চিত্রকর্ম: জয়নুল আবেদিন

চিত্রকর্ম: জয়নুল আবেদিন

বাংলার মহামারি, দুর্ভিক্ষ এবং বর্তমান বাস্তবতা

রাহমান চৌধুরী

প্রকাশিত : এপ্রিল ১৭, ২০২০

বাংলায় বহু আগে মহামারি হতো। ম্যালেরিয়া বা কলেরায় গ্রাম উজার হয়ে যেত। কিছুদিন পর আবার থেমে যেত। যখনকার কথা বলছি তখন সেসব মহামারির প্রতিষেধক ছিল না। কিন্তু সেটা একসময়ে থেমে যেত। মানুষ তখন সেভাবে ভ্রমণ করতো না। কিন্তু ভ্রমণ যে একেবারে বন্ধ ছিল, তাও না। নিশ্চয়ই সে মহামারি কেমন করে থেমে যেত, সেসবের দলিলপত্র রয়েছে কিনা জানি না। কিন্তু সেটা বহু মানুষের প্রাণ নেয়ার পর থেমে যেত, সেটা সত্যি। গ্রামের মানুষ প্রথমে তখন এটা বুঝতে পারতো না যে, সেগুলি ছোঁয়াচে রোগ। ফলে কেউ গৃহবন্দি থাকতো না বা নিজেকে অন্যের কাছ থেকে দূরে রাখতো না। বহুজনের শরীর নিজস্ব নিয়মে রোগ প্রতিরোধ করে তার মধ্যেই টিকে যেত। হাসপাতালের সুবিধা তখন ছিল না গ্রামেগঞ্জে বা শহরেও। চাষাবাদ বা স্বাভাবিক জীবন বন্ধ রাখার কোনো কারণ খুঁজে পেত না মানুষ, যেহেতু জানতো না তা ছোঁয়াচে। মহামারি চলছে একদিকে আর একদিকে চলছে মানুষের স্বাভাবিক জীবন, হাটবাজার চাষাবাদ ব্যবসা-বাণিজ্য। মানুষ মারা পড়ছে পাশাপাশি। মানুষ মনে করতো সেটা স্বাভাবিক নিয়ম, জীবন যাপনের ধারা পাল্টে যে সেটাকে প্রতিরোধ করা যায়, মানুষ সেটা জানতো না। কলেরা আর গুটি বসস্ত মহামারি আকারে হতে আমরা দেখেছি আমাদের কম বয়সে। মানুষ সেগুলিকে জয় করেছে বহুদিনের সাধনায়।

