যূথিকা জাকারিয়ার গদ্য ‘ইনবক্সে চল্লিশের পুরুষ এখন’

প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২২

চল্লিশ পরবর্তী পুরুষ নিজের জীবনের একঘেয়েমি কাটাতে বৈচিত্র্যের সন্ধানে নামে, আর এদেশে এই বৈচিত্র্য মানেই নারী। হতে পারে বিবাহিতা কিংবা অবিবাহিতা। আবার বর্তমান যুগে নাগরিক জীবনে এই মধ্যবয়সী পুরুষ বহুক্ষেত্রে হয় ডিভোর্সি, অবিবাহিত হওয়াও সম্ভব। তো এই বয়সটায় এসে আরও বহুরকম বোধের সঙ্গে একাকিত্ব বোধটাও যুক্ত হয়। আজকাল এদেশীয় পুরুষ গ্রাম বা শহর যেখানেই থাকুক তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছেই। আর যার নাই তার এলাকার ভাবি বউদি তো আছে। এই ফেইসবুকে এত রঙের এত ঢঙের এত্ত রকম ললনাগণকে দেখে বেচারা মধ্যবয়সী পুরুষ পুরাই বেসামাল হয়ে যায়। আর জুকার মামার বর স্বরূপ ইনবক্স নামক সোনারহরিণকে কবজা করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।

ডিভোর্সি সিঙ্গেল পুরুষদের এক্ষেত্রে একজন সঙ্গী লাভের আকাঙ্খা থাকে, একে দোষ দেয়া যায় না, মানুষ মাত্রেই সঙ্গী খোঁজে। কিন্তু মজা হলো, ঘরে বউ রেখে ইনবক্সে আবির্ভূত কলিরকৃষ্ণদের কাণ্ড। ক্ষেত্রভেদে এরা সবাই ঘরে অসুখী, যৌনজীবন নিস্তেজ মানে এদের জীবনে আর লাইফ নাইই। আবার আরেক দল বড় চালাক, এরা নাকি পরিবার নিয়ে বড়ই সুখি। এদের প্রফাইলে বউ বাচ্চার সঙ্গে আহ্লাদি ছবি দেখা যাবে। কমেন্টে বউয়ের প্রতি গদগদ প্রেম ঝরছে। কিন্তু ইনবক্সে এসেই সেই কাঁদুনি শুরু, কী না ! ওইটা তো লোকরে দেখাতে গ্যালে তুমিই আমার সুহাসিনী। আমার সেসব বন্ধুরা যারা তাদের ইনবক্সের গল্প আমার সঙ্গে শেয়ার করে প্রতিনিয়ত, আমরা জানি এদের আসল চেহারা তাই ফাঁদে পড়ার প্রশ্ন নাই।

তবে স্ক্রিনশট ফাঁস করবার ভয় দেখিয়ে এদের কাঁবু করা যায় না। সামাজিকতা বা মানহানি কিংবা বউয়ের কাছে ছোট হবার ভয় এদের নাই। কারণ তারা জানে, মামলা কেউ করবে না আর এদের আসল ইনবক্স মেসেজও বাইরে আসবে না। এরা তাই বলতে পারবে এসব ভুয়া, আরে ওই মেয়েটাই পিছনে লেগে আছে। হা হা হা। বাংলাদেশে মেয়েরা তো সস্তাই আর যারা ফেসবুক চালায়, রাতে এক্টিভ থাকে তারা নিশ্চয় পুরুষশিকারী। এই একবিংশ শতাব্দীর এই বাংলাদেশে যেদেশের সংসদ উপনেতা নারী, স্পীকার নারী প্রধান দুই বিরোধীদলের প্রধান নারী, এমনকি সরকার প্রধানও নারী, সেইদেশে একজন সাধারণ কর্মজীবী নারীর সারাদিন অনলাইন থাকার মানে তার চরিত্রদোষ!

আমাদের এসব কথা গা সওয়া। পুরুষ ইনবক্সে ইঁদুর হয়ে কুটুস কুটুস করো, আমরা মেয়েরা কাজ করি। আর মাদারি কা খেল দেখবার ইচ্ছে হলেই ওপেন করবো ইনবক্স, যে কারও। এবার সেটা আসল না নকল, তুমিই বলো। আমার কী দায়!