‘দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল’

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : মার্চ ২৩, ২০২৩

দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বৃহস্পতিবার ‘বিশ্ব আবহাওয়া দিবস ২০২৩’ উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে তিনি এ মন্তব্য করেন।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস এবং আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।”

 

তিনি আরও বলেন, “১৪ বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক প্রভাব এবং ঘূর্ণিঝড়, বজ্রপাত, জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টি ও খরাসহ অন্যান্য চরম আবহাওয়ায় আগাম সতর্কতা এবং আগাম পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।”

 

শেখ হাসিনা বলেন, “প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আজ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে রোল মডেল। বিজ্ঞানভিত্তিক আবহাওয়া ও জলবায়ুর উন্নততর পূর্বাভাস প্রদানের মাধ্যমে `রূপকল্প-২০৪১` বাস্তবায়নে ‘বাংলাদেশ আঞ্চলিক আবহাওয়া ও জলবায়ু সেবা প্রকল্প (কম্পোনেন্ট-এ)` চলমান রয়েছে।”

 

তিনি আরও বলেন, “প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আবহাওয়া পরিষেবার মান বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা-ই আসুক না কেন তা মোকাবিলার জন্য সবাইকে সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।”

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগজনিত ক্ষয়ক্ষতি প্রশমনকে প্রাধান্য দিয়ে ১০০ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির কারণে বিশ্বে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মানবসৃষ্ট দুর্যোগও বাড়ছে।”

 

তিনি আরও বলেন, “দুর্যোগের আগাম সতর্কবার্তা ও দৈনন্দিন আবহাওয়া বার্তা জানতে মোবাইলে ‘১০৯০’ নম্বরে টোল ফ্রি সার্ভিস চালু করা হয়েছে। আমাদের সরকার কৃষি-আবহাওয়া পূর্বাভাস ও পরামর্শ সেবার মান উন্নয়নে সাতটি নতুন কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার স্থাপনসহ কৃষি আবহাওয়া বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করেছে।”

 

শেখ হাসিনা বলেন, “পাঁচটি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার, নয়টি ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র এবং ১৪টি নদী বন্দরে নৌ-দুর্ঘটনা প্রশমনের লক্ষ্যে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া স্থাপন করা হয়েছে তিনটি স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন।”

 

তিনি আরও বলেন, “দুটি আধুনিক ডপলার রাডার স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। দেশের ১৩টি উপকূলীয় জেলায় স্যাটেলাইট টেলিফোনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গৃহীত এ সকল পদক্ষেপ জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখছে।”

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “১৯৭০ সালে সংঘটিত স্মরণকালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এই দুর্যোগের বিষয়ে আগাম কোনো সতর্কতাই দেয়নি তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সতর্কবার্তা প্রদানের লক্ষ্যে কক্সবাজার ও পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় দুটি রাডার স্থাপন করেন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।”

 

তিনি আরও বলেন, “১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাসে ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি)` গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘূর্ণিঝড় থেকে জনগণের জানমাল রক্ষায় সেই সময় ১৭২টি উঁচু মাটির কিল্লা তৈরি করেন, যা ‘মুজিব কিল্লা` নামে পরিচিত।”

 

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার ১৯৩টি সদস্য-রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব আবহাওয়া দিবস- ২০২৩` পালন করা হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘প্রজন্মান্তরে আবহাওয়া, জলবায়ু ও পানির ভবিষ্যত’।