মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর কবিতা ‘আর কত কাল’

পুনর্মুদ্রণ

প্রকাশিত : নভেম্বর ১০, ২০২৫

রৌদ্রে পুড়িয়া বৃষ্টিতে ভিজি’ কৃষকেরা চষে জমি
বুকের বক্ত ঘাম হয়ে ঝরে সারাটি অঙ্গ চুমি।

 

কঠোর শ্রমের অর্জিত ধন প্রজার ফসল রাশি
খাজানার দায়ে নি’ছে জমিদার জোঁকের মতন চুষি।

 

জমিদারের খানা ইমারৎ উঠিয়াছে আজ গড়ি
প্রজার অস্থি মাংস ত্বকের সুদৃঢ় ভিত্তি পরি।

 

চাষার রক্তে পুষ্ঠ হয়েছে যত সব জমিদার
পল্লীতে তাই উঠিয়াছে আজ মরণের হাহাকার।

 

মহাজন আসে সঙ্গে লইয়া নিলামের পরওয়ানা
উচ্ছেদ হলো ঋণদায়ে কত গরিবের আস্তানা।

 

ধনীর ফিটন মটর চলেছে গরিবের বুক পিষে
এতটুকু যদি প্রতিবাদ করে ধরিয়াছে টুটি কষে।

 

চালহীন ভাঙা কুঁড়েঘর আর বুকভাঙা হাহাকার
এটুকু লয়েও বাঁচিবার আজ নাই তার অধিকার।

 

তাদেরই হুকুমে জুতা বহি’ চলে হতভাগ্যের দল
ছেঁড়া কাপড়ের টুকরা পরণে সম্বল আঁখিজল।

 

একদল শুধু খাটিয়া খাটিয়া অনাহারে দিবে প্রাণ
আরদল শুধু হুকুম করিবে, ভুড়ি মোটা গদিয়ান।

 

এই প্রভুদেরই পদতলে আনি যাহারা যোগায় ভাত
হারভাঙা শ্রম বিনিময় লভে তাহারাই পদাঘাত।

 

ঘরে ঘরে আজ করে হাহাকার উৎপীড়িতের দল
খোদার আরশ কাঁপে থরথর, দুনিয়াটা টলমল।

 

মানুষের প্রতি মানুষের এই এত বড় অপমান
আর কত কাল? জাগো, সবে মিলে করো এর অবসান।

 

মানুষ তোমরা! শির উঁচু করো, সম্মুখে দেখ চাহি
দুয়ারে তোমার পয়গাম আসে সাম্যের গান গাহি।

 

সঙ্ঘবদ্ধ হও সবে আজ, বুকে আনো হিম্মৎ
বিজয় ধ্বনিতে ধ্বসিয়া পড়ুক জালিমের ইমারৎ।

 

১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে আসাম প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশনে ভাসানী এই কবিতা পাঠ করেন।