রাহমান চৌধুরীর কবিতা ‘যদি তুমি সাদা ঘোড়ার আরোহী হতে পারো’

প্রকাশিত : মার্চ ০১, ২০২৩

খরতাপে মরুভূমির মধ্যে পথ চলতে চলতে তৃষ্ণার্ত এক পথিক

জল চাই তার।
তৃষ্ণার্তদের জল দিতে প্রস্তুত কি সবাই?
রঙিন পোশাকে জলের কুঁজো হাতে তৃষ্ণার্তদের খুঁজে বেড়ায় যারা
তারা কেউ তার দিকে এগিয়ে এলো না
যদিও কুঁজো হাতে তারা একজন তৃষ্ণার্তকেই খুঁজে ফিরছিল
কিন্তু কেন যেন তাকে নয়।

 

সুন্দরী, সুনয়না রমণীরা মধুর হাসিতে জলের কুঁজো বয়ে নিয়ে চলে
চকিত দৃষ্টি তাদের
মরুভূমির বালুর প্রান্তর ছাড়িয়ে বহুদূরে—
কিন্তু নিকটে দাঁড়িয়ে থাকা তৃষ্ণার্ত পথিককে যেন দেখতেই পায় না।
সকলেই খোঁজে তার পছন্দের মতো একজন তৃষ্ণার্তকে
যে আসবে ঘোড়ায় চড়ে দুলকি চালে
কিংবা যার চেহারা হবে টকটকে লাল, হাতে থাকবে হীরার আংটি
কিংবা নীল রক্তের যে মানুষ ফিরবে মৃগয়া সেরে।

 

সত্যিকারের যে তৃষ্ণার্ত পথিক তাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে
ঝলমলে রমণীরা তাকে চাইছে না।
কুঁজো ভরা তাদের জল আছে, তবে নিঃসঙ্গ পথিকের জন্য নয়
ব্যক্তিগত পছন্দটাই সেখানে বড় হয়ে দাঁড়ায়।
জল কি তবে শুধু প্রিয় মানুষদের জন্য, সত্যিকারের তৃষ্ণার্তের জন্য নয়?
মানুষের প্রেম খোঁজে অন্য কিছু?

 

সময় চলে যায়, বেলা বাড়ে
পথিক দগ্ধ মরুভূমিতে বুকের মধ্যে কাঠফাটা তৃষ্ণা নিয়ে পড়ে থাকে
কিন্তু জল সে পাবে না।
কারণ তার নেই সাদা ঘোড়া কিংবা হীরার আংটি
কেউ তাকে প্রিয়জন বলে ভাবতে পারেনি তাই।

 

সামান্য পরেই
টগবগে সাদা ঘোড়ায় চড়ে যে আসে তাকে জল দেবার জন্য
হুড়োহুড়ি পড়ে যায়
চলে প্রতিযোগিতা।

 

যদিও সাদা ঘোড়ার আরোহী একটু আগেই একবার তৃষ্ণা মিটিয়ে এসেছে
তবুও তার জন্য জল আছে, থাকবে।
সাদা ঘোড়ার আরোহী চলে যায়
লাল টকটকে মানুষটিও আসে হীরার আংটি হাতে
মৃগয়া সেরে ফেরে নীল রক্তের মানুষ
সেও তৃষ্ণা মেটায় প্রয়োজনের বেশি
জলের কুঁজো বহনকারীরা তার তৃষ্ণা মেটাবার জন্য
সবকিছু উজার করে দিতে প্রস্তুত—

 

সময় পার হয়ে যায়, গোধূলি নামে
জলের কুঁজো নিয়ে সবাই ঘরে ফেরে
শুধু তৃষ্ণার্ত পথিক পড়ে থাকে মরুভূমিতে
সে দেখতে পায়ম যারা চলে গেল তাদের সকলের কুঁজোয়
এখনো জল অবশিষ্ট আছে
তবে সেটার তার জন্য নয়।

 

পথিক ভাবলো, যদি তুমি সাদা ঘোড়ার আরোহী হতে পারো
মরুভূমিতেই তোমার জন্য অপেক্ষা করবে জল
তাহলে পৃথিবীর সবকিছুই হবে তোমার জন্য।