যুব নেতৃত্বের সংকট: একটি পর্যালোচনা

রাশেদুল হাসান রিফাত

প্রকাশিত : জুলাই ২০, ২০২০

সভ্যতার শ্রেষ্ঠ সন্তান হয়েও মুসলিম যুবাদের অবস্থা আজ লুক লাইক কেঁচো। বৃষ্টির সময় কেঁচো যেমন গর্ত হতে বেরিয়ে আসে, আমাদের যুবারাও নতুন কোনো সাড়া জাগানিয়া টপিক দেখলেই টাইমলাইন গরম করে ফেলে। ট্রেন্ডের সাথে গা মিলিয়ে আমরা ‘আয়া সোফিয়া’ মসজিদ হওয়া নিয়ে উল্লাসে টাইমলাইন তো ভরিয়ে ফেলি, কিন্তু মসজিদ ঘোষণার আগে ‘আয়া সোফিয়া’ বলতে কিছু ছিল কিনা, তার খবরও এই গোষ্ঠীর অধিকাংশ অধিবাসীরই জানা ছিল না। গুগল ম্যাপস থেকে ফিলিস্তিনের নাম সরিয়ে ইসরাইল কেন দেয়া হলো, এ নিয়েও টাইমলাইন তোলপাড়। কিন্তু শত বছর আগে কুদুস নামকে বাদ দিয়ে জায়নবাদীরাই এটাকে ফিলিস্তিন নাম দিয়েছিল, এ খবর অজানা। শত বছর আগে কুদুস নামকে জায়নবাদীদের কাছেই বিক্রি করে দিয়েছি, ম্যাপস থেকে মুছলো যে কয়দিন হলো! এতো হওয়ারই ছিল। এজন্যই বোধহয় আল্লামা ইকবাল দৃপ্ত কণ্ঠে বলেছিলেন:

কালেমার পরে আমাদের সন্তানদেরকে কুদুসের শিক্ষা দিতে হবে।
কারণ যেই মাকাদিসে সমস্ত নবিরা এক হয়ে সালাত আদায় করেছিলেন
সেই মাকাদিসের মুক্তি ছাড়া মানবতার মুক্তি হয় কী করে!

মুসলিম উম্মাহ আপন ইতিহাস বিস্মৃত হবে, এটা কখনোই মেনে নেয়া যায় না। কারণ ইতিহাস হলো একটি আয়নার ন্যায়। মুসলিম উম্মাহর আজ এই অধঃপতনের মূল কারণ হলো, ইতিহাস বিমুখতা, ইতিহাস হতে শিক্ষা না নেয়া। ইতিহাসের যত বিপ্লব, পরিবর্তন সাধিত হয়েছে সর্বকেন্দ্রে ছিল যুবকদের আনাগোনা, যুবকদের জয়গান। চলুন আয়নার দিকে তাকিয়ে একটু দেখা যাক:

১. ফিজারের যুদ্ধের ধ্বংসলীলা, প্রলয় তাণ্ডব ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা থেকে মক্কাকে মুক্ত করতে কয়েকজন যুবক ও গোত্রের প্রবীণরা মিলে একটি সংগঠন গঠন করার উদ্যোগ নেয়। যার নেতৃত্বে ছিলেন মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ (ﷺ)। বয়স তার তখন মাত্র ২৫।

২. পৌত্তলিকদের মূর্তিগুলোকে যখন টুকরো টুকরো করেছিলেন তখন ইবরাহিমও (আ.) ছিলেন টগবগে যুবক। এমনকি যখন তাকে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়, তখনও তিনি যুবক ছিলেন।

৩. নবি ইউসুফকে (আ.) যখন কারাগারে পাঠানো হয়, তিনিও ছিলেন একজন সুদর্শন টগবগে যুবক।

৪. আলি (রা.) যখন তরবারি নিয়ে কুফফারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ময়দান কাঁপিয়েছিলেন, তিনি ছিলেন ওইসময় ২০ বছর বয়সী যুবক।

