবার শব্দ করে উঠবে রেলের ইঞ্জিন। গাড়ির চাকা গড়াতে থাকবে সামনে। দু`পাশে চাষের জমি। সেখানে আলু গাছের সবুজ পাতায় রোদ খেলা করবে। আলুর ক্ষেত জুড়ে চাষি আর চাষিবৌদের অবনত মস্তক আর উন্নত নিতম্বের সারি। আলু তুলে তুলে ক্ষেতের একপাশে জড়ো করছে তারা। আলুক্ষেতের ধার দিয়ে লাগানো সরষে ফুলের মুখে এখনও লেগে রয়েছে হলুদ হাসির ছোঁয়া।

বেলা গড়াবে। নাম-না-জানা কোনও এক খাঁ খাঁ স্টেশনে টুপ করে নেমে পড়ব। তাকিয়ে দেখব এদিক-ওদিক। ওই ওপাশে একটা ছোট্ট দোকান। ধাতব আওয়াজ তুলে ট্রেন প্লাটফর্ম ছেড়ে বেরিয়ে যাবে। আমি পায়ে পায়ে এগিয়ে যাব ওই দোকানটার দিকে। জানতে চাইব, আছে নাকি কিছু, ক্ষিদে মেটাবার? দোকানের মাঝবয়সী ছেলেটা একটা অ্যালুমিনিয়ামের কাঁসিতে কয়েক মুঠো মুড়ি ছড়িয়ে তার উপর হাতা দুয়েক গরম ঘুঘনি ঢেলে এগিয়ে দেবে। আমার শহুরে হাত চামচ চেয়েও পাবে না। তারপর দোকানের সামনে প্লাটফর্মের বেঞ্চিতে বসে হাত দিয়ে মুঠো ভরে তুলে দেব সেই খাবার মুখের ভিতর। দোকানি দুটো কাঁচালঙ্কা দিতে চাইবে। আমি নেব না। বিরিয়ানী, পিৎজা আর পাস্তায় অভ্যস্ত আমার জিভে ঘুঘনি যেন এমনিতেই ঝাল ঠেকছে। কেটলিতে রাখা টিউবওয়েলের জল এক নিঃশ্বাসে শেষ করব। দোকানি জানতে চাইবে, যাবেন কোথায়? ওই যে ঐদিকে। দেখিয়ে দেব গ্রামের দিকে এঁকেবেঁকে চলে যাওয়া মেঠো পথটার দিকে। তারপর দাম মিটিয়ে নেমে পড়ব রাস্তায়।

রাস্তার ধার থেকে দু`ধারে ঢালু হয়ে নেমে গেছে জমি। চাষের জমি, জলা জমি, ঝোপঝাড়ে ভরা জমি। রোদ মাথায় নিয়ে আমি এগিয়ে যাব পায়ে পায়ে। মাঝে মাঝে পথচলতি সাইকেল অবাক চোখে দেখে যাবে আমাকে। ভট্ ভট্ আওয়াজ তুলে আলুর বস্তা বোঝাই ভ্যানগাড়ি পিছন থেকে পেরিয়ে যাবে আমাকে। রাস্তার ধুলোয় ঢেকে যাবে আমার মাথা, মুখ। ধুলো ঢোকা চোখ কচলাব। আর তখনই একটা দোয়েল ডেকে উঠবে পাশের কলাগাছের মাথা থেকে। পুকুরের পাশে কালো চাদরে পিঠ-ঢাকা সাদাবুক ডাকপাখিগুলো দৌড়োদৌড়ি শুরু করে দেবে। তাদের ডাকে সুর মিলিয়ে ডেকে উঠবে গোটা দুই মুরগী। দু’একটা নেড়ি রাস্তার উপর উঠে এসে আমাকে দেখে ঘেউ ঘেউ করে উঠবে। অমানবীয় ডাকপিয়নের ডাকাডাকিতে গ্রামে ঢোকবার আগেই আমার পৌঁছার সংবাদ পেয়ে যাবে গ্রামবাসী। কৌতূহলী কয়েকটা বাচ্চা, তাদের কারও গায়ে জামা আছে-প্যান্ট নেই, কারও বা আদুর গা, তারা উঁকিঝুঁকি দেবে বাড়ির দাওয়া থেকে। তাদের পিছনে ঘোমটা মাথায় মায়েদের মুখ। লাঠি ঠুকতে ঠুকতে একটা ফোকলা বুড়ি সামনে এসে জিজ্ঞাসা করবে, কার বাড়ি যাবে বাবা?

