নারীর বক্রতা দোষ নয়, সৌন্দর্য
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহ.)প্রকাশিত : জানুয়ারি ০৬, ২০২১
পুরষের চোখে নারী চিরকালই একটি বিস্ময়কর চিহ্ন। নারীকে এই বোঝা যায় তো পরক্ষণেই মনে হয়, কিছুই তো বোঝা হলো না। প্রকৃতির আশ্চর্য সৃষ্টি এই নারী। যুগে যুগে জ্ঞানীরা তাদের বিষয়ে নানা মন্তব্য করে গেছেন। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলও (রহ.) তার ছেলেকে নারীর বিষয়ে কিছু পরামর্শ দেন, ছেলে যখন বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সেই পরামর্শগুলো পাঠকদের উদ্দেশ্যে:
নারীরা সাধারণত রোমান্টিকতা পছন্দ করে। খুনসুটি ও রসিকতা তাদের বেশ পছন্দ। নখরামি ও ন্যাকামি তাদের স্বভাবগত। ভালোবাসার স্পষ্ট প্রকাশকে তারা খুবই পছন্দ করে। তুমি একান্তে স্ত্রীর কাছে এসব কথা প্রকাশে কখনোই কার্পণ্য করবে না। তাকে বেশি বেশি ভালোবাসার কথা বলবে। যদি এসবে কার্পণ্য করো,তাহলে দেখবে কিছুদিন পরই তোমার আর তার মাঝে একটা অদৃশ্য পর্দা ঝুলে গেছে।
এরপর দিনদিন পরস্পরের সম্পর্কে শুষ্কতা আসতে শুরু করবে। ভালোবাসা জানলা দিয়ে পালাবার পথ খুঁজবে। নারীরা কঠোর-কর্কশ-রূঢ়-বদমেজাজি ও রুক্ষ স্বভাবের পুরুষকে একদম পছন্দ করে না। তোমার মধ্যে এমন কিছু থাকলে এখুনি ঝেড়ে ফেলো। কারণ তারা সুশীল,ভদ্র ও উদার পুরুষ পছন্দ করে। তুমি তার ভালোবাসা অর্জনের জন্য, তাকে আশ্বস্ত করার জন্য হলেও গুণগুলো অর্জন করো।
এটা খুব ভালো করে মনে রাখবে, তুমি তোমার স্ত্রীকে যেমন পরিচ্ছন্ন, সুন্দর, পরিপাটি, গোছালো, সুরুচিপূর্ণ ও সুগন্ধিময় দেখতে চাও, তোমার স্ত্রীও কিন্তু তোমাকে ঠিক তেমনটাই চায়। তাই সাবধান থাকবে, তার চাহিদা পূরণে যেন কোনো অবস্থাতেই তোমার পক্ষ থেকে বিন্দুমাত্র অবহেলা না হয়। ঘর হলো নারীর রাজ্য। একজন নারী নিজেকে সবসময় সেই রাজ্যের সিংহাসনে আসীন দেখতে খুবই পছন্দ করে। সে কল্পনায়, স্বপ্নে ও বাস্তবে এই রাজ্য নিয়ে ভাবে। সাজায়, রচনা করে।
খুবই সাবধান থাকবে। কখনোই তোমার স্ত্রীর এই সুখময় রাজত্বকে ভেঙে দিতে যেও না। এমনকি তাকে সিংহাসন থেকে নামিয়ে দেয়ার প্রয়াশও চালাবে না। তুমি তো জানোই, আল্লাহ্ তা`আলার কাছে সবচেয়ে অপছন্দজনক বিষয় কী? তাঁর সাথে কোনোকিছু শরিক করা। হ্যাঁ, ঠিক বলেছো। একজন রাজার কাছেও সবচেয়ে ঘৃণিত বিষয় কী? তার রাজ্যে অন্য কেউ হস্তক্ষেপ করা।
নারীরা তার স্বামীকে মনেপ্রাণে এবং সর্বান্তকরণে কাছে পেতে চায়। তবে পাশাপাশি বাপের বাড়িকেও হারাতে চায় না। হুঁশিয়ার থেকো বাবা! তুমি ভুলেও নিজেকে আর স্ত্রীর পরিবারকে এক পাল্লায় তুলে মাপতে শুরু করে দিও না। তুমি এ অন্যায় দাবি করে বসো না, `হয় আমাকে বেছে নাও, নাহলে তোমার বাবা-মাকে।’ তুমি এই বিষয়টা চিন্তাতেও স্থান দিও না। তুমি তাকে এমনটা করতে বাধ্য করলে সে হয়তো চাপে পড়ে মেনে নেবে। কিন্তু তার মনের গহীনে কোথাও একটা চাপা বোবা কান্না গুমরে মরতে থাকবে। তোমার প্রতি এক ধরনের সুপ্ত অশ্রদ্ধা তার কোমল মনে জেগে উঠবে।