৫. রাসূল (ﷺ) যখন বিভিন্ন অঞ্চলে গভর্নর প্রেরণ করেছিলেন, ওই গভর্নরদের সকলেই ছিলেন যুবক। ইসলামি সভ্যতার মৌলিক বিষয়সমূহকে শিক্ষাদানকারী হাদিসসমূহের রাবি হযরত মুয়াজ ইবনে জাবালকে (রা.) যখন ইয়েমেনের গভর্নর হিসেবে পাঠানো হয়, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২১ বছর।

৬. অহি লেখক হযরত যায়েদ বিন সাবিত (রা.) ছিলেন যুবক।

৭. হুনায়নের যুদ্ধে যখন খবর ছড়ালো রাসূল(ﷺ) পিছু হটছেন, তখন কিছু বীরসাহসী যুবক বিনা অস্ত্রে যুদ্ধের ময়দানে অগ্রসর হয়েছিলেন।

৮. সাহাবি হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসুদ (রা.) বলেন, আমরা যুবক বয়সে রাসূলের (ﷺ) সাথে যুদ্ধ করতাম।

৯. একজন মুসলিম বোনের ইজ্জতহানি হয়েছে, এ খবর শুনে সুদূর আরব থেকে ছুটে এসে ভারত বিজয় করেছিলেন যে মুহাম্মদ বিন কাসিম, তার বয়স ছিল তখন মাত্র ১৭।

১০. রাসূলের (ﷺ) ভবিষ্যদ্বাণী পূরণের লক্ষ্যে উসমানীয় সুলতান মুহাম্মদ আল ফাতিহ (রহ:) যখন কনস্টান্টিনোপল (বর্তমান ইস্তাম্বুল) বিজয় করেছিলেন তখন তিনি ছিলেন মাত্র ২১ বছর বয়সী।

এই কর্পোরেট দুনিয়ার মিডিয়া আমাদের যুবকদের কাছে এই বিষয়গুলোকে হাইলাইট হতে দেয় না। যুবক-যুবতীদের রুটিনটাই হচ্ছে এমন: মাদ্রাসা/স্কুল-কলেজ-বাসা-কোচিং-প্রাইভেট-সপ্তাহিক টেস্ট-এক্সাম-এডমিশন টেস্ট-ভার্সিটি-চাকরি। এমনকি খেলাধুলা করার সময়টুকুও পাওয়া যায় না। বাবা-মা’রা স্কুলে দিয়ে যায়, আবার নিয়ে যায়। বিকেলে যে আবার কোচিং, প্রাইভেট। বিশাল হোমওয়ার্ক। বকাঝকা! এ প্লাস!

বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থার দিক থেকে তরুণ-তরুণীদের নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে উত্তম মাধ্যম হলো `মৌলিক` বিষয়সমূহ হতে দূরে রেখে তাদেরকে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত করে দেয়া। প্রতিযোগিতায় ফার্স্ট হওয়া কেরানিগুলোকে মিডিয়া ব্যাপকভাবে হাইলাইট করে প্রচার করে— এরাই ফার্স্ট, এরাই তোমাদের মডেল! এতে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বেশ বাড়ে।

অর্থাৎ মৌলিক চিন্তাশক্তি এবং নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতা এরা অজান্তেই নষ্ট করে দেয়। যার ফলে উত্থান হয় ‘ভাল্লাগে না’ সম্প্রদায়ের। অর্থাৎ তারা যুবকদেরকে কেরানি বনাতে চায়, অনুঘটক না। রাহবার না। ইতিহাসে যারাই রাহবারের ভূমিকা পালন করেছে, তারাই পুঁজি করেছে ত্যাগ এবং কষ্টে ভরা জীবন। আমাদের যুবকদের থেকে এই মানসিকতাগুলো দূর করে দিয়েছে জাতির মোড়লরা, ইতিহাস বিমুখতাও তার একটি কারণ।

