শ্রেয়া চক্রবর্তী

শ্রেয়া চক্রবর্তী

শ্রেয়া চক্রবর্তীর গদ্য ‘রাজনীতি আছে মাইরি’

প্রকাশিত : আগস্ট ১৫, ২০২২

ভারতবর্ষ দেশটা কেমন? প্রাকৃতিক ও মানবিক সম্পদের বৈচিত্র্য বিপুল। যুগে যুগে কত বিচিত্র রক্তবীজ এসে মিলেছে ভারতের শিরা-উপশিরায়। লুঠ তরাজও হয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কোনো অভাব নেই এই দেশে, উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিণে কন্যাকুমারী। কিন্তু পরিপাটি করে সাজিয়ে রাখা নেই। সুন্দরী মেয়ে যেন চুল আঁচড়ায় না, নোংরা জামা পড়ে থাকে। এদেশ নাকি গবিব। কেন? বিপুল জনসংখ্যার কারণে? মোটেও না। নেতা মন্ত্রীরা সাধারণের টাকা চুরি করে খায়। লাখ লাখ মানুষের মাথার ওপর ছাদ নেই। চারদিকে ঘিঞ্জি বসতি। অথচ সেই বসতির মধ্যে উঁকি মেরে দেখুন। আশ্চর্য, টিভি-ক্যাবল কানেকশন-ফ্রিজ-অ্যান্ড্রয়েড টিনের চালঅলা এক কামরার খুপরির ভেতরেও ঢুকে পড়েছে। ঢুকে পড়েছে গোটা বিশ্বের বাজার। এদিকে শিক্ষা নেই। নেই নূন্যতম স্বাস্থ্য পরিষেবা। এদিকে ভিখারিদের বিরাট রেকেট চলছে দেশজুড়ে। বিরাট ব্যবসা এটা। ভাড়া করা চুরি করা বাচ্চা কোলে নিয়ে শহরের সিগন্যালে দাঁড়িয়ে আছে ফ্যাকাশে যুবতী। ভিখারিদের বড় অংশ ইউনচ। একটা সভ্য দেশে এটা ভাবা যায়?

আবার কোটিপতির সংখ্যা ভারতবর্ষেই সবথেকে বেশি। পৃথিবীর অন্যতম ধনী লোকজন ভারতেই ইন্ড্রাস্ট্রি চালায় আর সরকার তাদের হয়ে পলিশি বানায়। ট্যাক্সের হ্যাপা কম নয়। ডিরেক্ট ট্যাক্স তো নেবেই তার ওপর একটা পাউরুটি ওষুধ জামা কাপড় সবকিছুর ওপর ট্যাক্স নেবে। এত ট্যাক্স দিলে কানাডার মতো দেশে বুড়ো বয়সে হাত পা তুলে নিশ্চিন্তে থাকা যায়। আর এদেশে আপনি আজীবন ট্যাক্স দিয়ে বুড়ো বয়সে টাকা খুইয়ে হাত পা ভেঙে পড়ে থাকলেও কেউ দেখতে আসবে না। তবু জনসম্পদই এদেশের সবথেকে বড় সম্পদ। হিউম্যান রিসোর্স। বিরাট বাজার। সারা পৃথিবী তার মজা লুটছে। সস্তায় লেবার চালান হচ্ছে প্রথম বিশ্বের দেশগুলোতে। এত সস্তায় কাজের লোক পৃথিবীর কোনো দেশে পাওয়া যায় কি? নিম্ন মধ্যবিত্তরাও এদেশে নিজের বাড়িতে বাসন মাজেনা। হ্যাঁ, একটা জিনিস খুব ভালো লাগে এদেশে। কি ভালো ভালো সব জিভে জল আনা খাবার। নর্থ ইন্ডিয়ানদের এক ধরনের রেসিপি, সাউথে অন্য ঘরানা, রাজস্থানের দিকে গেলে আবার আরেক। তবে সেরাটা বোধহয় বাংলাতেই।

মাছের কত রকম পদ! পোস্তরই কর রকম রেসিপি, আহা আহা! তবে যেদিকেই দেখি পোস্ট কলোনিয়ান হ্যাঙ ওভার এখনও কাটেনি। অফিস কাছারি মিনার ব্রিজ সবই তো ব্রিটিশের তৈরি। সেগুলোর যা হাল করেছে নেটিভরা উফফ। এই ক্যালকাটা হাইকোর্টের উল্টোদিকে টেম্পল চেম্বার্স। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গেলে দুদিকের দেওয়ালে শুধুই পানের পিক আর গুটখার স্মৃতিভস্ম। রাজনীতি আছে মাইরি। শান্তিতে কাজ করার উপায় নেই। সাম্প্রদায়িকতার আগুন জ্বালিয়ে রেখে নোংরা রাজনীতি হচ্ছে বছরের পর বছর। ধর্মের আফিম খাইয়ে জানোয়ার বানিয়ে দিচ্ছে কোটি কোটি মানুষকে। আর সেই সুযোগে পলিশি ভাজছে কি করে গদি ধরে রাখা যায়। একটা জিনিস বলতেই হবে। ভারতবর্ষের আধ্যাত্মিকতা। সেও এক বেজায় ব্যাপার, যার টানে পাশ্চাত্যের ভোগ সুখ ছেড়ে এদেশে এসে সন্তের জীবন কাটাচ্ছে সাদা চামড়ার লোকজন। এরও এক অদ্ভুত আবেদন আর বাজারটাও বেশ বড়। যাই হোক, পরিবারতন্ত্র এদেশে এখনও চলছে তার সাথে পুরুষতন্ত্র। ৯৮% পুরুষ ভেতরে মারাত্মক সভিনিস্ট।

রেপ কালচার দারুণভাবে শিকড় গেড়েছে। কর্পোরেট কালচারটা নতুন। হিউম্যান রাইটস এখানে টলমল। তবে একটা জিনিস না বললেই নয়। ভারতবর্ষের মশলা। তার স্বাদ ও ঝাঁঝ চীনাদের হজম হবে না। আর এত ভালো ভালো ফল হয় এদেশে। বছরে তিন মাস আমের মরসুম। আমও কতরকম। ফজলি, ল্যাংরা, হিমসাগর, গোলাপখাস, চৌসা আরও কত কি। নদীমাতৃক দেশ এত ঊর্বর মাটি। বীজ ফেললেই গাছ। গাছ হলেই ফল। তারপরও নাকি কত মানুষ না খেয়ে শোয়। আমার দাবি, সারা ভারতবর্ষে যত গাছে যত ফল হয় সব মানুষের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হোক। সবাইকে রোজ দুটো করে ফল দিয়ে শেষ হবে না। ওরে তোরা না দেওয়ার কে আছিস রে?

লেখক: কথাসাহিত্যিক