রাজীব জবরজংয়ের ৩ কবিতা

প্রকাশিত : মে ০৩, ২০২৫

আষাঢ় না এলে প্রিয়তম কবিদের কাছে যাব না

এখানে ক্যাঙ্গারু দেখা দিনের ভেতর মদ হয়ে ঝুলে থাকে হাজারে হাজার কচুমুখি। আমাদের শীত লাগলেই আমরা কচুমুখির ঝোল রেঁধে খাই। আমাদের গলা চুলকায়। গলা চুলকাতে চুলকাতে আমরা হাইড পার্কের পেটের ওপর দিয়ে হাঁটতে থাকি। হাইড পার্কের নাভির ওপর কতগুলো জবাফুলের গাছ আছে। জবা ফুলের গাছের পাশে কনক বসে বসে খালি হাসতে থাকে। আর বলে, বাংলাদেশে শীত এলে কবিতার চোখ লাল হতে থাকে। কবিতার চোখ লাল হয়ে গেলে কবিরা সানগ্লাস পরে ঘুমোতে যায়। তারপর কনক আবারো হাসতে থাকে। আর বলে, আমাদের প্রিয়তম কবিরা আষাঢ় ভালবাসে। তাই তারা শীত এলে কাচের জারে পরিমান মতো ইস্ট গুলিয়ে পৌষকে রেখে দ্যায় জগতের নিচে আষাঢ় পর্যন্ত। আমরা আষাঢ় না এলে আমাদের প্রিয়তম কবিদের কাছে যাব না। তারপর কনক আবারও কেবল হাসতে থাকে।

মাকড়শার অধিক কোনও প্রাণ নেই

চারপাশের সকলেই ফুল পাখি ফড়িং কিংবা প্রজাপতি ভালবাসলেও প্রাণনাথ মাকড়শা ভালবাসতো। একবার প্রাণনাথকে বলতে শুনেছিলাম, আমি মাকড়শা থেকে বেঁধে ফেলা শিখি। নিজের আঁকড়ে ধরার যেকোনও কিছুকে ঘিরে কী সুনিপুণ জাল বুনে যায় মাকড়শা! একদিন আমি ও এজগৎকে জাল বুনে বেঁধে ফেলবো আমার পায়ের গোড়ালিতে।

কী দারুণ বিস্ময়ে প্রাণনাথ প্রতিদিন মাকড়শা দ্যাখে। মাকড়শা দেখার দিনশেষে মুচকি হেসে জগৎকে মনে করিয়ে দ্যায়, একদিন আমিও জালে বেঁধে ফেলবো জগতের নাড়িভুঁড়ি, কণ্ঠনালি। প্রাণনাথের জীবনজুড়ে কেবল মাকড়শা। প্রাণনাথের কাছে মানুষ একটা মাকড়শা কেবল, দেখতে মানুষের মতো। প্রাণনাথের কাছে জীবন হলো জাল বুনে বুনে পথে পথে ভ্রমণ করা।

প্রাণনাথের প্রাণের ভেতর একটা তালগাছ ছিল। তালগাছে একটা বাবুই পাখির বাসা। চড়ুইয়ের ষড়যন্ত্রে বাবুই ঘর ভেঙে ঘর গড়ে। প্রাণনাথ মাকড়শা দেখে দেখে জাল বোনা শেখে। আর বলে, বাবুই একটা মাকড়শা। কী আরামে ঝুলে থাকে প্রাণের তালগাছে। তালগাছ একটা মাকড়শা। কাণ্ডের ভেতর শত শত জাল। যে জালে রস, কাঠ আর বাবুইয়ের হাহাকার ঝুলে আছে।

হাহাকার একটা মাকড়শা। কী বিস্ময়ে হা হয়ে থাকে জালের মতো বিস্ময়! যেন প্রাণনাথের প্রাণের ভেতর মাকড়শার অধিক কোনও প্রাণ নেই।

বৃষ্টির কল আছে হাইড পার্কে

এইতো কিছুদিন আগে আমাদের বুকেপিঠে পিন্ধনে অনাবৃষ্টি দ্যাখা দিলো।
আমাদের মধ্যে যারা ঘাসের ওপর শিশির দেখেছিল তাদের শৈশবে
তাদের কেউ কেউ ঘাসের কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করতে শুরু করল
কেউ কেউ আবার মাটি খুঁড়ে যাচ্ছিল
তাদের মায়ের স্তনে মুখ রেখে তারা দেখেছিল,
তাদের মাতামহ দড়ি টেনে টেনে মাটির ভেতর থেকে জল তুলে আনতো।
একদল মাটিতে শুয়ে শুয়ে সমুদ্রকে অভিশাপ দিয়ে যাচ্ছিল।
তারা অনাবৃষ্টির আগের মৌসুমে একবার শিক্ষা সফরে সমুদ্রে গিয়েছিল
সে মৌসুম থেকেই বৃষ্টিপাত কমে যাচ্ছিল আমাদের তল্লাটে।
সমুদ্র দেখেই তাদের আশংকা হয়েছিল, সব বৃষ্টির জল সমুদ্রের ঢেউ টেনে নিয়ে নিচ্ছে।
তারা মাটিতে শুয়ে শুয়ে সমুদ্রকে অভিশাপ দিয়ে যেতে থাকলো।

আমাদের মধ্যে যারা খুব খেতে ভালবাসতো, তারা বসে বসে হেসে যাচ্ছিল এই ভেবে যে,
যখন বৃষ্টি হতো তখন জ্বর হলে সবকিছুই খেতে তেতো লাগে।
এভাবে দেখতে দেখতে তিরাশি বছর আমাদের বুকেপিঠে পিন্ধনে অনাবৃষ্টি লেগে থাকলো।
যারা ঘাসের কাছে প্রার্থনা করছিল তিরাশি বছর ধরে
তাদের পায়ের তলায় থাকা ঘাসেরা এই তো আজ বিকেলে হঠাৎ বলে বসলো,
হাইড পার্কে প্রতিদিন নিয়ম করে খুব বৃষ্টি হয়, ওখানে বৃষ্টির কল আছে।