একটি ইন্টারেস্টিং সত্য যুবকদের উদ্দেশ্যে করে লিখতে চাই তাহলো, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭৫ সালে শিক্ষার্থী ছিল ৩৭০০, এর মধ্যে অ্যারিস্টোক্রেটদের সন্তান ছিল ৩৫৫০। অক্সফোর্ডে এখনো সাইন্স রিলেটেড কোনো সাবজেক্ট নেই। যা আছে সব মৌলিক সাবজেক্ট। লাইক: দর্শন, অর্থনীতি, থিউরি, গণিত, ইতিহাস, সংস্কৃতি, শিল্প ইত্যাদি। আর ইঞ্জিনিয়ার ও ডাক্তারি পড়বে সাধারণদের সন্তানরা। কারণ কী? কারণ হলো, এই মৌলিক সাবজেক্টগুলো হলো নেতৃত্ব প্রদান করার বিষয়, দুনিয়া পরিচালনা করার বিষয়, সুতরাং এগুলো পড়বে অ্যারিস্টোক্রেটদের সন্তানেরা। বাকি কেরানি তথা সেবাদানকারী বিষয়গুলো পড়বে সাধারণদের সন্তানেরা।

এখন আমাদের দেশের মতো দেশগুলোতে কোন বিষয়গুলো পড়লে সবচেয়ে বেশি হাইলাইট করা হয়? অথচ মৌলিক বিষয়গুলোতে পড়লে অনেকটা হেয় করেই দেখা হয় আমাদের মতো দেশগুলোতে। বিশ্বমোড়লদের গভীর ষড়যন্ত্র। বিশ্বনেতৃত্বের এই সংকটাপন্ন মুহূর্তে, নির্যাতিত মাজলুমদের পাশে দাঁড়াতে যুবকদেরকেই আজ এগিয়ে আসতে হবে। কারণ এই যুবক বয়সটা হয় তেজদীপ্ত। হার না মানার এক প্রবল আকাঙ্ক্ষা কাজ করে এ সময়। একটু বেপোরোয়া ভাব থাকে। তার সাথে যদি ইলম আর হিলম (প্রজ্ঞা) যুক্ত হতে পারে, তার চেয়ে উত্তম নেতা আর কে হবে? যুবকদেরকে একটি আদর্শ বুকে ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে। যুবকদেরকে নেতৃত্বের একটি আখলাকি আদর্শ সফল করার ক্ষেত্রে কি করতে হবে তা আমাদেরকে শহিদ হাসানুল বান্না (রহঃ) বলে গিয়েছিলেন: একটি আদর্শ তখনই সফল হয়, যখন এই আদর্শের ব্যাপারে তোমাদের ঈমান শক্তিশালী হবে এবং সেটার পথে তোমাদের ইখলাস পরিপূর্ণ হবে। আর যখন তোমাদের বীরত্ব ও সাহসিকতা সেটার জন্য বৃদ্ধি পাবে। আর সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য যুবকদেরকে প্রস্তুতি নিতে হবে, আর সে প্রস্তুতি হলো আত্মত্যাগ, কুরবানি এবং নিরলস প্রচেষ্টা। আর এটার ভিত্তি চারটি— ঈমান, ইখলাস, বীরত্ব ও কঠোর পরিশ্রম।

প্রতিটি আদর্শবাদী বা আইডিয়াল যুবক হলো তারা, যারা নিজের চিন্তা, সুখ এবং সবকিছুকে আল্লাহর মধ্যে খুজে পায়। ঠিক এই কথাগুলোই আমরা সূরা কাহফে খুঁজে পাই এভাবে, ‘তারা ছিল কয়েকজন যুবক, তারা তাদের প্রতিপালকের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল এবং আমি তাদের সৎপথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করেছিলাম।’ তাই যুব নেতৃত্বের এই সংকটাপন্ন মুহূর্তে কিভাবে যুবকদেরকে এই পথে ফেরানো যায়, এমন করণীয় কিছু উপায় এবার আলোচনা করা যাক।

ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে। ১৯ বছর বয়সে রাসূল সা: দারুল আরকাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, ২৫ বছর বয়সে হিলফুল ফুজুল। দেখুন নেতৃত্বের একটি গুণাবলি কিন্তু তার যুবক বয়স থেকেই ছিল। তাই যুবকদের উচিত প্রত্যেক ওয়ার্ডে একটি করে ‘হিলফুল ফুজুল’ এর মতো সংগঠন তৈরি করা। যেখানে সবার সবধরনের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে। নিজেরা ফান্ডিং করে হলেও দুঃস্থদের সহায়তা করবে। প্রবীণদের সাথে পরামর্শ করে নেবে, কারণ তাদের অভিজ্ঞতা প্রচুর। তাই প্রবীণদের অভিজ্ঞতা এবং নবীনদের প্রজ্ঞার সম্মিলন যখন ঘটবে, তখন যুবকদের এই পথচলা আরও সুগম হবে। এরকম ছোটখাটো নেতৃত্বের মাধ্যমেই নিজেকে ঝালিয়ে নিয়ে প্রস্তুত হতে হবে উম্মাহকে নেতৃত্বে দেয়ার জন্য। একজন যুবকের উঠে আসাই মুসলিম উম্মাহর মুক্তির জন্য সহায়ক হবে।

