কবি সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীর আজ জন্মদিন

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : জুলাই ১৩, ২০২৫

কবি সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীর আজ জন্মদিন। ১৮৮০ সালের ১৩ জুলাই ব্রিটিশ ভারতের পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জে তার জন্ম। তিনি জন্মস্থানের সম্মানে নামের শেষের `সিরাজী` পদবী যুক্ত করেন। শৈশবে তিনি স্থানীয় পাঠশালা ও জ্ঞানদায়িনী মাইনর ইংরেজি স্কুলে পড়েন। এরপর সিরাজগঞ্জ বনোয়ারীলাল হাই স্কুলে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন।

সিরাজী পাঠশালায় ফার্সি এবং বাড়িতে সংস্কৃত ভাষা শেখেন আর সংস্কৃত ব্যকরণ ও সাহিত্যের সাথে হিন্দুশাস্ত্র যেমন- বেদ, মনুস্মৃতি ও উপনিষদ প্রভৃতি অধ্যয়ন করেন।

বক্তা হিসেবে তিনি খ্যাতিমান ছিলেন। তৎকালীন বাঙালি মুসলিমদের পুনর্জাগরণ ও রাজনৈতিক বিষয়ে তিনি বক্তৃতা করতেন। তিনি হিন্দু-মুসলিম সাম্যে বিশ্বাসী ছিলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সমিতিতে তিনি সক্রিয় ছিলেন, যেমন, কংগ্রেস, পরবর্তীতে মুসলিম লীগ, জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ, স্বরাজ পার্টি, কৃষক সমিতি ইত্যাদি।

ছাত্রাবস্থায়ই সিরাজী কবিতা লিখতে শুরু করেন এবং ধর্মবক্তা মুনশী মেহের উল্লাহের এক জনসভায় তার অনল-প্রবাহ কবিতাটি পাঠ করেন। মুনশী মেহেরউল্লাহ কবিতা শুনে মুগ্ধ হন এবং নিজ ব্যয়ে ১৯০০ সালে কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশ করেন। ১৯০৮ সালের শেষদিকে বইটির বর্ধিত সংস্করণ প্রকাশিত হয় যা তৎকালীন বাংলা সরকার বাজেয়াপ্ত করে আর তার প্রতি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।

সিরাজী তখন ফরাসি অধিকৃত চন্দননগরে গিয়ে ৮ মাস আত্মগোপন করে থাকেন। পরে আত্মসমর্পণ করলে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ প্রচারের অভিযোগে তাকে দু`বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।

১৯১২ সালে বলকান যুদ্ধের সময় ভারতে ডা. মোখতার আহমদ আনসারীর নেতৃত্বে ইন্ডিয়ান রেড ক্রিসেন্ট গঠিত হয়। এই সংগঠন একদল চিকিৎসকসহ `অল ইন্ডিয়া মেডিক্যাল মিশন` প্রেরণ করে। ইসমাইল হোসেন সিরাজী মিশনের বঙ্গীয় প্রতিনিধি হিসেবে তুরস্কে যান। তিনি তুরস্ক ভ্রমণ (১৯১০) গ্রন্থে এই সফরের বিস্তৃত বিবরণ দিয়েছেন।

১৯১৯ সালে সিরাজী মাসিক নূর নামের একটি পত্রিকা বের করেন। তার নিজের মহাশিক্ষা মহাকাব্য এবং নজরুলের কয়েকটি গল্প এ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯২৩ সালে সিরাজী ও মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর যুগ্ম সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক ছোলতান। সিরাজীর অধিকাংশ প্রবন্ধই এই পত্রিকায় মুদ্রিত হয়।

প্রাথমিকভাবে সিরাজী সৈয়দ জামাল উদ্দিন আফগানির প্যান ইসলামিজম সম্পর্কে আগ্রহী ছিলেন। তবে তাকে মুসলিম পুনর্জাগরণের চিন্তায় বেশি প্রভাবিত করেন প্রায় সমসাময়িক শিবলী নোমানী এবং আল্লামা ইকবাল।

ইসমাইল হোসেন সিরাজী বাংলা সাহিত্যের প্রথম দিকের মুসলমান লেখকদের অন্যতম। তার রাজনৈতিক আদর্শ সাহিত্যকর্মেও দৃশ্যমান। তার রচনাসমূহকে ইসলামি সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত করা যায়। তবে কবি আবদুল কাদির মন্তব্য করেন যে, বঙ্কিমচন্দ্রের বৈশিষ্ট্যসূচক ‘উগ্র জাতীয়তাবাদ’ মুসলমানদের মধ্যে সিরাজীর রচনাতে প্রথম দেখা যায়।

উল্লেখ্য, সিরাজী বঙ্কিমচন্দ্রের দুর্গেশনন্দিনীর প্রতিক্রিয়ায় তার রায়নন্দিনী লেখেন, রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলির প্রতিযোগী হিসেবে লেখেন প্রেমাঞ্জলি। তবুও সময়োপযোগী হওয়ায় তখন তার উপন্যাস ও কবিতা পঠিত ও জনপ্রিয় হয়।

তার লেখা বইগুলো হচ্ছে: অনল-প্রবাহ, আকাঙ্ক্ষা, উচ্ছ্বাস, উদ্বোধন, নব উদ্দীপনা, স্পেন বিজয় কাব্য, মহাশিক্ষা মহাকাব্য, রায়নন্দিনী, তারাবাঈ, ফিরোজা বেগম, নূরউদ্দীন, জাহানারা, বঙ্গ ও বিহার বিজয়, বঙ্কিম দুহিতা, সঙ্গীত সঞ্জীবনী, প্রেমাঞ্জলি, স্ত্রীশিক্ষা, স্বজাতি প্রেম, আদব কায়দা শিক্ষা, স্পেনীয় মুসলমান সভ্যতা, সুচিন্তা, মহানগরী কর্ডোভা, আত্মবিশ্বাস ও জাতীয় প্রতিষ্ঠা, তুর্কী নারী জীবন ও তুরস্ক ভ্রমণ।