লেখকের হাতে ‘তৃষ্ণাকুমারী’ তুলে দিচ্ছেন প্রকাশক পাপিয়া জেরীন

লেখকের হাতে ‘তৃষ্ণাকুমারী’ তুলে দিচ্ছেন প্রকাশক পাপিয়া জেরীন

প্রকাশিত উপন্যাস ‘তৃষ্ণাকুমারী’ থেকে এক টুকরো

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২০

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০ এ প্রকাশিত হয়েছে আবু তাহের সরফরাজের লোকজ কিস্‌সাভিত্তিক উপন্যাস ‘তৃষ্ণাকুমারী’। প্রকাশ করেছে ‘বৈভব’। প্রচ্ছদ এঁকেছেন, পাপিয়া জেরীন। বইমেলার প্রথম দিন থেকেই বইটি মিলছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বৈভবের ৭১৮ নম্বর স্টলে। ৭২ পৃষ্ঠার এ বইটির দাম ৩৫০ টাকা। ‘তৃষ্ণাকুমারী’র প্রথম অধ্যায় ছাড়পত্রের পাঠকদের উদ্দেশে:

ফুল তুলছে মালিনী।
ভোর হচ্ছে। রোদের নরম রঙ আস্তে-ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে বাগানে। হাওয়া বইছে। কাঁপছে পাতা। কাঁপছে ফুল। লাল নীল হলুদ আর নানা রঙের ফুল নরম রোদের রঙ মেখে নিয়ে ঝলসে দিচ্ছে সোনালি ভোর। হাওয়ায় হাওয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে সেই ফুলের গন্ধ। এ গন্ধ পৌঁছে যাচ্ছে রাজবাড়ির প্রতিটা কক্ষে। কেননা খুব ভোরেই কক্ষের জানলাগুলো খুলে দেয় দাসী। রাজার এ রকমই আদেশ। ভোরের প্রথম আলোয় ঘুম ভাঙে তার। তারপর রানিকে সঙ্গে নিয়ে বাগান ঘুরতে বের হন। প্রতিদিন একই নিয়ম।

প্রাচীর ঘেঁষা গাছপালার ওপর ঘুমভাঙা পাখিরা খুব ডাকছে। উড়ে উড়ে এডাল থেকে ওডালে ছুটছে। আনন্দ লেগে গেছে চারদিক, যেন ভোরের উৎসব।
আর সবই শান্ত। পাতার আড়ালে এক একটা ফুল অহংকারীর মতো ফুটে রয়েছে। মালিনী সেই অহংকার ভেঙে দিয়ে ছিঁড়ে নিচ্ছে তাদের আর রেখে দিচ্ছে হাতের ডালিতে। ডালি প্রায় ভরে এসেছে। ফিরে যাবে ভাবছে এমন সময় চোখ পড়ল পুকুরঘাটে। রাজা আর রানি হাঁটছেন পাশাপাশি। ডালি হাতে বাগান থেকে বেরিয়ে এলো মালিনী। দাঁড়ালো এসে রাজা আর রানির সামনে। মাথা নোয়ালো একটু।
বাগানের শ্রী তো আগের মতো আর দেখছি না। ব্যাপার কি বলতো শুনি। গোপালটা খুব ফাঁকি দিচ্ছে বুঝি আজকাল?
রাজার কথায় একটু ভড়কে গেল মালিনী। চোখ না তুলেই বলল, আজ্ঞে না রাজা মশাই, তার খুব জ্বর এয়েছে। বিছনা ছেড়ে উঠতে পারে না। কিছু মুখেও তুলতে পারছে না।
সে কী কথা, কবে আবার অসুখ করল ওর।
এই সপ্তা ধরেই তো জ্বর চলছে।
আমাকে বলবি না তুই! ঠিকাছে, সন্ধেয় একবার আসিস, আমি রাজবদ্যিকে বলে দেব। দেখি এখন কি কি ফুল পেয়েছিস আজ।

