ডানে বাকির ইজেতবেগভিচ ও বামে মিলোরাদ দোদিক

ডানে বাকির ইজেতবেগভিচ ও বামে মিলোরাদ দোদিক

বসনিয়ায় আবারও উত্তেজনা, কিন্তু কেন?

নুরুল হুদা হাবিব

প্রকাশিত : জানুয়ারি ১১, ২০২২

সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল প্রশাসনিক কাঠামোর দেশ বসনিয়া-হার্জেগোভিনা। দুটি স্বতন্ত্র জনপদ, তিনজন প্রেসিডেন্ট, নয়জন প্রধানমন্ত্রী, দেড় শতাধিক মন্ত্রী এবং কয়েকশো সাংসদের সমন্বয়ে বিচিত্র এক দেশ এটি।

দেশটির একাংশ সার্ব নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল রিপাবলিকা সার্পস্কা বা RS। যুদ্ধ পরবর্তী Dayton Agreement এর মাধ্যমে প্রশাসনিক এ কাঠামো সাজানো হয়েছিল। RS সবসময়ই চায় বসনিয়া থেকে আলাদা হয়ে প্রতিবেশী সার্বিয়ার সঙ্গে একীভূত হতে।

সে লক্ষ্যে বসনিয়ার সার্বদের প্রেসিডেন্ট মিলোরাদ দোদিক বারবার বসনীয় কর্তৃপক্ষকে হুমকি দিয়ে আসছে। দোদিক প্রকাশ্যেই আরেকটি সংঘর্ষের বার্তা দিয়েছে। মূলত তারা আর রাষ্ট্রীয় হুকুম তামিল করতে চাইছে না। বরং আইন, সামরিক অর্থনৈতিক সায়ত্তশাসন চায়। তাদের এ দাবি যে প্রকৃতপক্ষে `বিচ্ছিন্নতাবাদ`, সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

দ্বন্দ্বটা মূলত এটিকে কেন্দ্র করেই। এদিকে আলীয়া ইজেতবেগভিচের ছেলে এবং সাবেক বসনীয় প্রেসিডেন্ট বাকির ইজেতবেগভিচ দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে অটল ভূমিকায়। সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিমদের পক্ষ থেকে তিনি ভূমিকা পালন করছেন।

বলকান মারাত্মক জটিল একটি অঞ্চল। কট্টর জাতীয়তাবাদ, রাজনৈতিক অচলাবস্থা, অর্থনৈতিক দৈন্যতা যেন এ অঞ্চলের ললাট লিখন। এ কারণে পশ্চিম ইউরোপ বলকান অঞ্চলকে বিমাতাসুলভ নজরে দেখে। আরো কিছু ঐতিহাসিক-রাজনৈতিক কারণ আছে, সংক্ষেপে সেগুলোর বর্ণনা অসম্ভব।

যাই হোক, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অনুষ্ঠিত ভার্সাই চূক্তির মধ্যেই যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ উপ্ত ছিল। দুটি বিশ্বযুদ্ধের মাঝের সময়টা যেন একটি `সাময়িক যুদ্ধবিরতি` ছিল। তেমনি বসনিয়ায় সার্ব আগ্রাসনের পর `ডেটন চূক্তি`র মধ্যে আরেকটি সংঘর্ষের বীজ রোপণ করা আছে বলে ধারণা করা যায়।

বসনীয় সমাজের একজন বহিরাগত প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে খুব সহজেই বলতে পারি, যে কোনো সংঘাত-সংঘর্ষ দেশটির জন্য হবে মারাত্মক ধ্বংসাত্মক। কেননা, তিন দশক আগের সংঘাতের দগদগে ক্ষত এখনো বসনিয়ার গায়ে লেপ্টে আছে।

সহসাই বড় ধরনের কোনো রক্তপাতের সম্ভাবনা যদিও নেই। তবে পূর্ব ইউরোপের রাজনীতির ঐতিহাসিক খলনায়ক রাশিয়া এবং নতুন করে চীন আগ্রাসী সার্বদের পালে হাওয়া দিচ্ছে।

অপরদিকে জো বাইডেন বসনিয়া যুদ্ধে মুসলিমদের পক্ষে সরব ভূমিকা পালন করে বসনীয় মুসলিমদের আস্থা অর্জন করেছিলেন। সেই জায়গা থেকে মুসলিমরা অনেকখানি ভরসা করছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওপর। দেখা যাক, পরিস্থিতি কতদূর গড়ায়!