রাহমান চৌধুরীর গদ্য ‘দুর্বৃত্তরা শিক্ষক পেশায় চ‌লে আস‌ছে’

প্রকাশিত : জুন ০২, ২০২৪

মানুষ ভুল করতে কর‌তে বড় হয়। মানুষ জীব‌নের শেষ দিন পর্যন্ত নানান ভুল করতে থা‌কে। প্রতি‌টি মানু‌ষের ক্ষে‌ত্রেই তা সত‌্য। মানুষ ভুল কর‌তে কর‌তেই শে‌খে এবং জ্ঞান অর্জন ক‌রে। বড় মা‌পের মানুষরা নি‌জে‌দের ভুলগু‌লি‌কে চি‌হ্নিত ক‌রে। ভুলগু‌লো য‌দি অন্যের অবিচারের মতো ঘটনা হ‌য়ে দাঁড়ায়, তার জন‌্য ক্ষমা চায় এবং অনুতাপ ক‌রে। কথায় আছে, ভুল ক‌রে না শয়তান। স্বভাবতই এটা একটা প্রবাদ, যা ব‌লে দেয় দুর্বৃত্তরা ভুল স্বীকার ক‌রে না। দুর্বৃত্তরা শুধু যে ভুল স্বীকার ক‌রে না তাই নয়, বড় বড় অপরাধ সংগ‌ঠিত ক‌রেও লজ্জা পায় না। বড় বড় দুর্বৃত্ত আর প্রতারক‌দের ক্ষে‌ত্রে এসব আরও সত‌্য। চার‌দি‌কের হালচাল ঘটনা লক্ষ‌্য কর‌লেই তা নজ‌রে আস‌বে। দুর্বৃত্ত‌দের, জা‌লিয়াত‌দের, প্রতারক‌দের লজ্জা ব‌লে কিছু নাই। প্রবাদই আছে, ন‌্যাংটার নাই লজ্জার ভয়। চার‌দি‌কে এখন মানুষ‌দের সংখ‌্যা বাড়‌ছে। বর্তমা‌নে আর সক‌লের মতন শিক্ষকরা পর্যন্ত নির্লজ্জ দুর্বৃত্ত হ‌য়ে দেখা দি‌য়ে‌ছে।

ঘটনাটা এমন হ‌য়ে‌ছে যে, কখ‌নো শিক্ষকরা দুর্বৃত্ত হ‌য়ে দাঁড়া‌চ্ছে কখ‌নো দুর্বৃত্তরাই শিক্ষ‌কের পেশায় চ‌লে আস‌ছে। প‌রের ঘটনাটাই বে‌শি ঘট‌ছে। বর্তমান সম‌য়ে দুর্বৃত্তরা শিক্ষক পেশায় চ‌লে আস‌ছে বে‌শি, যা বর্তমান শিক্ষাব‌্যবস্থা‌কে ভয়ানকভা‌বে কলু‌ষিত ক‌রে‌ছে। শিক্ষক‌দের দা‌য়িত্ব থা‌কে, শিশু‌দের বা নতুন প্রজন্ম‌কে মহৎ চিন্তা‌চেতনার দ্বারা প্রভা‌বিত করা। কিন্তু শিক্ষকরা নি‌জেরা দুর্বৃত্ত হ‌লে, প্রতারক হ‌লে, প্রতি‌নিয়ত মিথ‌্যা বল‌লে শিক্ষার্থী‌দের কী শেখা‌বে? ফ‌লে ক‌য়েক‌টি প্রজন্ম নানা রকম অসুস্থ‌ শিক্ষা নি‌য়ে বড় হ‌য়ে‌ছে এবং বড় হ‌চ্ছে। এর দায় তা‌দের নয়, কিন্তু তার প‌রিণ‌তি পু‌রো সমা‌জের জন‌্য ভী‌তিকর হ‌য়ে দাঁড়া‌চ্ছে। সর্ব‌ক্ষে‌ত্রে ভাষা ব‌্যবহা‌রে তারা সংযত নয়, মিথ‌্যার প‌ক্ষে বেসা‌তি কর‌তে লজ্জা পা‌চ্ছে না। কারণ একদল দুর্বৃত্ত শিক্ষক‌দের কা‌ছে তারা শি‌খে‌ছে নানা রকম মিথ‌্যাচার, প্রতারণা ও শঠতা। দুর্বৃত্ত শিক্ষক‌দের পাল্লায় প‌ড়ে ন‌্যা‌য়ের প‌ক্ষে লড়‌তে তারা ভু‌লে গে‌ছে।