মালিনী তার হাতের ডালি বাড়িয়ে ধরল। রাজা ডালির ভেতর থেকে আরসব ফুলের ছোঁয়া বাঁচিয়ে একটা লাল গোলাপ তুলে নিলেন। তারপর বললেন, ঠিকাছে তুই তবে যা। চাইলেন রানির দিকে।
মালিনী যেমন এসেছিল, চলেও গেল তেমনই চুপচাপ।
রাজা আর রানী হাঁটতে হাঁটতে চলে এলেন বাগানে। বাগানের মাঝ বরাবর পেতে রাখা বিষ্ণু মূর্তির বেদিতে বসলেন মুখোমুখি। পাতার আড়াল ছেড়ে পাখিরা বেরিয়ে পড়েছে বাইরে। ছুটোছুটি করছে এখন তারা খোলা আকাশে। রোদের রঙ আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। লুটোপুটি খাচ্ছে রাজা আর রানিকে ঘিরে। রানির কপালের ওপর ছড়িয়ে পড়া কিছু চুল উড়ছে হাওয়ায়।
উঠে দাঁড়ালেন রাজা।

রানী তাকালেন রাজার মুখের দিকে। তারপর হাসলেন। রাজার মুখেও হাসি ফুটে উঠল। কপালের ওপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে নিতে নিতে রানি বললেন, এটা কী পাগলামি আপনার!
হোক পাগলামি। রানির মুখের দিকে চেয়ে আছেন রাজা।
এটা তো পাপ।
কে বলেছে পাপ, কোনও পাপ নেই এতে।
পুজোর জন্যে তোলা ফুল কেবল ঠাকুরেরই প্রাপ্য। সে ফুল অন্য কাউকে দিলে যদি অমঙ্গল হয়? ঠাকুর যদি বিমুখ হন?

এসব একদম ভাববে না রানি। ঠাকুরের যা প্রাপ্য তাকে তা আমি দেই। সেখান থেকে একটা ফুল যদি আমার রানিকে দেই, এতে এমন কিছু মনে নেবেন না ঠাকুর। রাজা এগিয়ে এসে রানির মাথার ঠিক ওপরে ফুলটা ছুঁয়ে দিয়ে রানির সামনে ধরলেন।
নাও, এটা গ্রহণ করো।
রানি নিলেন। রাজা এবার রানির চিবুক ধরে বললেন, কেবল ঠাকুর তো নয়, তুমিও আমার পূজনীয় রানি। কতবার বলব তোমায়, তোমাকে পুজো করাও যে আমার কর্তব্য।
কেঁপে উঠল রানির ঠোঁট, তবু, তবু ভয় হয় আমার। যদি আপনার মনোবাঞ্ছা পূরণ না হয়। যদি ঠাকুর মনে কিছু নিয়ে ফেলেন।

রানির কাছ ঘেঁষে বসলেন রাজা। রানির একটা হাত নিজের হাতে তুলে নিয়ে বললেন, আমার জীবনে কোনও পাপ নেই রানি। এই খাগড়া মুল্লুকের সবাইকে আমি ভালোবাসি। আমার চরম শত্রুও বলতে পারবে না, আমি কারও কোনও অনিষ্ট করেছি। তবে কেন ঠাকুর আমাকে পূর্ণ করবেন না রানি? এসব তুমি ভেবো না। ঠাকুর নিশ্চয়ই মুখ তুলে চাইবেন আমাদের দিকে।
তবু আমার ভয় রাজা। আমি কী এমন যে, আমাকে ঠাকুর পুজোর ফুল দিতে হবে!
কী হয়েছে আজ তোমার রানি? প্রতিদিনই তো ঠাকুরকে দেবার আগে তোমাকে পুজোর ফুল দেই, কই এভাবে তো বলোনি।
গত রাত্রে আমি ঠাকুরকে স্বপ্নে দেখেছি।
চমকে ওঠেন রাজা। হাত ছেড়ে দিয়ে রানির চোখে তাকালেন। জিগেশ করলেন, কী দেখলে?
একটি ফুল।
কি ফুল?
জানি না।
রং কেমন?
জানি না।
ফুল দেখলে কেবল?
হ্যাঁ। দেখলাম, ঠাকুর আমার শিথানের থেকে একটা ফুল তুলে নিয়ে চলে যাচ্ছেন। আমি কতবার করে ডাকলাম তাকে, তিনি শুনলেনই না। কোনও দিকে না তাকিয়ে চুপচাপ চলে গেলেন।
তারপর?
তারপর আবার কী, ঘুম ভেঙে গেল। দেখলাম আপনি ঘুমোচ্ছেন, তাই আর জাগালাম না।
এতক্ষণ বললে না কেন?
ভাবছিলাম। আচ্ছা কেন দেখলাম এ রকম স্বপ্ন, মানে কী এর?
কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন রাজা রানির মুখের দিকে। কথা বললেন না কোনও। তার মুখে গভীর চিন্তার ছাপ।
রানি হঠাৎ করেই হাত ধরলেন রাজার। মুখটা একটু নামিয়ে এনে বললেন, কী ভাবছেন রাজা?
চমক ভাঙে রাজার। ভাবছি রাজজ্যোতিষীকে ডেকে ব্যাপারটা খুলে বললে কেমন হয়।
কিন্তু...
কী?
বলাটা কি ঠিক হবে, এমনিতে প্রজাদের নানা ধারণা আপনার সম্বন্ধে। স্বপ্নের ঘটনা যদি পাঁচকান হয়ে যায়।
তুমি ভুলে যাচ্ছ রানি, সে আমাদের রাজজ্যোতিষী। পাঁচকান হবার প্রশ্নই ওঠে না।
না থাক, এমন তো কোনও গুরুতর ব্যাপার নয়।
তুমি এত ভাবছ কেন?

