
গুনিন চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য
গুনিন চলচ্চিত্রে আমি আমার শৈশব দেখে আসলাম
রেজা ঘটকপ্রকাশিত : মার্চ ২৯, ২০২২
আদিম বাংলাদেশের কৃষিজীবী একটি গ্রামের গল্প ‘গুনিন’। একেবারে আমাদের অন্তজ শ্রেণির গল্প। হাসান আজিজুল হকের একটি ছোট গল্প ‘গুনিন’, যেখানে বাংলাদেশ বা পূর্ববঙ্গের আদিম গ্রাম সমাজ আর সেই সমাজের মানুষের মনস্তত্ব, তাদের সহজাত প্রবৃত্তি, প্রেম-প্রতারণা, কৃষিজীবীতা, বিশ্বাস-অবিশ্বাস, আচার-অনুষ্ঠান আর নিত্যদিনকার সহজাত ক্যাচাল হলো যার বিশয়-আশয়।
সাধারণভাবে আমাদের গ্রাম বাংলার সমাজে চিকিৎসা বিদ্যার অপ্রতুলতার কারণে একসময় এই গুনিনদের খুব কদর ছিল। মানুষের যে কোনো ধরনের অসুখবিসুখ কিংবা রোগে শোকে এই গুনিনদের সবাই তোয়াজ করতো। জনশ্রুতি হলো, এই গুনিন কয়েক প্রকারের জিন-ভূত লালন পালন করেন। আর এই জিন-ভূত দিয়েই গুনিন গ্রামের মানুষদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে নিজের সংসার চালান। গ্রামের কেউ গুনিনের প্রকৃত বয়স মনে করতে পারে না।
হাসান আজিজুল হকের ছোটগল্পের শতবর্ষী বয়সী এই গুনিনকে ঘিরেই ছবি বানালেন নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম। গুনিন ছবিটি হলে গিয়ে দেখলাম। ব্যক্তিগতভাবে ছবিটি আমার ভালো লেগেছে। কারণ ছবির ঘটনা পরম্পরা আমার খুব পরিচিত। আমাদের দক্ষিণবঙ্গের গ্রামীণ সমাজে গুনিনের মতো ব্যক্তিদের ছোটবেলায় আমি নিজেই দেখেছি। তাই চট করেই আমি ফিরে যেতে পেরেছি আমার শৈশবের দিনগুলোতে। গুনিন ছবিতে আমি আমার শৈশব দেখতে পেয়েছি।
‘মানুষের ঘাড়ে জিন-ভূত আছে’ এই দ্বৈবতত্ত্ব বিশ্বাস করার মানুষ আমি আমার পরিবারেই দেখেছি। আমার এক আত্মীয়ের বাড়িতে মাদ্রাসা ছিল। সেখানে বার্ষিক তিন দিনের ওয়াজ মাহফিল হতো। আমাদের বাড়ির মা-চাচীরা সেই মাহফিলে নিয়ম করে যেতেন। আত্মীয় বাড়িতে মাহফিল উপলক্ষ্যে বড়দের সাথে তখন আমার মতো লিটিপুটদেরও যাবার সুযোগ হতো।
ওই মাদ্রাসা বাড়ি থেকেই আমি প্রথম জিন-ভূত বিষয়ক অনেক নতুন নতুন গল্প শুনলাম। ওই মাদ্রাসা যিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন তার তিনটি বউ। তার ছোট বউয়ের ছোটপুত্র ছিল আমাদের বয়সী। আমাদের খেলার সাথী কিন্তু খুব কম কথা বলতো। যে কিনা আমাদের সাথে ফুটবল খেলেছে, হাডুডু খেলেছে, বলেশ্বরে সাঁতার কেটেছে। কিন্তু জিন-ভূত বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করলে চুপচাপ থাকতো। ওদের বিশাল বাগান বাড়িতেই সেই জিন-ভূতদের অবাধ আশ্রম।