হবিগঞ্জের বানিয়াচঙ্গ বাংলাদেশের বৃহত্তর গ্রাম। যতদূর জানি, চারটা ইউনিয়ন রয়েছে একটা গ্রামে। বানিয়াচঙ্গে ইংরেজ শাসনে বাংলা তেরশো পঞ্চাশ সালে ভয়াবহ এক মহামারি হয়েছিল। সে মহামারিতে হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। দিনপ্রতি মৃতের সংখ্যা ছিল একশো পঁচিশ জন। দিনেদুপুরে মানুষের লাশ কাক-শেয়ালকে ভক্ষণ করতে দেখা গেছে। মানুষ মানুষকে বলতো, ‘বানিয়াচঙ্গের দিকে যাইও না, গেলে আর ফিরিতে পারিবে না।’ ঘটনায় দেখা গেছে, এক পরিবারের সকলে অসুস্থ, কে কাকে দেখবে আর কে কার সেবা করবে, তেমন অবস্থা। প্রথমে যখন বানিয়াচঙ্গের মহামারির কথা বলা হলো, জনস্বাস্থ্য বিভাগের বড় কর্তারা গা করলেন না। বানিয়াচঙ্গ কেউ পরিদর্শন করতে পর্যন্ত গেল না। যখন পত্রপত্রিকায় লেখা আরম্ভ হলো, মৃত লাশের মিছিল বেড়েই চললো, তখন জেলা কর্মকর্তা মায়ার সেখানে যান। না খেতে পাওয়া পাঁচ হাজার মানুষের মিছিল তার কাছে গিয়ে উপস্থিত হয়েছিল। সরকার প্রশাসন সঠিক সময়ে খাদ্য না পাঠানোয় মহামারির সঙ্গে দুর্ভিক্ষে বহু মানুষ মারা যায়। মহামারি কী কারণে হয়েছিল তা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছিল। প্রথমে বলা হয়েছিল, ম্যালেরিয়া। জনস্বাস্থ্য বিভাগের বড় বড় চিকিৎসকরা তাই দাবি করেছিলেন। কুইনাইন দিয়ে চিকিৎসা আরম্ভ হলো। কিন্তু স্থানীয় এলএমএপি চিকিৎসক হোসেন চৌধুরী দেখলো যে, কুইনাইন দিয়ে চিকিৎসায় সে আশানুরূপ ফল পাচ্ছে না। তিনি সন্দেহ করলেন, এ মহামারি ম্যালেরিয়া নয়, পরন্তু ভীষণ সংক্রামক ‘সেরিব্রো স্পাইনাল ফিবার’। কিন্তু এলএমপি মানে ছোট চিকিৎসক, বড় বড় চিকিৎসকরা তার কথা মানলেন না। তিনি রোগের বীজাণু সংগ্রহ করে ঢাকার সহকারী মিটফোর্ড হাসাপাতের পরীক্ষাগারে নিয়ে যান, সেখানে সিদ্ধান্ত হয় তিনিই ঠিক। কিন্তু সরকারের বড় চিকিৎসকরা তা মানতে রাজি নন। হোসেনকে ‘সেরিব্রো স্পাইনাল ফিবার’-এর চিকিৎসা করতে দেয়া হলো না। বহু লোক তাতে মারা পড়লো। যখন হোসেন ‘সেরিব্রো স্পাইনাল ফিবার’-এর চিকিৎসা দিতে চাইলেন, বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরিচ্যুত করলেন। তাকে বিকৃতমস্তিষ্ক আখ্যা দিলেন।

ব্র্যাকের প্রয়াত ফজলে হাসান আবেদের পূর্বপুরুষ খান বাহাদুর রফিকুল হোসেন চিকিৎসক হোসেন চৌধুরীকে নিজ বাড়িতে আমন্ত্রণ করে ডেকে নিয়ে, বহু মানুষের সামনে তার ‘সিদ্ধান্ত ভুল’, ‘সে কিছুই জানে না’, ‘সে হাতুড়ে ডাক্তার’ ইত্যাদি বলে নানাভাবে অসম্মান করেছিলেন। যাতে হোসেন মানুষকে চিকিৎসা দেবার জন্য আর বানিয়াচঙ্গে প্রবেশ করতে না পারেন সেজন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে দিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলো। হোসেন তখন শিলংয়ে প্রিমিয়ার মেডিক্যাল মিনিস্টার সঙ্গে দেখা করে তার রোগ নির্ণয় সম্পর্কে সরেজমিনে গিয়ে পরীক্ষা করতে অনুরোধ জানান। কিন্তু কর্র্তৃপক্ষ তার কথায় কর্ণপাত করে না। বরং তার বিরুদ্ধে প্রেসনোট বের করে তার নির্ণয়কে ভিত্তিহীন বলা হয়। তিনি ইতিপূর্বে রোগীদের সেবাদান করতে গিয়ে এতদিনে নিজে একই রোগে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হন। তিনি তখন হবিগঞ্জের আর এক ডাক্তারকে তার বিশ্বাস মতো ‘সেরিব্রো স্পাইনাল ফিবার’-এর চিকিৎসা দিতে বলেন। নিজের ব্যবস্থাপত্র মতো দেয়া সেই চিকিৎসাতেই হোসেন সুস্থ হন।