আমার ঠিক ভালো লাগে না। আপনাকে সবাই আঁটকুড়ে রাজা বলে এমনিতেই ঠাট্টা-মশকরা করে। আবার এসব নিয়ে যদি নানা কথা ছড়ায়।
আচ্ছা, ঠিকাছে। তুমি যখন চাচ্ছ না, তখন না-হয় থাক রাজজ্যোতিষী। তবে কেন দেখলে এ রকম স্বপ্ন, ভাবনা যে রয়েই গেল।
ঠাকুর যা করবেন নিশ্চয়ই আমাদের ভালোর জন্য করবেন। আপনি অত চিন্তা করবেন না।
কিন্তু রানি...
চলুন উঠি, আপনার পূজার সময় হয়ে গেছে। রোদ বাড়ছে, দেখেছেন?
ও হ্যাঁ, চলো। রাজা উঠলেন। রানিও। হাঁটতে হাঁটতে বাগান পেরিয়ে এলেন তারা। রানি গেলেন নিজ কক্ষে। রাজা গেলেন স্নানে। স্নান শেষে পরলেন পুজোর সাজ, শ্বেতশুভ্র সে পোশাক। ঢুকলেন এসে ঠাকুরঘরে। ঠাকুরের সামনে ডালিতে ফুল সাজানোই ছিল। তিনি একটা একটা করে সেই ফুল ঠাকুরের চরণে ছুঁইয়ে দিলেন আর চোখ বন্ধ করে মন্ত্র উচ্চারণ করতে লাগলেন।
যদা যদা হি ধর্মেশ্বরী
গ্লানি ভবতীর্ণ হা কৃষ্ণ করুণাসিন্ধু
দীনবন্ধু জগৎপথে
গোপেশী গোপীকাকান্ত রাধাকান্ত নমস্কতে...

এইভাবে ডালি শূন্য করে করজোড়ে ধ্যানস্থ হলেন রাজা। চোখ বুজে তিনি আওড়ালেন সেই বাণী যা শ্রীকৃষ্ণ মহামায়াকে বলেছিলেন, সর্বান পুত্রাদীন কাময়ন্তে যে তেষাং বরামীশ্বরীং শ্রেষ্ঠাং নিয়ন্ত্রীম, অর্চকানাং সর্বান কামবরান প্রদ্দাতি যা তাম।
কিছু সময় চুপচাপ। দুর্গার শ্রী মুখখানি স্মরণে আনলেন তিনি। মনে মনে উচ্চারণ করলেন, হে দুর্গে, তুমি বরদানকারিনী, পাপনাশকারিনী, শুষ্ক ও বিশুষ্ক দৈত্যদের বিনাশকারিনী। তুমি আমার দুঃখ দূর করে দাও মা। অস্ত্রধারী তোমার জয় হোক। অনন্ত শিবের অনুগামী তুমি, আমাকে পুত্রমুখ দর্শন করাও। পুন্নামো নরকাদ যস্মাৎ ত্রায়তে পিতরঙ সুতঃ তস্মাৎ পুত্র ইতি প্রোক্তৎ স্বয়মেব স্বয়ম্ভূব্য...
চোখ ভিজে উঠেছে রাজার। তিনি কাঁদছেন।
দুর্গার চোখে জল নেই। শিব ঠাকুরও কোনও ভাষা ব্যক্ত করেন না। কেবল রাজার বুকের খুব ভেতর থেকে ঢেউ ভাঙে।
আরও কিছু সময় বসে রইলেন রাজা। তারপর চোখ খুলে জল মুছলেন কাপড়ের খুঁট দিয়ে। ধীর পায়ে বের হয়ে এলেন পুজোর ঘর থেকে।
রানি বসে ছিলেন জলখাবার সামনে নিয়ে।

