শিল্পসাহিত্যে ইসলামি আদর্শের বিকৃতি
সামিউত তওসিফপ্রকাশিত : ডিসেম্বর ১৩, ২০২০
বাংলাদেশের সিনেমায় ইসলামি রীতিনীতির দেখা মেলে নায়কের মৃত্যুশয্যায় নায়িকার মাজারে নেচে-গেয়ে-কেঁদে নায়ককে বাঁচিয়ে তোলার মাধ্যমে। আর বাংলার মূলধারার সাহিত্য বা উপন্যাসে আমরা ধর্মীয় চরিত্র হিসেবে লালসালুর মজিদকে, বহিপীরের বহিপিরকে, হাজার বছর ধরের গনু মোল্লাকে, সুর্য দীঘল বাড়ির গেদু প্রধানকে, পদ্মা নদির মাঝির হোসেনকে এবং হুমায়ূন সাহিত্যে মৌলানা বা মৌলবিদের দেখতে পায়। এই চরিত্রগুলো কিছু ক্ষেত্রে নিষ্প্রাণ।
অনেক ক্ষেত্রেই এদের তুলে ধরা হয়— ধর্মের নামে স্বার্থ উদ্ধারে নিয়োজিত, পর্দার দোহায় দিয়ে নারী নির্যাতনকারী, মাজারের নাম করে চতুর ব্যবসায়ী, ধর্মের কথা বলে নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধিকারী। এছাড়া আরও আছে— মূলধারা সাহিত্য বা চলচ্চিত্রে মৌলভিরা দোজখের কথা বলে মানুষকে সঙ্কিত করে তোলে, কুসংস্কারকে ধর্মীয় রীতিনীতির নামে চালিয়ে দেয়। আর বাংলা টিভি বা মঞ্চ নাটকে রাজাকার চরিত্র ছাড়া আর কোথাও হুজুর চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলার প্রয়োজনবোধ নাট্যকারদের হয় না।
আমাদের মুলধারার সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে ইসলামের প্রতিফলনের এমন বেহাল দশায় আমি খুব অবাক হয় না। কারণ আমাদের দেশে এতদিন যারা সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা করে আসছে তারা আত্মস্বীকৃত ধর্মনিরপেক্ষ ছিল। তাই তাদের কাজ ছিল, ধর্মের অসঙ্গতি তুলে ধরে মানুষকে ধর্মনিরপেক্ষ করে তোলা। অপরদিকে আমাদের ইসলামপন্থি লোকজন সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে সময় বিনিয়োগ করাকে একদমই বেহুদা মনে করতো।
হ্যাঁ, স্বীকার করে নিতেই হয়, এ দেশের সহজ সরল ধর্মভীরু মানুষদের ইসলামিক বিশ্বাস ও রীতিনীতিতে কিছুটা দুর্বলতা হয়তো আছে, এবং তাদের সেই দুর্বলতাকে পুঁজি করে সেকুলাররা ধর্মকে বিকৃত করে বা ধর্মের বিকৃতরূপকে উপস্থাপনের সুযোগ পেয়েছিল। আর তাই যখনই তাদের সামনে সংশোধনের সুযোগ আসছে তারা ইসলামিক বিশ্বাস ও রীতিনীতিতে বিশুদ্ধতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কারণ, ইসলামের অবস্থান এই দেশের মানুষের রক্তে।
স্লামালাকুম যখন আসসালামু আলাইকুম হয়ে যাচ্ছে, মাজার ব্যবসা, পির পূজাকে বিদআত কুফরি বলা হচ্ছে, কুসংস্কারকে ইসলামের রীতিনীতি থেকে আলাদা করে দেয়া হচ্ছে, কোরআন-হাদিস বুঝে পড়ার আহ্বান করা হচ্ছে, সুস্থ ধারার সংস্কৃতি বিকশিত হচ্ছে, চেতনার বইমেলায় যখন ইসলামিক বই বেস্ট সেলার হয়ে যাচ্ছে, আসিফ মহিউদ্দিনদের সোশ্যাল মিডিয়া যখন আহমাদুল্লাহ, মিজানুর রহমান আযহারীদের হয়ে যাচ্ছে, রক্ষণশীল পোশাক হিজাব যখন আমাদের বোনেরা আনন্দচিত্তে গ্রহন করে নিচ্ছে, দেশকে প্রতিনিধিত্বকারী খেলোয়াড়রা মাঠে কাতারবদ্ধ হয়ে নামাজ কায়েম করছে, আলহামদুলিল্লাহ, ইনশাল্লাহ, যাযাকাল্লাহ বলা যখন আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে— তখন ধর্ম-বিদ্বেষী সেকুলাররা ‘গেল গেল, সব গেল’ বলে হাহাকার শুরু করেছে।
কারণ, ইসলামের সত্যিকার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে মানুষ প্র্যাক্টিসিং মুসলিম হয়ে যাচ্ছে। আবার ইসলাম বিদ্বেষীদের ইসলামকে কটাক্ষ করার সুযোগও কমে আসছে। অথচ এই ধর্ম-বিদ্বেষীরা তাদের হাতে থাকা প্রায় সবগুলো অস্ত্রই ব্যবহার করছে ইসলামি আদর্শের বিরুদ্ধে। শেষপর্যন্ত তাদের কারো কোনো পরিকল্পনাই ইসলামকে ধ্বংস করতে সক্ষম হবে না। কেননা, সুরা আনফালের ৩০ নম্বর আয়াতে মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা ঘোষণা করছেন, তারা পরিকল্পনা করে এবং আল্লাহও পরিকল্পনা করেন। আল্লাহ হচ্ছেন পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে উত্তম।
























