
গাজা নিয়ে জাতিসংঘের ৭২ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে যা আছে
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫
গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইজরায়েল গণহত্যা চালিয়েছে বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘ। আজ মঙ্গলবার জাতিসংঘের স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশনের ৩ সদস্যের কমিটি ৭২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে এ মন্তব্য করে।
সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান নাভি পিল্লাই বলেন, “গাজায় গণহত্যার জন্য ইজরায়েল দায়ী। গণহত্যা কনভেনশনে উল্লেখিত গণহত্যার মানদণ্ড পূরণ করে, এমন কর্মকাণ্ড ইজরায়েল সেখানে করেছে।”
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশনে সংজ্ঞায়িত ৫টি কর্মকাণ্ডের মধ্যে ৪টি ইজরায়েল করেছে। সেগুলো হলো: একটি গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা, গুরুতর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি করা, পরিকল্পিতভাবে গোষ্ঠীকে ধ্বংসের পরিস্থিতি তৈরি করা এবং জন্মরোধের পদক্ষেপ গ্রহণ।
প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট ও প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হার্জগকে সরাসরি দায়ী করা হয়েছে। এছাড়া গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের হত্যাকে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ বলা হয়েছে।
ইজরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে জানিয়েছে, কমিশনের ৩ বিশেষজ্ঞ হামাসের প্রতিনিধির মতো কাজ করছেন এবং তারা হামাসের মিথ্যাচারকে ভিত্তি করে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন, যা বহুবার প্রমাণসহ খণ্ডন করা হয়েছে।
ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, “ইজরায়েল আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে আমাদের নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হবে। এছাড়া ইজরায়েলের অর্থনীতিকে আরও স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে।”
ইজরায়েলের বিরোধী নেতা ইয়ার লাপিদ বলেছেন, “বিচ্ছিন্নতা ভাগ্য নয়, নেতানিয়াহুর ব্যর্থ নীতির ফল।”
জাতিসংঘের প্রতিবেদনের মাঝেই গাজায় আবারও স্থল অভিযান শুরু করেছে ইজরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, “গাজায় একটি তীব্র অভিযান শুরু হয়েছে। এ অভিযান ইজরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক পর্যায়।
এরই মধ্যে গাজা শহরের প্রায় ৪০ শতাংশ বাসিন্দা দক্ষিণে পালিয়ে গেছে। নিরাপদ আশ্রয়স্থল না থাকায় অনেক মানুষ বাধ্য হয়ে আল-মাওয়াসি শিবিরে পালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেখানে স্যানিটেশন, নিয়মিত পানি বা মৌলিক পরিষেবা প্রায় নেই।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও সাহায্যকর্মীরা জানিয়েছে, গাজার প্রধান শহর দখলের জন্য চলমান হামলার কারণে হাসপাতালগুলোতে জরুরি চিকিৎসা ও ওষুধের মজুত সংকুচিত হয়েছে।
আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুহাম্মদ আবু সালমিয়া বলেন, “অকাল জন্ম নেওয়া শিশুদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।”
আজ মঙ্গলবার খান ইউনিসের নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্স জানিয়েছে, গাজার ওপর ইজরায়েলি জোরপূর্বক নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্ষুধার্ত ২ শিশু মারা গেছে। ফলে অনাহারে মৃতের সংখ্যা এখন ৪২৫।
জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ সতর্ক করেছে, গাজা শহরের স্থল আক্রমণ শিশুদের দুর্ভোগ তীব্রভাবে বাড়াবে। কেননা শহরের প্রায় ৪,৫০,০০০ শিশু এরই মধ্যে আহত, ক্লান্ত ও দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি।
জার্মানি জানিয়েছে, গাজা সিটিতে ইজরায়েলের স্থল আক্রমণ সম্পূর্ণ ভুল।
আন্তর্জাতিক মানবিক দাতব্য সংস্থা অ্যাকশনএইডের সিইও হান্না বন্ড জাতিসংঘের তদন্ত কমিশনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। বন্ড যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, অবিলম্বে সমস্ত ইজরায়েলি অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ করতে হবে। না-হলে যুক্তরাজ্য এতে জড়িত থাকার ঝুঁকি নিতে পারে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনের পর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও যুক্তরাজ্যের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, গাজায় চলমান গণহত্যা প্রতিরোধ ও শাস্তি প্রদানের জন্য তারা তাৎক্ষণিক এবং সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করুক। সূত্র: আল জাজিরা