কার বাড়ি যাব? কার বাড়ি? বাড়ি থেকে বেরিয়েই তো এসেছি। প্রকৃতির কোলে মাথা রাখব বলে। এখন কি করে বলি, কার বাড়ি যাব। আমার দ্বিধা দেখে বুড়ি আমার হাতটা ধরে ফেলবে খপ্ করে। কয়েক পা এগিয়ে খড়ে ছাওয়া মাটির বাড়ির সামনে এনে হাজির করবে। বাড়িটার পাশেই দুটো তালগাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে। পাশেই কঞ্চির বেড়া। বেড়ার ধারে বসে একটা বুড়ো লুঙ্গি পরে মুরগীর খাঁচা পরিষ্কার করছে। আমাকে দেখে তার মুখেও হাসি ফুটবে। ঘর থেকে একখানা গামছা এনে বলবে, চলুন দিকি, ওই পুকুরে ডুব দিয়ে আসি। আমার ছেলে-বৌ জমিতে আলু তুলতে গেছে সেই সকালে। তারা এই এল বলে। তারা এসে পড়লেই খেতে বসব সকলে।

কিছু বলার আগেই বুড়ো আমাকে টেনে নিয়ে যাবে বাড়ির পিছনে গাছের ছায়ায় ঢাকা পুকুরটার কাছে। তার গভীর সবুজ জল। পুকুরের পাশে হাল্কা শীতলতার আমেজ। আমার পোশাক ছাড়বার জড়তা দেখে হেসেই কুটোপাটি বুড়ো। ততক্ষণে সে লুঙ্গি ছেড়ে গামছা পরে নেমে পড়েছে পুকুরে। তাকে কেন্দ্র করে জলস্তরে তৈরি হতে থাকা বৃত্তগুলো বড় হতে হতে পৌঁছে যায় পুকুরের অন্য পাড়ে। আড়ষ্ট আমিও নেমে পড়ি প্রকৃতির বাথটবে। পায়ের নিচে জলের তলায় কোথাও শ্যাওলা, কোথাও উঁচু হয়ে থাকা পাথর, কোথাও শামুক। ঠাণ্ডা জলে রোমাঞ্চ জাগে রোমে রোমে। এবার আমি ডুব দেব। প্রকৃতির বুকে একেবারে সঁপে দেব নিজেকে। নিচু হয়ে বসে পড়ব জলে। মাথার উপর জল। আমার চুলগুলো জলে ভেসে উঠবে। চোখ খুললে দেখতে পাব জলের ভিতরটা। তার মধ্যে মাছেদের উঁকিঝুঁকি। একটা ব্যাঙ উঠে বসবে মাথায় কিম্বা কাঁধে। ধড়মড় করে উঠে পড়ব আমি। ভয় পেয়ে লাফ দেবে ব্যাঙটা, জলের উপর। হেসে উঠবে বুড়োটা। ততক্ষণে বুড়োর ছেলেও এসে পড়বে। পুকুরে দাপিয়ে বেড়াবে তার শরীর। মা-বৌ স্নান করবে মেয়েদের পুকুরে। স্নানের পর শহুরে সংকোচ ঝেড়ে ফেলে নগ্ন দেহের প্রতিটি জলবিন্দু মুছে নেব গামছা দিয়ে। তারপর তিনজনে ফিরে আসব মাটির ঘরে। ঘরে ঢোকার আগে মাচার গায়ে মেলে দেব ভিজে গামছাখানা। ঘরের ভিতর তিনটে পিঁড়ি পাশাপাশি পাতা। জলের গ্লাস আর স্টীলের থালায় পাহাড়প্রমাণ ভাত। আঁতকে উঠব আমি। না না,এত ভাত খাই না আমি!

