অন্ধের দেশে আয়না নয়, চশমা বেচাই উত্তম

স্বাধীন খসরু

প্রকাশিত : জুলাই ০৩, ২০২৫

২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ১২ জনকে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং ২০ জনকে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য অনুদা দেয়া হয়েছে। মোট ৩২টি চলচ্চিত্রের জন্য অনুদান বরাদ্দ করা হয়েছে। টাকার অংকে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য ৭৫ লাখ এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য ২০ লাখ  টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্প্রতি এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে।

সিনেমা বানানো খুবই ব্যয়বহুল বিষয়। টাকার পরিমাণ যে বেশি, তেমন বলা যাবে না। সিনেমা শেষ করার জন্য প্রযোজকের আরও অর্থের প্রয়োজন পড়বে। অতীতে এমনও দেখা গেছে, প্রযোজক অনুদানের টাকা দিয়ে সিনেমা শেষ করতে পারেনি। বাড়তি টাকা যোগাড় করতে গিয়ে প্রযোজক নিঃস্ব অথবা দেউলিয়া হয়েছে। তার সাথে যদি সিনেমা বানানোর অভিজ্ঞতা না থাকে বা প্রডাকশন ও ব্যবস্থাপনায় দূর্বলতা থাকে তাহলে তো এক্কেবারে আক্কেল গুড়ুম।

কেউ কেউ সিনেমা শেষ করতে না পেরে নির্বাসিত হয়েছে এ জগৎ থেকে। একজন প্রযোজক হিসেবে আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। আমার যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের সিনেমা ‘চন্দ্রকথা’। কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খেয়াল করলাম, অনেকে লিখেছেন, জানতে চাচ্ছেন কে বা কারা অনুদান পেয়েছেন? তাদের সংখ্যা, নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না কেন সংবাদ মাধ্যমে?

অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের অনুদান পাওয়া আটজনের নাম পেয়েছি। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পুরো লিস্ট বের করা সম্ভব হয়নি। পূর্ণদৈর্ঘ্যের লিস্ট দেখে যারা বারবার জিজ্ঞেস করছেন, জানতে চাচ্ছেন প্রযোজকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু পরিচালকের নাম উল্লেখ নেই কেন? এর কারণ বা রহস্য কি?

সরকারি অনুদানের জন্য গল্প জমা দেয়ার সময় প্রযোজক বা প্রডাকশন হাউজ সম্ভাব্য পরিচালক ও সম্ভাব্য শিল্পীদের নাম দিয়ে থাকেন। গল্প যদি গৃহীত হয় তাহলে ঐ প্রডাকশন হাউজ থেকে পছন্দের পরিচালক যুক্ত করে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পারেন বা করেন। যেমন: হুমায়ূন আহমেদের গল্প নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘দেবী’র জন্য অনুদান পেয়েছিলেন জয়া আহসান প্রযোজক হিসেবে। চলচ্চিত্রটিও নির্মিত হয় তার প্রডাকশন হাউজ থেকে। জয়া আহসান চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেননি, করেছেন তার প্রডাকশন হাউজ থেকে নির্মাতা অনম বিশ্বাস।

জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশনের কথা যদি ধরা হয় তাহলে দেখবেন বিটিভিতে যত নাটক নির্মাণ করা হয়, সব প্রযোজকের তত্ত্বাবধানে। প্রযোজকরাই এখানে পরিচালনা করেন টেলিভিশনের জন্য। যদি অনুদানের পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের কথা বলি যাদের নামে অনুদান বরাদ্দ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে দুজন ছাড়া বাকিদের এমনকি দু’একজকে চিনতে পারলেও প্রযোজনা বা চলচ্চিত্রের সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাইনি। যে দুজন প্রযোজনা ও নির্মাণের সাথে প্রতিষ্ঠিত এবং সংযুক্ত আছেন তারা হলেন গোলাম সোহরাব দোদুল ও আলভী আহমেদ।

কথাগুলো এজন্য বলছি, পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বলে কথা। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য কিছু বলবো না। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র যে কোনো সম্ভাবনাময় উদিয়মান শিক্ষানবিশ যে কাউকে সম্ভাবনার কথা ভেবে দেয়া যেতেই পারে। আনুশেহ আনাদিল পেয়েছেন পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের অনুদান! আমি শুধু অবাক নই, এক কথায় বিস্মিত হয়েছি! আনুশেহ কিসের ভিত্তিতে অনুদান পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন?

চলচ্চিত্রের অভিজ্ঞতা বা সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে জানতে কৌতূহল দমিয়ে রাখতে পারছি না। গানের মানুষ হিসেবে আমি আনুশেহ আনাদিলের ভক্ত। তিনি শুধু গাওয়ার জন্য গান করেন না, ধারণ করে গান করেন। সাধু, সাধু, সাধু। বাকিদের কথা আমি কিছু বলবো না। কারণ তাদেরকে তেমন চিনতে পারছি না। তাদের চলচ্চিত্রের অভিজ্ঞতা, সংশ্লিষ্টতা জানার ইচ্ছেও আমার নেই এই মুহূর্তে। শুধু জানতে ইচ্ছে হয়, কিসের ভিত্তিতে, কার বা কিসের প্ররোচনায় এইসব সিদ্ধান্ত? তদবির না ক্ষমতা, আসল রহস্যটা কি?

অনেক প্রতিভাবান নির্মাতা অনেক চেষ্টা করেও অনুদান পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, এবং প্রতিনিয়ত হচ্ছেন ও হবেন ভবিষ্যতে। কারণ তাদের তদবির তেমন জোরালো নয়, তোষামোদি করতে অভ্যস্ত নয়, বা একটা কিছু করা লাগে তা বোঝেন না। এমন একজনের কথা না বললে নয়। অনিমেষ আইচ একজন উন্নত মননের প্রতিভাবান, চিন্তুক, গল্পকার, চিত্রনাট্যকার ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন সম্ভাবনাময় চলচ্চিত্র নির্মাতা হওয়া সত্ত্বেও তিনি অনুদান বঞ্চিত নির্মাতা। পরিশেষে অভিনন্দন জানাই যারা অনুদান পেয়েছেন। শুভকামনা থাকলো সব সময় সবার প্রতি। তবে কথা থেকেই যায়। সেই কথা হচ্ছে, অন্ধের দেশে আয়না বিক্রি না করে চশমা বিক্রি করা উত্তম।

লেখক: অভিনেতা