সুস্থ হয়ে তিনি থামলেন না। তিনি বীজাণু নিয়ে কলকাতায় গেলেন। সেখানকার চিকিৎসক বীজাণু পরীক্ষা করে বললেন, প্রত্যেকটিতেই ‘ম্যানিনগো কক্কাস’ বিদ্যামন। চিকিৎসক হোসেন ফিরে এসে যখন স্বাধীনভাবে মানুষের চিকিৎসা করতে গেলেন, দেখলেন বড় বড় ডাক্তারদের প্রচারের ফলে স্থানীয় রোগীরা তাকে বিকৃতমস্তিষ্ক মনে করে তার কাছে কেউ চিকিৎসা নিতে আসছে না। তিনি তখন মুন্সেফ আদালতে মামলা করে বসলেন তাদের বিরুদ্ধে যারা তার সম্পর্কে কুৎসা রটিয়ে ছিল। সকল প্রমাণপত্র সাপেক্ষে তিনি বহু বছর পর উনিশশো চৌষট্টি সালে মামলায় জয়লাভ করেন। কিন্তু তাতে করে খুব বেশি লাভ হলো কি? তিনি মহামারির মানুষদের চিকিৎসা দিতে পারলেন না। হাজার হাজার মানুষ ভুল চিকিৎসায় প্রাণ দিয়েছিল। বড় বড় চিকিৎসকরাই সেদিন সাধারণ মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল। বড় বড় চিকিৎসকরা নিজেদের গো ধরে বারবার প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন সেটা সাধারণ ম্যালেরিয়া। কিন্তু বানিয়াচঙ্গে তা ছিল না। যদিও তখনকার এক সংবাদে দেখা যায় সারা ভারতবর্ষে ম্যালেরিয়ার রোগী এককোটি বাইশ লক্ষ আর বাংলায় প্রায় তেতাল্লিশ লক্ষ।

ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতবর্ষে ম্যালেরিয়ায় বহু শ্বেতাঙ্গ মারা গেছে। কিন্তু কাজকর্ম তাতে বন্ধ রাখা হয়েছে তেমন শোনা যায় না। কুইনিয়ান পরে আবিষ্কৃত হয়েছিল ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা হিসেবে। ব্রিটিশ শাসনের শেষ দিকে ব্রিটিশ এক ব্যবসায়ীর কথা বলা যাক। মানুষটা ধুমধাম করে ভারতবর্ষে বিয়ে করেছে, কিন্তু বিয়ের পরপরই তার নববধু ম্যালেরিয়ার আক্রমণে মারা যায়। হাসপাতাল ছিল না কাছে, নববধুর চিকিৎসা দিতে পারেনি সেই ইংরেজ। মানুষটা এ ঘটনায় খুব কষ্ট পায়। তারপর জীবনের সব চিন্তা পাল্টে গেল। সে ঠিক করলো তার সব টাকা দিয়ে সে একটা হাসপাতাল করবে যেখানে সে থাকতো সেখানেই। মানুষটা খুব উৎসাহ নিয়ে একটা হাসপাতাল করার জন্য ছুটতে থাকলো। ব্রিটিশ আমলাতন্ত্র কী জিনিস তখন সে টের পেল। নিজে ইংরেজ হয়ে প্রতিদিন সে ছুটাছুটি করছে, কিন্তু অনুমোদন আর হচ্ছে না। ফাইল নিয়ে যেখানে সেখানে ছুটাছুটি করতে গিয়ে ব্যবসা লাটে উঠলো। মানুষটা মারা গেল কিন্তু ততদিনেও হাসপাতালের অনুমোদন পাওয়া গেল না। ভারত স্বাধীন হবার পর সে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