তা বললে হয়। আমাদের গাঁয়ে এয়েছেন, দুটো ভাত না খেলে গৃহস্থের অমঙ্গল! অনেক পীড়াপীড়ির পর ভাতের পাহাড়ের গা থেকে হাতা দিয়ে খুবলে নেওয়া হবে কিছুটা। তারপর তার উপর নামবে গরম ডালের ঝরণা। সাথে বেগুন ভাজা আর একটা তরকারি। বুড়ি আর তার বৌ খাওয়াবে সামনে বসে। নিজেরা খাবে আমাদের হয়ে গেলে। খাওয়া হয়ে গেলে বৌটা ঘটি করে জল এনে ঢালবে আমার হাতে। উঠোনের এক কোণে। পরপর তিনটে পুরুষ-মানুষের হাত ধুইয়ে মাদুর পেতে দেবে দাওয়ায়। বুড়ো আর তার ছেলের সাথে আমিও গা এলাব সেখানে। এবার ভিতরে খেতে বসবে বুড়ি আর তার বৌ। বুড়ো একটা হাতপাখা এনে হাওয়া করবে আমাকে। আমি বারণ করলেও শুনবে না। শোনাতে থাকবে তাদের গ্রাম-জীবনের গল্প। পুকুরের ঠাণ্ডা জল, গরম গরম ভাত-ডাল-তরকারি, নাতিশীতল বাতাস...ঘুম নেমে আসবে আমার চোখের পাতায়।

আয়তনে বেশি বড় না হলেও তিনজনে বেশ সেঁধিয়ে গেছি গাছের কোটরটায়। পরণে গামছা। না, গামছা কই, পাতা দিয়ে ঢাকা লজ্জা। বাইরে বানরের দাপাদাপি। একটা হনুমানের খ্যাঁক্ খ্যাঁক্ শব্দ শোনা গেল। কাছেই কোথাও ডেকে উঠল একটা কাকর হরিণ। একটা ময়ূর চেঁচিয়ে উড়ে গেল যেন। তারপরেই নাকে এল বোটকা পাশব গন্ধটা। দম বন্ধ করে চুপটি করে পড়ে রইলাম তিনজনে। তিন অরণ্যমানব। এমন সময়ে ক্ষণিকের আর্তনাদ আর কয়েক ফোঁটা টাটকা গরম রক্তের ছিটে। কোটরের মুখে চোখ লাগিয়ে দেখলাম,হলুদ চামড়ায় কালো ডোরাকাটা দাগ জন্তুটা হরিণটাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে দূরে। তারপর সব আওয়াজ থেমে গেল। অনেকক্ষণ পরে বেরিয়ে এলাম আমরা একে একে, ওই কোটর থেকে। আমরা তিন অরণ্যমানব। একজন বুড়ো, তার জোয়ান ছেলে আর আমি। আমাদের হাতে ছুঁচলো পাথর,গাছের মোটা ডাল। আত্মরক্ষার উপকরণ। আকাশছোঁয়া গাছের নিচে আলো-আঁধারি। আর সেই আলো-আঁধারির প্রতিটা কোণে লুকিয়ে আছে আতঙ্ক। আমি সেই আতঙ্কগুলোকে যেন দেখতে পাচ্ছি। তারা এগিয়ে আসছে। চারদিক থেকে। তাদের চোখে আগুন জ্বলছে। বাকি দুজনকে আর দেখতে পাচ্ছি না। তারা কি অন্ধকারে মিশে গেল? আমি... আমি একা... আমার চারপাশে আগুন চোখ নিয়ে আতঙ্কের দল। তারা আমাকে ঘিরে ধরছে। আমি তাদের আগুনের উষ্ণতার অনুভব পাচ্ছি রোমে রোমে। এবার তারা আমার শরীর ছুঁয়ে ফেলবে।

