মধুবালা

মধুবালা

বিবি সাজদার গদ্য ‘মুগ্ধতা শেষে চলে যাওয়া সহজ’

প্রকাশিত : জানুয়ারি ০৫, ২০২১

বহু আগের একটা গান, পেয়ার কিয়া তো ডারনা কিয়া। আহা, অমৃতও এত মধুর না। ভিডিওতে মধুবালা। বিষাদের সৌন্দর্যমাখা মোহিনী রূপ। হায়রে, এতদিন কোথায় ছিলি? দীলিপ কুমার, যার নামে মহিলারা লুটোপুটি খায়। সেই গানে দেখেছি মধুবালার বিদ্রোহ, প্রেম।

মধুবালার কুষ্টি নিকুচি চিনেছি, খুঁজে পেয়েছি দীলিপকে। দীলিপের সাথে সম্পর্ক, কিশোর কুমারের সাথে বন্ধনহীন ঘর বাধা এবং জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে পলকা পলকা প্রেম নাকি অন্যকিছু? তবে মধুবালাকে চিনলে তো চলবে না, আমার চাই আনারকলিকে।

আবার খোঁজো,আবার দুনিয়া ঘাটো। আরে একি! নাদিরা বেগম যে নাম তার, ইরানি  কন্যা, কপালদোষে পড়েছিল আকবরের হাতে। না, বউ হয়ে নয়, সেবাদাসী হিসেবে। আকবর ছিল নাদিরা বেগমের (কেউ বলেন শরীফুন্নেসা) সৌন্দর্যে বিমোহিত, আদর করে নাম দিয়েছিলেন আনারকলি (বেদানার ফুল)।

কিছু ইতিহাসবিদ বলেন, আকবরের পত্নী ছিলেন উনি। পত্নীই হউন আর সেবাদাসীই হউন আনারকলি, তার মনের সাথে মন মিলেছিল আকবরপুত্র সেলিমের সাথে। সেলিম ত্রিশ, আনারকলি প্রায় চল্লিশ। প্রেম টালমাটাল, প্রেমের মরা নাকি জলেও ডুবে না।

ওদের প্রেমও রাষ্ট্র হয়ে গেল, আকবর রেগে আগুন। তার ভোগের নারীতে হাত দিয়েছে তারই পুত্র। বেত্তমিজ বলে গর্জন করলেন তিনি, মনে মনে হয়তো ভাবলেন কুত্তারবাচ্চা ছেলে, হালাল হারাম বুঝে না। ওদিকে সেলিম যৌবনের উত্তাপে বিদ্রোহ করে বসলেন বাপের সাথে। আর যায় কোথা, আনারকলিকে নিয়ে বিশাল প্যাঁচ বাপবেটায়।

বন্দি হলো সেলিম। আনারকলিকে আকবর দিলেন কঠিনতম শাস্তি। জ্যান্ত কবর। আনারকলি মাফ চাইলেন না আকবরের কাছে, পৃথিবীর ঐশ্বর্যময় জীবন পরিত্যাগ করে হাসতে হাসতে সমাধিতে গিয়ে উঠলেন। পাথরের গাঁথনিতে ঢেকে গেল সেলিমের প্রাণের দোসর, সুন্দরীতমা আনারকলি।

কথিত আছে যে, হামিদা বেগম আনারকলিকে গোপনে বিষ সরবরাহ করেছিলেন যাতে বেশিক্ষণ প্রাণ থেকে বদ্ধ সমাধিতে কষ্ট না হয় আনারকলির। অথচ মুঘল এ আজম সিনেমায় দেখলাম গোপনে আকবর আনারকলির জীবন ভিক্ষা দিলেন। এখানে আকবরকে মহানরূপে প্রদর্শন করা হলো।

এরপর রাজপুত্র সেলিম মসনদে বসলেন, জাহাঙ্গীর উপাধি নিলেন। মেহেরউননিসার  স্বামী শের আফগানকে হত্যা করে দখলে নিলেন মেহেরউননিসাকে। রানী হয়ে তার নাম হল নূরজাহান, এক কন্যাসহ তাকে নিকাহ  করেছিলেন সম্রাট জাহাঙ্গীর।

এ ইতিহাস আপনারা পাবেন তাজমহল ছবিতে। এবং এই ঘটনার বেশ রগরগে বর্ণনা আমি পড়েছিলাম বাংলার সাংসদ গোলাম মাওলা রনির লেখা একটি সিরিজে, বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশ হতো ওটা। বাস্তবে নূরজাহানের ভেড়া ছিলেন জাহাঙ্গীর। পর্দার আড়ালে শাসন করতেন নূরজাহান।

তুযুক ই জাহাঙ্গীরী তে নূরজাহানের নাম নিশানা থাকলেও বিস্মৃত ছিল আনারকলি। এমনকি আকবরনামাতেও নেই আনারকলির খোঁজ। সম্রাটগণ খুব সাবধানে এড়িয়ে গেছেন তাকে। হায়রে হতভাগ্য নারী আনারকলি, যার প্রেমে জীবন দিলি তার জীবনীর এক কোনাতেও তোর কোনো নিশানা রইলো না।

আনারকলিকে আমি চোখে না দেখলেও মধুবালাকে দেখেছি, মধুবালাই আমার কাছে আনারকলি, দীলিপের প্রেমমত্ত এক হরিণী। জীবনে যা চাইলো তা পেল না, কেউ কি পেয়েছে কোনোদিন? দীলিপের কি কোনোদিন নির্জনে মনে পড়েছিল মধুবালার কথা? সে উত্তর আমি জানি না। আমি আমার কথা জানি, মুগ্ধতা শেষে চলে যাওয়া সহজ, এটাই আমি মানুষের জীবন ঘেটে দেখেছি। হায়রে, তোরা এমন কেন?