দেবাশিষ তেওয়ারীর একগুচ্ছ কবিতা

প্রকাশিত : নভেম্বর ২১, ২০১৯

হেমন্ত

পৃথিবী শুরুর আগে, চাঁদ লুট করে নিয়ে গেছে শয়তান
বনশ্রীও বনসাই তাই বানানো ঝর্নায় করে স্নান
মুখ মনে থাকে, ঠিকানা থাকে না
রোজ চিঠিগুলি সন্ধ্যায় উড়িয়ে নেন মেঘ-পোস্টম্যান।

সমুদ্র বিষণ্ণ হলে নাবিকও বিকীর্ণ তখন
ঠিকানা না পেলে চিঠি হয়ে ওঠে পাতাদের মন।

টেলিগ্রাম

যতটা লাল ছিল চোখ
তার চেয়ে বেশি তুমি দেখেছো
ভেবেছো কাপালিক চেটে খায় সিঁদুরে কপাল
সোনা খুব কম দামি এইখানে
গাছ তলে পড়ে থাকে চেরি ও আপেল

খুব ভালো রাঁধো তুমি, বাঁধো খুব ভালো চুল
অনেক জোনাকি ওরে তোমার লণ্ঠনপুর
তোমার ভাবনা— দূর...
তারও চেয়ে দূর জেনো সাত সমুদ্দুর

নবান্ন ১৯৯৯

বলে কয়ে আসিও না তুমি, তোমার আসবার কথা থাকলে
সামান্য সময়ে গিয়া নাচে মরুভূমি, রাতগুলি তারা গোণে।
কম দেই ঢের দেই কবিতা তো দিয়াছি তার ঘুঙুর পরে রাখলে
রিমঝিম বাজিও, দেখিও জাগব আমি ধান্য, ধান্য বুনে বুনে...

গমকাটা মৌসুম

ভিলেনের মৃত্যু হলে পরে নায়ক ভিলেন হতে থাকে। নায়ক ভিলেন হয়ে গেলে পরে মৃত্যু হতে থাকে তারও আর ভিলেন হয়ে উঠতে থাকে নায়ক, এখন বলো নায়ক কে? এমন এক প্রশ্ন-উপকথা ছড়িয়ে আছে তুন্দ্রা অঞ্চলের বিচ্ছিন্ন চড়াই-উৎরাই জুড়ে ছড়ানো ছোট্ট এক জনপদে। শ্বেত-ভল্লুকের চামড়ায় বানানো কাঁচুলি খুলে রাখে কারেনিনা। তার অপার্থিব জন্ম— চূড়া গির্জার গম্বুজে প্রকাশ্য করে, সেই গল্প টোপের মতো ছুড়ে মৃদুস্রোতা দানিউবের জলে, ঝাপ দেয় সে নিজেও। জলে মাছের মতো ম্যাগদেলিন জলে মাছের মতো মরিয়ম
জলে মাছের মতো স্নানের পরে সে অলান্দা ফুলের ঝোপ পেরিয়ে বারচ বন পেরিয়ে ঘোড়— গ্রস্থের মতো হেঁটে যেতে থাকে। তার চোখের ভেতর রেলগাড়ি থেকে দেখা দৌড়ে যাওয়া গ্রামগুলির মতো গম কাটার মৌসুম। হারভেস্টিং মেশিন মৃত্যুকে ফালা ফালা করে উঠিয়ে নিচ্ছে গম। দেখে আতকে উঠি আমি, বজ্রপাতের মতো হঠাৎ চিৎকার ডুকরে উঠে মিলিয়ে গিয়ে ঝুলে থাকে আকাশ থেকে দুই কানের দিকে দুই পা ছড়িয়ে...