আমি... আমি যে পুড়ে যাব! ফোনটা... ফোনটা কোথায় গেল? একটা ফোন করতে হবে। খুব জরুরি। আগুন চোখগুলো আমার শরীরে ঢুকে পড়ার আগেই আমায় ফোন করতে হবে। আমি যে আর ফিরতে পারবো না, এ খবরটাতো অন্তত দিতে হবে বাড়িতে! আমার কাঁধে স্পর্শ পাচ্ছি। আগুনটা কি তবে... না উষ্ণ নয়, শীতল স্পর্শ। বাবু, বাবু... উঠুন। ধড়মড়িয়ে উঠলাম। বুড়োটা একটা গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে। মুখে হাসি। কাঁচা আম পোড়া সরবৎ। আমাদের গাছের আম। খেয়ে নিন বাবু। গ্লাসটায় চুমুক দেব। ঠাণ্ডা সরবতের স্পর্শে ঘোরটা কেটে যাবে পুরো। নিজের ঘরের মানুষগুলোর জন্য মনটা ছটফটিয়ে উঠবে। হাত ঘুরিয়ে ঘড়ি দেখব আমি। লাস্ট ট্রেন ক`টায়? সাড়ে পাঁচটায় বাবু।

আর দেরি করা চলবে না। পা চালাব আমি। ক্ষেতের পাশ দিয়ে, পুকুরের ধার দিয়ে, ঝোপঝাড় ভেদ করে এগিয়ে চলা রাস্তাটা এখন যেন অনেক লম্বা। আরও দু’একজন চলেছে স্টেশন অভিমুখে। এবার দূরে দেখা যাবে রেললাইন। আর দেখা যাবে আপ লাইনের ট্রেন বেরিয়ে যাচ্ছে। অপু-দুর্গার মতো চেয়ে দেখব সেই রেলগাড়ির চলে যাওয়া। ডাউন ট্রেনের টাইম হয়ে আসছে। পা চালিয়ে এসে পড়ব স্টেশনে। সকালের দোকানটায় এক ভাঁড় চা খাব, যদি সময়ে কুলোয়। তারপর হুড়মুড় করে ট্রেনটা ঢুকে পড়বে। আমিও তার পেটের ভিতর সেঁধিয়ে যাব। ফেরার পথ ধরবে ট্রেন। সূর্য দিগন্তরেখার ঠিক উপরে থেকে সঙ্গ দেবে আমাদের। ট্রেনের গতি বাড়লে,সেও গতি বাড়াবে। কমলে, কমাবে। তারপর একসময় সে ঝুপ করে ডুব দেবে ঘুমের দেশে। কামরায় আলো জ্বলে উঠবে। আর কামরার বাইরে জোনাকির... অজস্র জোনাকির ওড়াউড়ি। অন্ধকার বাইরেটায় জোনাকিগুলো যেন একটু আগের সেই আগুনচোখা আতঙ্কগুলো। আমার ভয় লাগবে। যদিও কামরায় আরও জনাকয়েক যাত্রী আছে,তবুও আমার ভয় লাগবে। অন্ধকারের ভয়, নির্জনতার ভয়, নৈঃশব্দ্যের ভয়। আমি সিটে সিঁটিয়ে বসে থাকব। আর তখনই ট্রেনটা আবার মেন লাইনে এসে পড়বে। চারদিকে আলোকোজ্জ্বল বাড়িঘর, সুউচ্চ ফ্ল্যাটবাড়ি থেকে ভেসে আসা গুম্গুম মিউজিক বক্সের আওয়াজ। আমি হাঁফ ছাড়ব। নির্জন নিঃশব্দ প্রান্তরে আগুন-চোখের ওড়াউড়ি আর নেই। প্রকৃতি এখানে কংক্রিটের নিরাপত্তায় ঢাকা।