দুপুরের দিকে মেঘ মেঘ ছিল আকাশ, আর বিকেলে মেঘ কেটে গিয়ে সোনার রঙের মতো আলো ছড়িয়ে রইল। প্রাসাদের ওপর পাথরের যে সিংহমূর্তি, চকচক করতে থাকে। আর উজ্জ্বল হয়ে ওঠে রানির সিঁথির সিঁদুর। সিংহের পায়ের কাছে বেদিতে বসে তিনি মুঠো মুঠো গম ছড়িয়ে দিচ্ছেন। প্রায় শ’দুয়েক কবুতর, হুটোপুটি করে খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে। চারদিক মুখর করে তুলেছে তাদের ডাকাডাকি, বাক বাকুম বাক বাকুম। কোনও কোনোটা খাওয়া শেষ হয়ে এলে উড়ে গিয়ে বসছে খোপের মুখে। কোনোটা আবার ছোট্ট তুলতুলে বাচ্চার ঠোঁটে ঠোঁট ঘঁষছে। ছাদের একদিকে সার দেয়া কাঠের ছোট ছোট খোপ। উড়তে না শেখা বাচ্চারা মুখ বের করে দেখছে বাইরের আলোর জগৎ। এই এক আনন্দ রানির। বিকেলে নিজের হাতে এদের খাওয়ান তিনি। দাসি বিমলা বয়ে আনে এক ধামা গম। পুরোটা শেষ করে তারপর ওঠেন।
মাথার ওপর দিয়ে ফরফর শব্দ তুলে কয়েকটা কবুতর গিয়ে বসল কার্নিশে। বাক বাকুম বাক বাকুম। হাসলেন রানি, দেখেছিস কাণ্ড!
কি রানিমা?
দ্যাখ না হতচ্ছারা করলটা কি।
যা দেখল দাসি তাতে নিজেও সে হাসি চাপতে পারল না। রানির ঘাড়ে নোংরা করে দিয়েছে কবুতর। দাঁড়ান একটু, বলে সে দৌড়ে গেল নিচে। ফিরে এলো একটু বাদেই, হাতে পাত্রভরা জল আর এক টুকরো কাপড়। এক মুঠো গম ছড়িয়ে দিয়ে রানি বললেন, গোলাপের আড়ালেও কাঁটা থাকে, কথাটা জানিস তো?
তাতো জানিই, নোংরা মুছে দিতে দিতে বিমলার জবাব।
প্রতিদিন এই যে এদের যত্নআত্তি করি, ভালোবাসি, কেন বল তো?
ভালো লাগে তাই, দার্শনিকের মতো জবাব দিল বিমলা।
এই তো, মাথা খুলেছে তোর। যে জিনিস ভালো লাগে, তার নোংরা অত ঘেন্না করলে চলবে কেন?
তা বটে।
দ্যাখতো এবার, কয়টা বাচ্চা ফুটেছে।

রানি ছড়াতে লাগলেন গম। বিমলা এক একটা খোপের মুখে উঁকি দিচ্ছে আর সদ্য ফোটা বাচ্চা দেখতে পেলে আওয়াজ দিচ্ছে, বারো রানিমা... এই যে, ষোলো... একটা মরে গেছে রানিমা, এটাও ধরব?
প্রায় দিনই একটা-দুটো বাচ্চা মারা যায়। এত এত কবুতরের মধ্যে এরকম মরতেই পারে। আজ তবু কী যেন শঙ্কা গ্রাস করল রানিকে। মেঘের কালো ছায়া এসে পড়ল তার মুখে। বিমলার দিকে চেয়ে তিনি দেখলেন, মরা বাচ্চাটাকে হাতে নিয়ে বিমলা চেয়ে আছে তার দিকে। রানির গলায় যেন শ্লেষ্মা, বললেন, ফেলে দে, সরে আয় তুই ওখান থেকে। গুনতে হবে না আর।
হট্টগোল শোনা গেল নিচের থেকে। মরা বাচ্চাটা ফেলে দিয়ে বিমলা উঁকি দিলো নিচে। হট্টগোল বেড়েই চলেছে, আর চিৎকার। বিরক্ত হলেন রানি। জিগেশ করলেন, কি, হয়েছে কি বিমলা? এত হইচই কিসের?
বিমলা মুখ না ফিরিয়ে জবাব দিল, কাকে যেন বেদম পেটাচ্ছে কোতোয়াল। অনেক লোক রানিমা ফটকে।