ভাষা শিক্ষা করতে হবে। ইস্তাম্বুল বিজয়ী সুলতান আল ফাতিহ সাতটি ভাষা জানতেন। হালকার উপর ঝাপসা জানা নয়, আগাগোড়া জানা। একদিন ফজরের পর আমাদের ক্যাম্পাসেরই প্রাক্তন স্টুডেন্ট, যিনি বর্তমানে অ্যামেরিকায় একটি প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল, তিনি বলেছিলেন, বর্তমান পৃথিবীতে নেতৃত্ব দিতে হলে তোমাকে দুটি বিষয় জানতে হবে। ভাষা (স্পেসিফিকালি ইংলিশ ও আরবি) আর টেকনোলজির জ্ঞান। তাই কমিউনিকেশন, ভিন জাতির ভাবমূর্তি বোঝার জন্য ভাষা শিক্ষার বিকল্প কিছু নেই। যোগ্য নেতৃত্বে প্রদান করতে হলে ভাষা জানার বিকল্প নেই।

ব্যক্তিসেন্ট্রিক চিন্তা বাদ দিয়ে উম্মাহসেন্ট্রিক চিন্তা করতে হবে। দেশের কিছু ছাত্রসংগঠনের ভাইদের নিকট, যারা হাজার হাজার ছাত্রদের নেতৃত্বে আছেন, তাদের নিকট এমন চিন্তাভাবনা আমার স্বচক্ষে দেখা। তাই নেতৃত্বের সংকট নিরসনে বিভিন্ন ইসলামিক সংগঠনের সাথে জড়িত হয়ে ছোটখাটো দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নেতৃত্বের ট্রেনিং নেয়া যেতে পারে।

বিভিন্ন দাওয়াহ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে দাওয়াহর মুলনীতি নিয়ে। রাসূলকে (সা.) যখন উম্মাহর নেতৃত্ব দেয়া হলো, তার উপর যে নির্দেশটি প্রথম এসেছিল তাছিলো ‘ইকরা’। অর্থাৎ যিনি নেতৃত্বে থাকবেন তাকে জানতে হবে, পড়তে হবে। পরবর্তী যে নির্দেশ এসেছিল তাহলো ‘ক্বুমি ল্লাইলা ইল্লা ক্বলিলা’ অর্থাৎ আত্মউন্নয়নের জন্য রাতের অন্তিম প্রহরে দাঁড়াতে হবে। যা জানবেন, তা আগে নিজের উপর বাস্তবায়ন করতে হবে। ‘তোমরা সেটা কেন বলো, যা তোমরা নিজেরাই করো না?’ আল্লাহ তাআলা এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন।

তৃতীয়ত যে নির্দেশটা এসেছিল তাহলো ‘ক্বুম ফা`আনজির, ওয়া রাব্বাকা ফাকাব্বির’ অর্থাৎ নিজে জানা ও মানার পর লোকদের উপদেশ দেয়া, আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করা। আর এটাই দাওয়াহর মূলনীতি। মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব প্রদান করার জন্য এ মূলনীতিগুলো যুবকদের জীবনে থাকা উচিত।

মৌলিক বিষয়গুলোতে জানাশোনা থাকা। যেই সেই জানা নয়, পরিপূর্ণভাবে জানা। যুবকদের গড্ডালিকা প্রবাহে গা না ভাসিয়ে, ইমাম গাজ্জালির মতো আল্লাহর কাছে দোয়া করা, ‘হে আল্লাহ, আমাকে সময়ের মাঝে সময় দান করুন।’ নেতৃত্ব প্রদানকারী মৌলিক বিষয়গুলো সব একজনে তো আয়ত্তে আনতে পারবে না, কারণ সব্যসাচী হওয়া বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রায় অসম্ভব। তাই একটি সেক্টরকে কেন্দ্র করে দক্ষ হয়ে উম্মাহর সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা উচিত।

