শিমুল বাশারের স্মৃতিগদ্য ‘বাস্তুচ্যুত গল্প’
প্রকাশিত : ডিসেম্বর ২৬, ২০২০
পথেঘাটে অনাদরে কত শত পাণ্ডুলিপি পুড়ে যায়! পাণ্ডুলিপি পোড়া সেই আগুনের আঁচে বসে কিছুকাল আমরা নিজেদের প্রতিবিম্ব দেখি। প্রতিবিম্বের জগতে কোনো বঞ্চনা নাই, ক্লেশ নাই, জীবনের গাঢ় ক্লান্তি নাই। অথচ ভেতর থেকে সদা জাগরূক রাখা আমার আমিটা জানি কতদূর রক্তের পথ পেরিয়ে তোমার চোখের কাছে আসা.. একটু বসে জিরিয়ে নেয়ার এই রোদ্দুর খুঁজে পাওয়া।
সাধের সাম্পানে যাই… রোদ্দুর ঝলমল করে। নদীপাড়ে ফুলবাগান। মেলাঙ্কলি মৃদু হাওয়ায় আঁচল উড়েয়ে হাঁটি। একটি দুটি ফুল কুড়িয়ে নেই। টিস্যুতে রাখি। সময় এলে নিবিড়ে বসে একদিন বিনি সুঁতোর মালা গেঁথে নেব বলে আরো ফুলের অপেক্ষায় থাকি। যেন পোড়া পৃথিবীতে ফুল কুড়াতে এসেই আমরা একে অপরের দেখা পেয়েছি। হঠাৎ ঝরে যাওয়া পাতার মতো মাহমুদ উড়ে আসে… পাশে চেয়ার টেনে বসে।
টেবিলে ফুলের সংখ্যা বাড়ে। এক টেবিলের দুটি ফুল আরো ফুলের জন্ম দেয় কি করে? এসব প্রশ্ন নিয়ে মাহমুদ আমার দিকে অবাক চোখে চেয়ে থাকে। হস ধাতুর হাঁয়ের মধ্য থেকে গমগম আওয়াজ আসে। অথচ আমি মৃদু হেসে তুলার মতো টুকরো টুকরো উড়ি। লাল গোলাপ, সাদা গোলাপের কল্পকথা আমাদের পিতামহরা সোনার সিন্ধুকে গুছিয়ে রেখে গেছে সেই কবে, আহা! আমি মাহমুদকে পৌরাণিক গল্প বলি।
বহুদিন পর ক্রিমসনে আজ সবাই আসে। মম মিষ্টি মিষ্টি হাসে। তন্বী গোমড়া মুখে বসে থাকে। জুবায়ের স্বভাবসুলভ চালাকি করে। সবজান্তা শশীর অজানা থাকে না যেন কোনোকিছুই। মা আমার চশমার গ্লাসটা শুধু ক্রমাগত ঘোলা হয়ে আসে। মেথির ধাক্কায় চশমা উড়ে ধুলায় ছিটকে পড়ে। কে যেন যতনে চোখের জলে আমার চমশার গ্লাস মুছে। মা, আমি তারে কি করে ভুলে... এই শহরে কোথায় যাই!
পৃথিবীতে শীত বাড়তে থাকে! উষ্ণতার অভাব তীব্রতর হয়। রাত গাঢ় হলে যে ঘরে ঘর নেই আমি রোজ সেদিকেই এগিয়ে যাই। হাঁটতে হাঁটতে পথের জানালা খুলি। আমার চোখে আলো আসে। স্মিত অথচ চিরস্থায়ী হাসি নিয়ে মুখে সে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। দূর আকাশের ওপাড় থেকে ঈগলের মতো ছোঁ মেরে ফটোগ্রাফখানা তুলে নেই।
বাস্তুচ্যুত গল্প হয়ে বিছানায় শুয়ে থাকে একটা সাদাকালো ফটোগ্রাফ।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও গণমাধ্যমকর্মী
