রানির মুখে আবার মেঘের ছায়া। তিনি ভুলে গেলেন গম ছিটোতে। তার কানে আর ঢুকছে না তাকে ঘিরে শ্বেত কপোতের ডাকাডাকি। নির্নিমেষ চেয়ে রইলেন তিনি।
মুখ ফেরালো বিমলা, ভিড়ে প্রজারাও রয়েছে রানিমা। দেখে আসব একটিবার?
রানি ঘাড় নাড়লেন, কোতোয়ালকে বলিস আমি ডেকেছি।
আজ্ঞে রানিমা, বিমলা নেমে গেল নিচে।
কিছু সময় পর কোতোয়াল আর বিমলা এসে দাঁড়ালো তার সামনে। হাঁপাচ্ছে কোতোয়াল। মাথা নোয়ালো সে, কুনির্শ হই রানিমা।
নিচে হইচই হচ্ছিল কিসের?
বেয়াদবি নেবেন না রানিমা, সে আমি বলতে পারব না।
সে কেমন কথা! শুনলাম তুমিই নাকি কাকে মারধর করছিলে।
আজ্ঞে রানিমা, সে ব্যাটার বড্ড দেমাগ।
কে সে?
আমাদেরই প্রজা।
মারলে কেন তাকে?
ছোট মুখে বড় কথা হয়ে যাবে রানিমা, আমায় ক্ষমা করবেন।
রানি তোমাকে আদেশ দিচ্ছে, তুমি বলো।

প্রাসাদের পেছন দিককার বাগানে গাছের ডালপালা বেশ বেড়ে গেছে। ছাঁটার জন্য একজন গাছিকে খবর দেয়া হয়েছিল। আজ দুপুরে তার আসবার কথা, কিন্তু আসেনি। দু’বার লোক পাঠানো হয়েছে।
আসেনি কেন?
অবনত মুখে দাঁড়িয়ে থাকে কোতোয়াল। মুখে যেন লাগাম।
কি হলো, জবাব দিচ্ছ না কেন? রানির গলায় বিরক্তি।
লোকটা এখন বলছে...
কি বলছে?
বউ নাকি ওকে বলেছে...
কি, পরিষ্কার করে বলো।
আজ্ঞে, লোকটার বউ নাকি বলেছে, আমাদের রাজা আঁটকুড়া। ঢোঁক গিলল কোতোয়াল। আরও অবনত মুখ করে রইল সে।
রানি জিগেশ করলেন, তাতে তার কাজের কি সম্পর্ক?
বউ ওকে বলেছে, আঁটকুড়া রাজার মুখ দর্শন করলে অমঙ্গল হয়। রাজ্যের সবাই নাকি এ রকম বলাবলি করছে। বউটা গ্রামের মহিলাদের কাছ থেকে শুনেছে। গ্রামের কে একজন রাজার মুখ দর্শন করলে ওইদিনই তার পুত্র মারা যায়।
থমথমে হয়ে উঠেছে রানির মুখ।
ঠোঁট কাঁপছে তার। হাত কাঁপছে।
উঠে দাঁড়ালেন তিনি। টলে উঠলেন একটু।
ছুটে এলো বিমলা, কী হলো রানিমা...

কাঁপছে কোতোয়াল। বুক ঢিবঢিব করছে তার। এখন কী হবে... কী হবে এখন? রানি সরিয়ে দিলেন বিমলাকে। সরে যা বিমলা, আমার কিছু হয়নি। এরপর কোতোয়ালকে বললেন, যাও, তোমার কাজে যাও। আর একটা কথা, রাজার কানে যেন এসব কিছু না যায়।
ধীর পায়ে তিনি নেমে এলেন নিচে। তার বুক তখনও কাঁপছে। ঠিকমতো যেন পায়ের পাতাও ফেলতে পারছেন না। পেছনে বিমলা। রানিকে ধরবে কী ধরবে না, এ ভাবনায় জড়োসড়ো।