কথাটা হলো এই যে, ব্রিটিশ আমলাতন্ত্রের যুগে চাইলেই যে মহামারি থেকে মানুষকে বাঁচাতে আপনি হাসপাতাল বানাতে পারবেন তা নয়। সাধারণ মানুষের ঘরে চিকিৎসা পৌঁছে যাক, এ নিয়ে সামান্য মাথাব্যথা ছিল না আমলাতন্ত্রের। কিন্তু তারা সাধারণ মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল আর কাজেকর্মে দক্ষ আর সক্রিয় হলেই কিন্তু মানুষ দুর্দিনে চিকিৎসা লাভ করতে পারতো। প্রায় সকল আমলারা খুব আন্তরিক ছিল লাট বাহাদুর আর উপরওয়ালাকে খুশি রাখতে। ব্রিটিশ আমলাতন্ত্রের শিক্ষানুযায়ী সক্রিয় থাকা, কর্মদক্ষতা বলতে তারা বুঝতো বড় লাটকে জ্বী হুজুর বলা আর ইংরেজ রাজা-রানীর পক্ষে জনগণকে পেটানো। ব্রিটিশরা যে আমলাতন্ত্র রেখে গেছে আর যা আজ অবধি পাল্টানো হয়নি, সকলেই তারা আজো জনবিচ্ছিন্ন। রাষ্ট্রে কেউকেটা হিসেবে জনগণের উপর ছড়ি ঘুরানো তাদের প্রধান কাজ। পুলিশকে দায়িত্ব দিলে দেখা যায় সে প্রথমেই মানুষকে পেটাতে আরম্ভ করে। মানুষকে না পিটিয়ে সে মানুষের সেবাই করতে পারে না। ভালোমন্দ সব কাজ সে পিটিয়ে করতে চায়। দোষটা মোটেই তাদের নয়, দোষটা রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র ব্রিটিশদের দিয়ে যাওয়া আমলাতন্ত্রকে পাল্টাতে চায় না।

যা বলার কথা এখনো শুরু হয়নি। বাংলায় ম্যালেরিয়া, কলেরায় বহু মানুষ মারা গেছে। খুব দুঃখজনক পরিণতি হয়েছে। সেগুলি কয়েকমাস পর আবার থেমে গেছে। মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে। কলেরা ম্যালেরিয়ার পর তখন মানুষ না খেয়ে মারা গেছে এমন হয়নি। মুঘল শাসনামলে জমিদারদের শাসনে একটা নিয়ম ছিল, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মহামারি দেখা দিলে খাজনা মওকুফ করে দেয়া আর মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার সবরকম চেষ্টা নেয়া। মুঘলরা যে মহান শাসক ছিলেন, তা নয়। কিন্তু করিৎকর্ম ছিলেন। শাসকরা জানতেন সাধারণ মানুষরা হলো রাষ্ট্রের ভিত, যদি তারা না বাঁচে কৃষিকর্ম বন্ধ থাকবে ফলে রাষ্ট্রের খাজনা জুটবে না। রাষ্ট্রে খাদ্যের অভাব দেখা দিলে, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হলে কৃষিকর্ম বাধাগ্রস্থ হবে। শাসকরা এটা বুঝতেন, মানুষই শক্তি। মানুষ বলতে প্রধানত কৃষক আর কারিগররা। মুঘল শাসনে জমিদার ছিলেন সম্রাটের প্রতিনিধি কিন্তু ঠিকমতো খাজনা দিলে কখনো কৃষকদের জমি থেকে উৎখাত করবার ক্ষমতা জমিদারের ছিল না। কৃষকরা শোষিত হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বস্তি ছিল। কখনো নিজের ভূখণ্ড থেকে উৎখাত হবার ভয় ছিল না।

