অপূর্ব চৌধুরীর গদ্য ‘বয়স ও মন’
প্রকাশিত : নভেম্বর ০৪, ২০২০
মানুষ বয়স দিয়ে আরেকটি মানুষকে মাপে। বিশেষ করে সমাজের মানুষ সামাজিকভাবে এইভাবেই দেখতে, বুঝতে এবং যাচাই করতে শেখে। পঞ্চাশ মানে ভেবে নেয় আরেকটি পঞ্চাশেরও একই মাপ হবে। এটি একটি অদ্ভুত হিসাব।
পঞ্চাশের একজন মানুষ জীবনকে অনেকভাবেই জানতে পারে। কখনো পড়ায়, কখনো জানায়, কখনো ঘটনাচক্রে, কখনো ঘটনার বক্রে। কিন্তু দুজন পঞ্চাশোর্ধ কি একই সঞ্চয় করে?
একজনের জানার, পড়ার ও গড়ার গভীরতা এতটাই যে, তার ধারেকাছেও আরেকটি পঞ্চাশোর্ধ নেই, কিংবা থাকেও না। না থাকাটাই স্বাভাবিক।
আবার যে পঞ্চাশোর্ধ অনেক কিছু জানার মধ্যে দিয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছে, তার হয়তো ঘটনাচক্রে জীবনের এমন কিছু জানার সুযোগ হয়নি যা আরেকটি মানুষের সুযোগ হয়েছিল। আরেকটি মানুষ অনেক কিছু না জেনেও সেই জিনিসটির মুখোমুখি হয়ে জানার সুযোগ ঘটেছে তার জীবনে।
তারমানে বয়সের সংখ্যা একই হলেও তিনজন মানুষ আসলে তিন ধরনের। শুধু তিন ধরনের নয়, তাদেরকে একই পাল্লায় রাখাও এক প্রকার ভুলের। কিন্তু মানুষ এই ভুলটাই করে। বয়স কখনো পরিমাপের একক হতে পারে না।
একটি মানুষের সামগ্রিক চিন্তাবোধ আসল। বয়সের পরিমাপ হলো একটি অপারগতা। বয়স মানসিক সমৃদ্ধির পরিচয় নয়। বয়স শুধুমাত্র শারীরিক সময়কালের একটি পরিচয়।
সামাজিক এই ভুলগুলো কেউ ঠিক করে না। নিজে যেভাবে ভুলের শিকার হয়েছিল, একইভাবে সে অন্যকেও ভুলের শিকার করে। নিজে যে ভুলের কাচ দিয়ে বিচার হয়েছিল, একটা সময়ের পর আরেকজনকেও সেই ভুলের কাচ দিয়ে বিচার করে বসে।
শরীর বয়সের চেয়ে মনের বয়স আসল বড়। শরীরে বার্ধক্য আসতে পারে, কিন্তু জীবন অভিজ্ঞতায় একজন মানুষ তরুণ থেকে যেতে পারে। আবার শরীরে তারুণ্য থাকতে পারে, জীবনবোধে একজন মানুষ তার চেয়ে অনেক বেশি বয়সের মানুষের চিন্তার সমকক্ষতা অর্জন করতে পারে।
