তুমি জানো, অনেক শুনেছো এবং পড়েছো নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে বাহু (বা পাজরের) বাঁকা হাড় থেকে। এই বক্রতা কিন্তু তার দোষ নয়, সৌন্দর্য । তুমি নারীদের চোখের ভুরু লক্ষ্য করে দেখেছ? সেটার সৌন্দর্যটা কোথায়? বক্রতায়। একদম ঠিক কথা। বক্রতাই ভুরুকে সুন্দর করে তোলে। ভুরুটা যদি সোজা হতো, দেখতে সুন্দর লাগতো না। যদি তোমার স্ত্রী কোনো ভুল করে ফেলে, অস্থির হয়ে রেগেমেগে হামলা করে বসো না। উত্তেজিত অবস্থায় তাকে সোজা করতে যেও না, তাহলে অতিরিক্ত চাপে ভেঙে যাবে। আর ভাঙা মানে বোঝোই তো, তালাক।
আবার সে অনবরত ভুল করে যেতে থাকলে ভেঙে যাওয়ার ভয়ে কিছু না বলে লাগামহীন ছেড়েও দিও না। তাহলে বক্রতা যে আরো বেড়ে যাবে। নিজের ভেতরে গুটিয়ে যাবে। তোমার প্রতি আচরণ উদ্ধত হয়ে যাবে। তোমার কথায় কান দেবে না। তাহলে কী করবে? মাঝামাঝি অবস্থানে থাকবে। তুমি ওই হাদিসটা পড়োনি? ওই যে, যার ভাবার্থ হলো, নারীদের সৃষ্টি করা হয়েছে এমনভাবে যে, তারা স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়। তার প্রতি অতীতে কৃত সব সদ্ব্যবহার ও সদাচার ভুলে যায়। তুমি যদি তার প্রতি যুগ-যুগান্তরও সুন্দর আচরণ করো, হঠাৎ একদিন কোনোক্রমে একটু রূঢ় আচরণ করে ফেললেই সে নাকের জল চোখের জল এক করে ফেলবে। বলবে, আমি তোমার কাছে কখনোই ভালো কিছু পাইনি।.
দেখো বাছা, তার এই আচরণে রুষ্ট হয়ো না। তার এই চপল স্বভাবের প্রতিক্রিয়ায় তার প্রতি বিতৃষ্ণা এনো না। তার এই স্বভাবকে তুমি অপছন্দ করলেও, তার মধ্যে এমন অনেক কিছু পাবে, যা তুমি শুধু পছন্দই করো না, বরং জানও লড়িয়ে দিতে পারো।.নারীদের শরীর মনের অবস্থা সবসময় একরকম থাকে না। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট একটা সময় তাদের শারীরিক দুর্বলতা থাকে। অনেকসময় মানসিক অস্থিরতাও বিরাজ করে। তাদের এই দুর্বলতা, অসহায় অবস্থার কথা বিবেচনা করে আল্লাহ্ তা`আলা তাদের নির্দিষ্ট সময়ের নামাজ মাফ করে দিয়েছেন। রোযাকে পিছিয়ে দিয়েছেন তার স্বাস্থ্য ও মেজাজ ঠিক হওয়া পর্যন্ত।
তুমিও তোমার স্ত্রীর দুর্বল মুহুর্তগুলোতে তার প্রতি কোমল হবে।.সবসময় মনে রেখো, তোমার স্ত্রী তোমার কাছে অনেকটা দায়বদ্ধ। বিভিন্নভাবে তোমার মুখাপেক্ষী। তোমার সুন্দর আচরণের কাঙাল। তুমি তার প্রতি যত্নবান হবে। তার প্রতি অনেকবেশি মনোযোগ দেবে। তাকে আপন করে নেবে। তাহলে সে তোমার জন্য শ্রেষ্ঠ সম্পদে পরিণত হবে। তাকে অনুপম সঙ্গী হিসেবে পাবে।
বাঙ্লায়ন: মালিহা আলিশাা
























