কৃষি বিল ২০২০: কিছু তথ্য ও ভারতীয় রাজনীতির স্বরূপ

পর্ব ২

শঙ্খচিল

প্রকাশিত : নভেম্বর ০৯, ২০২০

চরম দুর্দশাগ্রস্ত এই কোটি কোটি প্রান্তিক কৃষকদের এহেন দুর্দশার পেছনে কারণ কি? যেখানে বর্তমানে দেশের ৭৩% সম্পদ ১% লোকের হাতে। ২০১৮ সালে বেকারের হার ছিল গ্রামীণ ৭.৩৭% ও শহরে ৯.৭০%, মোট ৭.৭৮%। নোট বন্দির পর এযাবৎ দেশে বেকারত্বের হার ৪৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। যুবদের বেকারত্ব ১৩% থেকে বেড়ে ২৭% হয়েছে। নারীদের বেকারত্ব ৩ গুণ বেড়ে ১৭.৪% হয়েছে।

স্টেট ব্যাংক অফ ইণ্ডিয়ার মতে, ২০২০ সালে ১৬ লক্ষ অতিরিক্ত বেকারের সম্ভাবনা প্রকাশ পেয়েছে। ২০১৭-র ৪০.৭ কোটি কর্মরত ভারতীয়র সংখ্যা ২০১৮- এ ৩৯.৭% নেমে বেকার দাঁড়িয়েছে ৩৭.২%। ২০১৬-এ লেবার পার্টিসিপেশন রেট ৪৮% নোটবন্দির পর ৬% কাজ হাড়িয়ে নেমে দাড়িয়েছে ৪২.৮% এ। দেশের ৮২% পুরুষ ও ৯২% নারী ১০ হাজার টাকার অনেক কম বেতনে কাজ করতে বাধ্য হয়। ৯০% কর্মচারি জাতীয় পে-কমিশন নির্ধারিত সামান্য বেতনও পায় না।

যে দেশে আজও গরিব জনগণকে টিকিয়ে রাখতে ন্যূনতম একশো দিনের কাজের ব্যবস্থা কর্মসংস্থান ও বেকারত্বের এক বিকালাঙ্গ অবস্থার বাস্তব ছবি, সেখানে ক্রমবর্ধমান এই বিপুল বেকারত্বের সুযোগে সস্তা শ্রমের বাজারে মরতে আসার চেয়ে কৃষিতে মার খাওয়া কৃষকরা আত্মহত্যাকেই অনেক সহজ মনে করে। যা ছাড়া আর একটিই মাত্র পথ খোলা আছে তাদের সামনে। তা হলো বিকল্পের জন্য সংগ্রাম।

দুর্ভাগ্য, বহু সংগ্রাম থাকলেও অক্ষম কৃষকদের প্রকৃত রাজনৈতিক ক্ষমতার আধার ছাড়া যে কোনো বিকল্পের সংগ্রামই তাদের জন্য কাঁঠালের আমসত্ব হতে বাধ্য। প্রচলিত ব্যবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতাকে অক্ষুণ্ণ রেখে বরং সেই ক্ষমতারই বুড়ি ছোঁয়ার সঙ্কীর্ণ স্বার্থের দলাদলিতে তা এরই মধ্যে যথেষ্ট প্রমাণিত। তাই তথাকথিত বিরোধীতার ভান করে সংসদের বাইরে হইচই করে উক্ত বিলটিকে পাস হতে একপ্রকার সহযোগিতা করে সংসদীয় বিরোধিরা।

জনগণের নজর ঘোরাতে অচিরেই `হাথরস` দলিত কন্যার নির্মম ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা নিয়ে তারা ও প্রচার মাধ্যমের অতি সক্রিয়তা তাই প্রমাণ করে। কেননা ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে প্রতিদিন ৯১টি ধর্ষণ অর্থাৎ প্রতি ১৫ মিনিটে একজন নারী ধর্ষণের শিকার হয়, সেখানে কৃষিবিলের বিরুদ্ধে কৃষক সংগ্রামের বদলে হঠাৎই হাথরস নিয়ে অতিসক্রিয়তার কারণ কি?

বিতর্কিত মনে হলেও এ ব্যপারে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি মার্কণ্ডেয় কাটজুর মন্তব্য আলোচনার দাবি রাখে। জনগণের বিরামহীন সমস্যা ও কৃষকদের লাগামহীন আত্মহত্যার অব্যাহত ধারায় সে সত্য এড়িয়ে যাওয়া ক্ষমাহীন ভণ্ডামি। সুতরাং প্রচলিত ব্যবস্থার মধ্যেই খুঁজতে হবে কৃষিজীবীসহ সমগ্র খেটে খাওয়া মানুষের সমস্যার উৎসকে। চলবে...