ওদের বাড়ির ভেতরে এই জিন-ভূতের কারণে ওই গ্রামের মানুষজন ভয়ে কেউ যেত না। প্রচুর গাছপালা ঘেরা সেই বাড়িতে দিনের বেলায়ও গা ছমছম করা একটা রহস্যময় ভূতেরু পরিবেশ। এরকম পরিবেশ নিয়ে মানুষের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই একটা ভয় কাজ করে। স্থানীয় জনশ্রুতি হলো- মাওলানা সাহেব তিন বউ ছাড়াও তিনটি জিন লালন পালন করেন। দিনের বেলায় এই জিনগুলো মাওলানার বিশাল দালানবাড়ির কোনো কক্ষে থাকে। আর রাতের বেলায় জিনগুলো এই গোটা বাগান এলাকা জুড়ে অবাধ বিচরণ করে।
যে কারণে ওদের বাড়ির পাশ থেকে দিনের বেলায়ও ভয়ে কেউ একা হাঁটতো না। মাওলানা সাহেব মারা যাবার পর তার বড় বউয়ের বড় পুত্র মাদ্রাসার দায়িত্ব নিয়েছেন। পাশাপাশি তার বাবার সেই জিনগুলোর দায়িত্বও তিনি পৈত্রিকসূত্রে পেয়েছেন। মাঝে মাঝে এই বাগানের পাশে গ্রামের উঠতি মেয়েদের জিনে ধরার গল্প সেখানে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ছিল।
তো একবার এক মাহফিলের সময় সেই আত্মীয় বাড়িতে আমরা গেলাম। সেই আত্মীয় বাড়ির সীমানার বাইরেই মাওলানার বাড়ি, বিশাল বাগান, একেবারে সামনের দিকে বিশাল ময়দান আর তার সামনে মাদ্রাসা। নদীর সমান্তরাল সেই বাগান বাড়িটা সত্যি সত্যিই খুবই সুন্দর। আমরা সেই মাদ্রাসার সামনের মাঠে অনেক ফুটবল খেলেছি। মাদ্রাসার সামনের নদীতে অনেক সাঁতার কেটেছি।
তো মাহফিলের সময় সেই আত্মীয় বাড়িতে যাওয়া আমাদের বয়স্ক পুরুষ লোকেরা নিজেদের খুব ওয়াজভত্ত প্রমাণ করতে চলে যেতেন সরাসরি মাহফিলের ময়দানে। দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পরপর একটু পান তামুক খেয়েই তারা সবাই চলে যেত ময়দানে। সেখানে আছরের নামাজ জামায়াতে পড়ার জন্য আমাদের লিলিপুটদের ওপর সবাই তখন জোর খাটাতো।
আত্মীয়বাড়ির আবদার রক্ষা করতে আমাদেরও তখন আছর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সেই মাহফিল ময়দানে থাকার একটা অলিখিত আইন চালু ছিল। সেই আইন ভঙ্গ করা মানে আত্মীয়বাড়িতে পরের বেলার খাবার খাওয়া অনেকটা চক্ষুলজ্জা আর সকলের গালমন্দ খাওয়ার ব্যাপার স্যাপার।
আর মাহফিলের সময় সেই আত্মীয় বাড়ির ভেতরে থেকে যেত আমাদের মা-চাচীদের মেয়েলোকদের দল। তো আমার অভ্যাস ছিল সবসময় মাগরিবের পরপর ছোট্ট একটা দল পাকিয়ে এই মাহফিল স্থান ত্যাগ করা। তখন আমাদের সেই মাহফিল থেকে দলছুট দলের প্রধান উদ্দেশ্য থাকতো মাওলানার সেই জিনগুলোর দর্শন পাওয়া। কারণ সবাই বলতো, মাহফিলের তিন দিন সেই জিনগুলো সুন্দরী মেয়েলোক সেজে বাগানের কোনো গাছে অবস্থান করে। আর এই তিন দিন সে মানুষের কোনো ক্ষতি করে না। বরং মানুষের সাথে জিনেরা তখন কথাও বলে।
জিনের সাথে কীভাবে কথা বলা যায় সেই প্রবল ইচ্ছা বাস্তবায়নের জন্য আমরা কতিপয় ইচরে পাকা বালক ওরকম এক মাহফিলের সময় মাওলানার বিশাল বাগান বাড়ির ভেতরে একটা কায়দামত আস্তানা গেড়েছিলাম। আত্মীয়বাড়ি থেকে আমরা খুব গোপনে সেখানে চাটাই, বিছানা, বালিশ নিয়ে আমাদের তিন দিনের একটা অবাধ বসতি গেড়েছিলাম। গভীর রাত পর্যন্ত আমরা সেই বাগানে অবস্থান করতাম। আড্ডা দিতাম, তাস খেলতাম। কিন্তু কখনোই আমরা সেই কাঙ্ক্ষিত জিনের দেখা পাইনি।