যুবকরা কিসের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেবে? এর উত্তর খুঁজতে রাসূলের (সা.) জীবনের দিকে তাকাতে হবে। উনি কিসের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তা জানতে হবে। সীরাহ হতে আমরা জানতে পারি, রাসূল (সা.) তার পুরো জীবদ্দশায় চারটি আইডিওলজির বিরুদ্ধে জিহাদ/সংগ্রাম/নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাহলো: শিরক, গোলামি, জাতীয়তাবাদ ও জেন্ডারিজম।

লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট, সেলিব্রিটিজম থেকে যুবকদের দূরে থাকতে হবে। মূল লক্ষ্য থাকবে আল্লাহর গোলামি ও রাসূলের (সা.) দেখানো পন্থায় নিজেকে সোপর্দ করা। আমাদের দুনিয়াবিমুখ সালাফরা এই ধরনের খ্যাতি থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতেন, আফসোস করতেন। ইমাম হাম্বলকে রহঃ অস্থির দেখে তার চাচা তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করেছিলেন। তখন ইমাম রহ. জবাব দিয়েছিলেন, চাচা যাদের খ্যাতি কম, তারা কতই না ভালো আছে। আইয়ুব আস সিখতিয়ানি রহ: বলতেন, আমার ভয় হয়, খ্যাতির কারণে শেষ পর্যন্ত আমার কোনো আমলই আর অবশিষ্ট থাকবে না।

তাই যোগ্য নেতা হওয়া ও নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে খ্যাতির আশা না রেখে যুবকদের আল্লাহর রাহে নিজেকে সমর্থন, পৃথিবীতে একটি ন্যায়ভিত্তিক খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা যেন মূল লক্ষ্য হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি। শহিদ ম্যালকম এক্স রহঃ বলেছিলেন, সকল ঘুমন্ত মানুষকে জাগ্রত করার জন্য একজন জাগ্রত মানুষই যথেষ্ট। যদি কোনো লক্ষ্যের জন্য দাঁড়িয়ে না থাকো, তাহলে শত্রুরা প্রতিবারই তোমাকে মাটিতে ফেলে দেবে। প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান রহ: বলেছিলেন, একটি ফুল দিয়ে কখনোই বসন্ত হয় না, কিন্তু প্রতিটি বসন্ত একটি ফুল দিয়েই শুরু হয়।

তাই মুসলিম উম্মাহর ঘুমন্ত সিংহ শাবকরা যতক্ষণ না গর্জে উঠবে, ততক্ষণ শেয়ালের ডাককে ভয়ংকর মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। একটি প্রসিদ্ধ হাদিস হতে আমরা জানতে পারি, বিচার দিবসের দিন পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেয়া ছাড়া কেউ এক পাও নড়তে পারবে না। প্রশ্নগুলো হলো,  তার জীবনকাল সম্পর্কে, কিভাবে অতিবাহিত করেছে? তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কি কাজে তা বিনাশ করেছে; তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, কোথা হতে তা উপার্জন করেছে এবং তা কি কি খাতে খরচ করেছে এবং সে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল সে মুতাবিক কি কি আমল করেছে। প্রথম প্যাটার্নটা জীবনকাল সম্পর্কে, দ্বিতীয় প্যাটার্নটা স্পেসিফিকালি যৌবনকাল সম্পর্কে। এই প্রশ্নের সুন্দর জবাব যেন আমরা দিতে পারি এবং আরশের ছায়ায় সমাসীন থাকবে এমন সাত ব্যক্তির অন্তর্ভুক্ত যেন হতে পারি, আল্লাহ তৌফিক দান করুক।

যবনিকা টানতে চাই পবিত্র কুরআনের একটি আয়াত দিয়ে, আমি চাইলাম সেই দেশে যাদেরকে দুর্বল করে রাখা হয়েছিল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করতে এবং তাদেরকে নেতা বানাতে, আর তাদেরকে উত্তরাধিকারী বানাতে। (সূরা আল কাসাস ৫)