কি করে ভালো একটি ঘুম দিতে পারবেন

অপূর্ব চৌধুরী

প্রকাশিত : জুন ১০, ২০২০

জীবনের এক তৃতীয়াংশ সময় আমাদের কাটে ঘুমে। আর ঘুম হয় একটি রাসায়নিক উপাদানের কারণে। নাম, মেলাটোনিন। মাথার ভেতর পিনিয়াল নামের একটি গ্ল্যান্ড থেকে এটি বের হয়। উপাদানটি বেরিয়ে আসে অন্ধকার পেলে। কমে যায় আলো দেখলে। অনেকে তাই মেলাটোনিনকে ‘অন্ধকারের হরমোন’ বলে।

ঘুমের স্টেজ দুটি। শুরুতে ঘুমঘুম ভাব, তারপর পুরো ঘুমের ভাব। বিজ্ঞানের ভাষায় ঘুমঘুম ভাবকে বলে non REM এবং পুরো ঘুমকে বলে REM। REM মানে Rapid Eye Movement। জেগে থাকলে চোখের বল এদিক-ওদিক ঘোরে। ঘুমঘুম ভাবের সময় চোখ বন্ধ করলে চোখের বল ঘোরা থেমে যায়। ঘুমঘুম ভাবের সময় এই চোখ না ঘোরাকে বলে non REM। এই সময় ঘুম হয় না, ঘুমের চেষ্টা করা হয়। একবার এপাশ ঘুরে তো আরেকবার ওপাশে ফেরে।

একবার কোলবালিশ পেঁচিয়ে ধরে, আরেকবার গালে হাত দিয়ে একপাশে চেপে মরে। এই করতে করতে হঠাৎ মনে হয় যেন কোথায় ঢুকে যাচ্ছে। এপাশ-ওপাশ ঘোরা বন্ধ হয়ে যায়। ঠিক তখন চোখের বল ঘুরতে থাকে। এজন্যে এই স্টেজকে বলে REM। আর এই স্টেজটাই ঘুম। আসল ঘুম। এই সময়ে শরীর ঘোরে না, কিন্তু চোখ ঘোরে। কারণ হলো, এই সময়ে মস্তিষ্কের ভেতর যে কাণ্ড ঘটতে থাকে, চোখ তাকে দেখতে থাকে। আর এই মস্তিষ্কের কাণ্ডটি হলো স্বপ্ন।

জাগ্রত অবস্থায় চোখ যেমন ঘোরে, ঘুমন্ত অবস্থায় তেমনি স্বপ্ন দেখতে চোখ ঘোরে। আর যখন স্বপ্ন দেখতে থাকে, তখনই বাস্তব থেকে সরে গেছে বলে সেটিকে পুরো ঘুম বলে। দেখা গেছে, ঘুমের এই দুই স্টেজের মধ্যে পঁচাত্তর ভাগ হলো, ঘুমঘুম ভাবের non REM। বাকি পুরো ঘুমের REM হলো মাত্র ২৫ ভাগ। তাই লোকে অনেকক্ষণ ঘুমালেও বেশিক্ষণ স্বপ্ন দেখে না।

পুরো দুই স্টেজের সাইকেলটি একবার শেষ হতে দুই ঘণ্টা লাগে। আট ঘণ্টা ঘুমোলে চারবার এমন সাইকেল ঘটে। তারমানে, আট ঘণ্টা ঘুমের মাত্র দুই ঘণ্টা প্রকৃত ঘুমে কাটে।

আর এই দুই ঘণ্টা ঘুম ঠিকমতো দেয়াও অনেকের জন্যে কঠিন হয়ে যায়! অথচ বিছানায় আট ঘণ্টা শুয়ে থেকে চ্যাপ্টা হবার উপক্রম হয়। তাহলে কি করে ভালো একটি ঘুম দিতে পারবেন? চলুন, এ বিষয়ে কিছু তথ্য জেনে নিই।

এক. সন্ধের পর ঘরের আলো যত কম রাখা যায়। বারান্দার লাইট জ্বালালে সিটিং রুমে টেবিল ল্যাম্প জ্বালান। তৈরি করুন একটি আলো-আঁধারি পরিবেশ। কারণটি ঘুমের প্রসেসের মধ্যেই আছে। বলেছিলাম শুরুতে, ঘুম হয় মেলাটোনিন সিক্রেট হলে। যত বেশি মেলাটোনিন, তত তাড়াতাড়ি ঘুম। মেলাটোনিন অন্ধকারের হরমোন।

দুই. সন্ধ্যায় চা-কফি খাবেন না। চা কিংবা কফি খাবেন সকালে কিংবা দুপুরে। রাতে নয়। এক কাপ কফির এফেক্ট শরীরে থাকে দশ থেকে বারো ঘণ্টা। বিকেল পাঁচটায় কফি খেলে শরীরে তার ইফেক্ট যেতে হয়ে যাবে রাত দুটা।

তিন. রাতে পেট পুরে খাবেন না। গলা পর্যন্ত খাবেন না। এমন খান, যাতে মনে হয় আশি ভাগ পেট পুরেছে। বেশি খেলে শরীর ব্যস্ত থাকে অধিক সময় নিয়ে পরিপাক করতে। যত বেশি সময় নেবে, তত দেরিতে ঘুম হবে।

চার. বিছানায় যাবার তিন ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খাবেন। শরীরে খাদ্য পরিপাকের গড় সময় দুই ঘণ্টা। দেশের লোকজন রাত দশটায় খায়। বিছানায় যায় এগারোটায়। তারপর হয়তো সোশ্যাল মিডিয়ায় উঁকিঝুঁকি দিয়ে ঘুম আসে দুটায়। রাতের খাবার খাবেন আটটা থেকে নয়টায়। দেখবেন, বারোটার আগেই ঘুম চলে আসবে।

পাঁচ. রাতে মাংস খাবেন না। পরিপাক হতে সময় নেয়। মাছ, শাক-সবজি, ডাল খাবেন। সাথে সালাদ। মিষ্টি না খেয়ে দই খাবেন। ফল খাবেন দিনের বেলায়।

ছয়. বিছানায় যাওয়ার এক ঘণ্টা আগে টিভি ও মোবাইল ফোন দুটোই বন্ধ রাখবেন। যে কোনো স্ক্রিন থেকে বের হওয়া আলো মস্তিষ্ক থেকে মেলাটোনিন বের হতে বাধা দেয়।

সাত. বিছানায় উত্তেজনাকর কিছু পড়বেন না। পত্রিকা হোক, সোশ্যাল মিডিয়ার হোক, কিংবা উষ্ণ কিছু। কবিতা মন ও মস্তিষ্ককে সুস্থির করে। ছোট ছোট অনুপ্রেরণার কথাও মনকে ধীর এবং গভীর করে তোলে।

আট. বিছানায় যাবার আগে দাঁত ব্রাশ করুন, হাত, মুখ এবং পা ধুয়ে নিন। যারা নামাজ অথবা পুজো করেন, প্রার্থনা করুন। ঘুমের আগে প্রার্থনা কিংবা মেডিটেশন শরীর ও মনকে সুস্থির করে।

নয়. ঘুমের আগে বিছানায় বা রুমে কোনো সুগন্ধি স্প্রে করুন। নিজের প্রিয় কোনো গন্ধ মস্তিষ্ককে রিলাক্স করে।

দশ. সর্বশেষ ঘুমের আগে এলকোহল খাবেন না। এলকোহল ঘুম আনায় না, উল্টো ঘুম হরণ করে।