তখন আমার মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি আসলো। সবাইরে কইলাম চল আমরা নিজেরাই জিন সেজে ওদের ভয় দেখাই। আত্মীয়বাড়িতে সম্পর্কে আমাদের এক ফুফু তখন বাইরের চুলায় রাতের বেলায় চিতোই পিঠা বানাচ্ছিলেন। পিঠা হয়ে গেলে সাজ থেকে কাঁচি দিয়ে পিঠা কুড়িয়ে একটি খেজুরের রসের পাত্রে রাখছেন ফুফু। এমনিতে ফুফুর সামনে বসে আমরা গরম গরম কিছু পিঠা খেয়েছি।
ফুফু পিঠা হয়ে গেলে এক পশলা আমাদের খেতে দিতেন আর পরের পশলা সেই রসের হাড়িতে রাখতেন। তো আমরা চোখেচোখে গবেষণা করে বের করলাম যে, ফুফু যেহেতু আমাদের পিঠা খাইয়ে বিশাল উপকার করছেন, তো ফুফুকেই ভিক্টিম বানাতে আমাদের জন্য একেবারে মাছভাতের মতো সোজা। ইশারায় ইশারায় আমাদের পরিকল্পনা এক্কেবারে পাক্কা হয়ে গেল। সবাই একেবারে পাক্কা খেলোয়াড়ের মতো যার যার দায়িত্ব চোখে চোখেই বুঝে নিল।
প্রথমে আমরা ঘর থেকে ফুফুর মায়ের একটা সাদা শাড়ি সংগ্রহ করলাম। চিকন বাঁশের লম্বা একটা গোলপোস্টের মত বার ছিল ওদের পুকুরের পাশে। ওই বাঁশে বাড়ির জামাকাপড় শোকানে হয়। সেই বাঁশ ছুটিয়ে বাঁশের মাথায় ফুফুদের চাল মাপা ছোট্ট বেতের সের ভালো করে বেঁধে নিলাম। দাদীর সাদা শাড়ি সেই বেতের সেরের সাথে পেঁচিয়ে আমরা জিনের মাথা বানালাম। আর বাঁশ বরাবর সাদা শাড়ি এমনভাবে মেলে দিলাম যে, জোছনা রাতে দূর থেকে দেখলে মনে হবে ওটা নিশ্চিত বিশাল সাইজের কোনো শক্তিশালী জিন।
ফুফুর চারপাশেই আমাদের লিলিপুট বাহিনীর অন্যরা তখন বসে আছে। তারপর হাতে বানানো সেই জিন একেবারে ফুফুর পেছন থেকে মাথার ওপরে নেমে বললো- পিঠা খাবো! পিঠা খাবো! পিঠা খাবো!
গলার স্বর পরিবর্তন করে আমরা কয়েকবার `পিঠা খাবো` বলার পর ফুফুর মাথায় আস্তে করে একটু স্পর্শ দেওয়া মাত্রই বিদ্যুৎবেগে কাজ হলো। চিৎকার করে ফুফু অজ্ঞান হয়ে গেলেন। আমাদের লিলিপুটদের একটা অংশ এই সুযোগে রসের পিঠার হাড়ি নিয়ে মাওলানার বাগানে আমাদের অস্থায়ী বসতির উদ্দেশ্যে ছুট। আরেক দল ভেতর বাড়িতে দৌড়। এটা প্রমাণ করতে যে জিনে ফুফুর রসের পিঠার হাড়ি সত্যি সত্যিই জিনে নিয়ে গেছে। আর ফুফু অজ্ঞান হয়ে পড়েছেন। তাকে সুস্থ করতে বড়দের সেবাশুশ্রুষা দরকার।
কয়েক মিনিটের মধ্যে গোটা বাড়িতে একটা হুলস্থুল লেগে গেল। সুরা কালাম পড়ে ফুফুকে সোনা রূপার পানিতে ফু দিয়ে চোখেমুখে ছিটিয়ে তাজা করা হলো। ফুফুর জ্ঞান ফেরার পর বাড়ির ছোটদের ওপর বাড়ির বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারী হলো। আমরা সুযোগমত মাওলানার বাগানে গিয়ে আরামসে তখন রসের চিতোই পিঠা খাওয়া শুরু করলাম। আহা জিনের পিঠা খাওয়া!
