যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ব্যাখ্যা চাইবে বাংলাদেশ

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : নভেম্বর ২১, ২০২৩

গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা কল্পনা আক্তার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশ ব্যাখ্যা চাইবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। আজ মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।

বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের অধিকার ও তাদের মানোন্নয়ন নিয়ে সম্প্রতি নতুন স্মারকপত্র স্বাক্ষর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। স্মারকপত্র প্রকাশের পর দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তার বক্তব্যে কল্পনা আক্তার নামের বাংলাদেশি এক গার্মেন্টস শ্রমিক ও নেত্রীর কথা উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাওয়া হয় প্রতিমন্ত্রীর কাছে।

জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, “আমি পরিষ্কারভাবে বলছি, এই কমেন্টস গার্মেন্টস কেন্দ্রিক ছিল না। অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের ওই বক্তব্য ছিল অ্যাপেক (এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কোঅপারেশন) সামিটে। এটা শুধুমাত্র গার্মেন্টস শিল্প বা টেক্সটাইল শিল্প বা বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক কোনো বৈঠকে নয়। কল্পনা আক্তার বাংলাদেশে একবারই গ্রেফতার হয়েছিলেন ২০১০ সালে। তিনি একা নন, তার সঙ্গে আরও শ্রমিক নেতা চাকরিরত অবস্থায় আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে তাদের মামলাটি তুলে নেওয়া হয়।”

তিনি আরও বলেন, “রানা প্লাজা ধসের পরে পশ্চিমা দেশের কিছু ক্রেতা যখন সেই ফ্যাক্টরিগুলোকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করল, তখন কল্পনা আক্তার ও আরও দু’একজন মিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে এটার প্রতিবাদ করতে গিয়ে সেখানেই গ্রেফতার হয়েছিলেন। কল্পনা আক্তার বলেছেন, তিনি আমাদের কারণে বা অন্য কারও দ্বারা হুমকি পেয়েছিলেন। এই ক্ল্যারিফিকেশনটা (ব্যাখ্যা) আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চাইব। আমরা এটা অবশ্যই পরবর্তী আলোচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে জিজ্ঞাসা করব।”

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, “কল্পনা আক্তার খুব সফলতার সঙ্গে বাংলাদেশের শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার জন্য একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করে তার নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ পুলিশের রেকর্ডে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রেকর্ডে আমরা যতদূর খোঁজ নিয়ে দেখেছি, জেনেছি বা আপনাদের ওপেন সোর্সেও, আপনারা এত সাংবাদিক আছেন, আপনারা তাকে গিয়ে যদি জিজ্ঞাসা করেন যে, উনি এ কথাটি আদৌ বলেছেন কিনা, বলে থাকলে কিসের ভিত্তিতে বলেছেন? কিন্তু তিনি যে হুমকি বোধ করেছেন, এটা অতীতে কখনোই বাংলাদেশের কাউকে জানাননি। অবশ্যই এটার সত্যতা কতটুকু, আমরা সেটা জানতে চাইব।”

তিনি আরও বলেন, “কল্পনা আক্তারের নাম উল্লেখ করা হলেও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য বাংলাদেশ কেন্দ্রিক ছিল না। এই বক্তব্যটি মোটেই বাংলাদেশ কেন্দ্রিক নয়, কিছু কিছু গণমাধ্যমে এসেছে, তার বক্তব্যটি পুরো পড়বেন। তিনি বাংলাদেশ উল্লেখ করে কোনো বক্তব্য দেননি। উনি বলেছেন, বাংলাদেশের একজন গার্মেন্টস নেতা বা কর্মী কল্পনা আক্তার। দেশ উল্লেখ করে দুই-তিনটি আলাদা দেশের নাম বলেছেন, কিন্তু বাংলাদেশের কোনো ইস্যু সেখানে মেনশন করেননি, এটা মোটেই গার্মেন্টস শিল্প বা টেক্সটাইল শিল্প নির্দিষ্ট ছিল না।”

শাহরিয়ার আলম বলেন, “এটি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে শ্রম অধিকার আরও শক্তিশালী ও পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে। বিভিন্ন দেশের অনেক রকম চ্যালেঞ্জ থাকে, নারী কর্মীদের বেতন কম পুরুষদের চেয়ে, এটা আমার বলা কথা সেখানে তারা প্রশাসনিক একটা পদক্ষেপ নিয়েছেন, যেখানে তারা দূতাবাসের রাষ্ট্রদূতদের অথরাইজ করছেন, শ্রম বিষয়ক ইস্যুতে সেসব হোস্ট কান্ট্রিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য।”

তিনি আরও বলেন, “এটা বৈশ্বিক উদ্যোগ। যার মাধ্যমে তারা তাদের দূতাবাসগুলোর রাষ্ট্রদূতদের অতিরিক্ত দায়িত্ব অ্যাসাইন করছেন, কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এরই মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা সাপেক্ষে একজন লেবার অ্যাটাশে নিয়োগ দিয়েছে। যেকোনো কিছু সঠিকভাবে উপস্থাপিত না হলে কিছু বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।”

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, “কিন্তু এরই মধ্যে দ্বিপাক্ষিকভাবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক অনেকদূর এগিয়েছে। আমরা প্রায় বছরখানেক হয়ে গেল, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একজন লেবার অ্যাটাশে নিয়োগ দিয়েছে, সেই নিয়োগটা দেওয়ার অনুমতি আমরা দিয়েছি এবং ফ্যাসিলিটেড করেছি; এ কারণে বাংলাদেশকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে। বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এ উদ্যোগ বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের জন্য উদ্বেগের নয়।”

যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়া ব্রিফিংয়ে প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আসে। এ বিষয়টি কিভাবে দেখে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, “তাদের যত এপিটাইট (ক্ষুধা) আছে তারা তত প্রশ্ন নেবেন, তত উত্তর দেবেন। ইটস আপ টু দেম।”