দুর্ভাগ‌্য যে, ক‌য়েক‌টি প্রজন্ম না মহৎ চিন্তা করবার সু‌যোগ পা‌চ্ছে তা‌দের শিক্ষক‌দের কা‌ছে, না মহৎ কিছু শিখ‌তে পার‌ছে চার‌দি‌কের সমাজ থে‌কে। রাষ্ট্র, সমাজ ও বিদ‌্যালয় সর্বত্র তারা দেখ‌ছে লুটপা‌টের ম‌হোৎসব চল‌ছে আর নানা রকম মিথ‌্যাচা‌রে ভরে গে‌ছে। মানুষ এখন মিথ‌্যাচার কর‌তে পারার জন‌্যই অহংকার কর‌ছে। খারাপ কাজ করার জন‌্য এখন আর সে লজ্জা পায় না, অনুতাপ ক‌রে না। কিছুই তার কা‌ছে ভুল ম‌নে হয় না, যা কর‌ছে সবই ম‌নে ক‌রে ঠিক কর‌ছে। সব কিছুর পিছ‌নে আসল লক্ষ‌্য ভোগ‌বিলা‌সিতা, শারী‌রিক সুখ লাভ এবং আর্থিক কিংবা ভোগ‌বিলা‌সিতার প্রতি‌যো‌গিতায় সবাইকে ছা‌ড়ি‌য়ে যাওয়া। ‌নি‌জের সন্ত‌ান‌কেও সে এখন কুৎ‌সিত প‌থে টে‌নে নি‌য়ে যে‌তে দ্বিধা‌বোধ ক‌রে না। ক্রমাগত এই রকম একটা অসুস্থ‌ সমা‌জে ভিতর থে‌কে ক্ষয় আরম্ভ হ‌তে হ‌তে চার‌দিক একটা নিবীর্য সমা‌জে প‌রিণত হ‌চ্ছে।

নিশ্চয় এস‌বের ব‌্যতিক্রম আছে। ব‌্যতিক্রম থাক‌তেই হ‌বে। সকল সমা‌জের‌ সৌন্দর্য‌ তার ব‌্যতিক্রম। দ্বা‌ন্দ্বিক এমন একটা প‌রিণাম সমা‌জে আছে ব‌লেই, কখ‌নো আশা হা‌রি‌য়ে যায় না। কিন্তু আশা স্বয়ম্ভু নয়। মানু‌ষের স‌চেতন চিন্তা, সমা‌জের সব‌কিছু বি‌শ্লেষণ কর‌তে পারা এবং তার বিরু‌দ্ধে সংগ্রাম জা‌রি রাখার মধ‌্য দি‌য়েই এই অবস্থার প‌রিবর্তন হ‌বে। প‌রিবর্তনটা রাতারা‌তি হ‌বে না। বহু মানু‌ষের চিন্তা, সৃ‌ষ্টিশীলতা, ত‌্যাগ এবং সংগ্রা‌মের ভিতর দি‌য়েই এই অবস্থাটা অবশ‌্যই পাল্টা‌বে। ইতিহাস আমা‌দের সে কথাই ব‌লে। এখন প্রশ্ন হ‌লো, ইতিহা‌সের এই প‌রিবর্ত‌নে কে কোন দি‌কে দাঁড়া‌বো? যারা ইতিবাচক প‌থে হাট‌তে চাইছে, বৃহত্তর মানু‌ষের প‌ক্ষে দাঁড়া‌তে চাইছে, তা‌দের‌কে সংগ্রা‌মের পাশাপা‌শি প্রতি‌নিয়ত নি‌জের প্রতি‌টি ভুল‌কে চি‌হ্নিত কর‌তে হ‌বে।

লেখক: সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