মাওলানার বাগান বাড়িতে এভাবে আমরা তিন দিনের অস্থায়ী বসতি গেড়ে হাতে নাতে কোনো জিনের অবস্থান দেখতে না পেরে, আমরা নিজেরাই জিনের চরিত্রে অভিনয় করে তখন গোটা পাড়ায় একটা চমক লাগিয়ে দিয়েছিলাম। সারাদিন ওই বাগানে আমরা তখন বসে বসে তাস খেলতাম আর রসের পিঠা খেতাম। পাশাপাশি মাওলানার বিশাল বাগানের নানান কিসিমের ফলফলাদি পেরে খেতাম।
আমরা যেদিন আত্মীয় বাড়ি থেকে নিজেদের বাড়িতে আসতাম, তার আগেই অবশ্য দাদীর চাটাই, বিছানা, বালিশ আমরা আবার যথাযথভাবে দাদীর ঘরেই রেখে আসতাম। যাতে জিনের ভয়টা ওই এলাকায় ভবিষ্যতেও চালু থাকে। বাস্তবে জিনের চরিত্রে অভিনয় করে আমরা তখন নিজেদের মধ্যে এক একটা হিরো সাহসী বীর পালোয়ান!
সাধারণত এধরনের বাগান বাড়িতে সবচেয়ে বেশি ঘটে ধর্ষণের ঘটনা। গ্রামের সুন্দরী মেয়েদের এরকম বাগানে নিয়ে বলৎকার করে গ্রামের কিছু পাষণ্ড পুরুষেরা। আর তারাই এই জিন-ভূতের গল্প ছড়ায়। আর এরকম ঘটনার সাথে যুক্ত থাকে মাওলানার পানি পড়ার ব্যবসা। ছোটবেলায় জিন-ভূত বিষয়ক ওই ঘটনার বাস্তব সাক্ষি হিসেবে এটাই আমার মনে হয়েছে। বাস্তবে জিন-ভূত বলে গ্রামবাংলায় যা কিছু প্রচলিত সবকিছুই ভাওতাবাজি।
ভাওতাবাজি করে সংসার চালানো বিনা পুঁজির এরকম ব্যবসা করতেন গুনিনরা। আর তাই গুনিনরা একটা আজব কায়দার ভান ধরতেন। লম্বা চুল দাড়ি, আলখেল্লা, তাবিজ কবোজ, লাল সুতা, একটা আলাদা নিজস্ব ঘর, কিছু মেয়ে লোক বান্দি, একটা কথিত লাল সালুর গল্প ফেঁদে এসব গুনিনরা ব্যবসা করতেন। এসব গুনিনদের ধর্মীয় ব্যাপারে সবচেয়ে কঠোর নিয়ম কানুন পালন করতে দেখা যায়।
আজগুবি মন্ত্র পড়ে পানি পড়া দেওয়া, সুতা পড়া দেওয়া, তাবিজ দেওয়া, কিছু নিয়ম বাতলে দেওয়া, ইত্যাদি নানান কিসিমের ঘটনা ঘটিয়ে গুনিনরা আরামসে সংসার চালাতেন। আর গুনিনদের বাড়িটা থাকতো সবসময় গ্রামের একেবারে প্রান্তিক বা একটু বিচ্ছিন্ন বাড়ি। সেই বাড়িটা হতো একটু ভূতেরু পরিবেশের। প্রচুর গাছপালা ঘেরা ছায়াময় মায়াময় এক জিন-ভূতের স্বর্গ বাড়ির মতো। সাধারণত দলবদ্ধ ছাড়া কেউ গুনিনদের বাড়ির দিকে যেতে চায় না।
নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম `গুনিন` ছবিতে আমাদের সেই চির পরিচিত গ্রামীণ কুসংস্কারের এক গল্প দেখান ক্যামেরায়। যেখানে রাবেয়া ও রজবের প্রেমের কাহিনীকে ঘিরে গল্পের বিস্তার ঘটে। গ্রামের বাইরে শতবর্ষী বয়সী এক গুনিনের জিন-ভূত তাড়ানোর একটা আস্তানা। সেখানে উড়তে থাকে লাল কাপড়ের নিশান। সেই গ্রামের রক্ষণশীল সমাজের মুসলমান এক নারী রাবেয়া।