যখন ইংরেজরা সিরাজদৌলার কাছ থেকে শাসন ক্ষমতা নিয়েছিল, বাংলায় কী ঘটলো? বাংলার কৃষিব্যবস্থা সম্পর্কে কিছুই জানতো না তারা। কিন্তু গায়ের জোরে কৃষি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিয়ে নিল। মুনাফার জন্য কৃষকের খাজনা আগের চেয়ে তিনচার গুণ বাড়িয়ে দিল, যা ছিল সম্পূর্ণ অবাস্তব চিন্তা। কিন্তু শাসকরা যা মনে করবে সেটাই তো ঠিক। বিশেষ করে যে শাসকরা ইংরেজদের মতো জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন। মুঘলরা বাইরে থেকে এলেও ভারতীয় হয়ে গিয়েছিল, ভারতের সংস্কৃতির বহু কিছু গ্রহণ করেছিল, ভারতের সঙ্গে নিজেদের সংস্কৃতি আদানপ্রদান করেছিল। মুঘলরা লুট করে কিছুই ভারতের বাইরে নিয়ে যায়নি। ইংরেজরা চাইলো সব লুটে ব্রিটেনে নিয়ে যেতে। ইংরেজরা খাজনা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়াতে হঠাৎ সেই সময়ে বাংলার বহু কৃষক নিজের জমি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে গেল। ফলে সে কারণে চাষাবাদ হলো না। চাষাবাদ যথেষ্ট পরিমাণে বন্ধ থাকায় কিছুদিন পরে দেখা গেল ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ সারা বাংলা জুড়ে। বাংলার তিনভাগের এক ভাগ লোক মারা পড়েছিল সে দুর্ভিক্ষে। প্রায় এক তৃতীয়াংশ গ্রামের চিহ্ন থাকলো না। ভয়াবহ সেই দুর্ভিক্ষ আজো ছিয়াত্তরের মন্বন্তর বলে পরিচিত। চাষাবাদ বন্ধ থাকাট কত ভয়াবহ তখন বোঝা গিয়েছিল।

বারবার মহামারি যা পরেনি, বাববার মহামারিতে যত লোক মারা পড়েনি তার চেয়ে শত শতগুণ ক্ষতি হয়েছিল, শতগুণ লোক মারা পড়েছিল চাষাবাদ না হবার ফলে দুর্ভিক্ষ। ভারতে ইংরেজদের আগমনের পূর্বের দু হাজার বছরের শাসনের ইতিহাসে মোট দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল সতেরো বার। মুহম্মদ তুঘলকের সময় সেটা হয়েছিল একবার চাষাবাদ কিছুদিন বন্ধ থাকার ফলে। কিন্তু ইংরেজদের দুশো বছরের শাসনে ভারতে ছোট আর বড় দুর্ভিক্ষ হয়েছিল কম করেও চৌত্রিশটি। বাংলায় ইংরেজ শাসনের আরম্ভ আর সমাপ্তি দুটোই হয়েছিল দুর্ভিক্ষ দিয়ে। বাংলায় ইংরেজ শাসনের শেষে বিয়াল্লিশ-তেতাল্লিশ সালের দুর্ভিক্ষে মানুষ মারা যায় পঞ্চাশ লাখ। পঞ্চাশের মন্বন্তর বলে তা আজও পরিচিত। সেটা হয়েছিল, খাদ্যের অভাবে নয়, ইংরেজ শাসকদের খাদ্য মজুদ করার ফলে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে ইংরেজ শাসকরা তার সৈন্যদের জন্য বাংলার সাধারণ মানুষকে অভুক্ত রেখে খাদ্য সংগ্রহ করে তা মজুত করা আরম্ভ করেছিল। ব্যবসায়ীরা তা বুঝে নিজেরাই খাদ্য মজুদ করে গুদামজাত করে রাখে। মানুষ খাদ্য পাচ্ছিলো না। খাদ্য ছিল কিন্তু মানুষ মারা পড়লো শাসকদের দুর্নীতির কারণে। দীর্ঘ সময় ধরে চলেছিল সেই দুর্ভিক্ষ। বাংলার সেই অশনি সংকেতের কথা যেন ভুলে না যাই।