একই সাথে যার প্রেমে পড়ে গুনিনের তিন নাতি এবং স্বয়ং গুনিন। কিন্তু রাবেয়াকে পাওয়ার প্রতিযোগিতায় নামে আদতে গুনিনের ছোট দুই নাতী আলী ও রজব। একেবারে গ্রামীণ প্রচলিত সেই কুহকী বা ওঝার গল্পকে ছবিতে প্রতিষ্ঠা করেন গিয়াস উদ্দিন সেলিম। যারা জিন-ভূতের প্রচলিত এধরনের গল্প জানে না, তাদের ছবির ঘটনা পরম্পরা বুঝতে একটু অসুবিধা হয়তো হবে। ম্যাজিক রিয়ালিজমটা তারা ঠিকঠাক ধরতে পারবে না। আদতে নির্মাতা সেলিম একটা ম্যাজিক রিয়ালিজমের গল্প দেখান আমাদের।
কারণ কখন রজব আর আলীকে জিনে ধরে নিয়ে যায়, আর কখন যে তারা বাস্তবের চরিত্র, এসব জায়গায় দর্শক কিছুটা বিভ্রান্ত হতে পারে। কিন্তু আমি যেহেতু জিন-ভূতের চরিত্রে ছোটবেলায় অভিনয় করা মানুষ, তাই নির্মাতা সেলিমের সবগুলো কৌশল চট করেই ধরে ফেলেছি আমি। এককথায় দুর্দান্ত। আই ক্যান গো ব্যাক টু মাই চাইল্ডহুড টাইম।
ছবিতে গুনিন চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন আজাদ আবুল কালাম। রাবেয়া চরিত্রে পরীমনিও বেশ সুন্দর সাবলিল অভিনয় করেছেন। রজব চরিত্রে শরিফুল রাজ দারুণ চমক দেখিয়েছেন। এছাড়া অন্যান্য চরিত্রে মোস্তফা মনওয়ার, ঝুনা চৌধুরী, ইরেশ যাকের, শিল্পী সরকার অপু`র অভিনয় সুন্দর।
গুনিন ছবিতে কামরুল হাসান খসরুর ক্যামেরার কাজ ভালো লেগেছে। ইমন চৌধুরীর করা মিউজিক ও ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড মনে রাখার মতো। বিশেষ করে কাজল দেওয়ান ও আলেয়া বেগমের গাওয়া `আমি ঘোমটা খুলে বদন তুলে, দেখেছিলাম চাইয়াগো, দেখেছিলাম চাইয়া, আমার রসের নাগর যায় নাচিয়া, নইদার বাজার দিয়াগো` গানটি নির্মাণে ইমন দারুণ দক্ষতা দেখিয়েছেন। শরীফ আহমেদের সম্পাদনাও মনে রাখার মতো। গুনিন সবাই সিনেমাহলে গিয়ে উপভোগ করুন। উপভোগ করার মতো ছবি।
অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম ও গুনিন টিমকে। বাংলা সিনেমায় এধরনের গ্রাম বাংলার কাহিনী নিয়ে আরো সুন্দর সুন্দর চলচ্চিত্র নির্মিত হলে আমাদের সিনেমার সুদিন একসময় নিশ্চয়ই ফিরে আসবে। গুনিন ছবি দেখলে আপনি গ্রামীণ শৈশবের দিনগুলোতে ফিরে যেতে পারবেন। জয়তু গুনিন, বাংলা সিনেমা অমর রহে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা