রাহমান চৌধুরীর নাটক ‘ক্রীড়নক’

পর্ব ১৩

প্রকাশিত : আগস্ট ০৯, ২০২১

বাংলা একাডেমি থেকে ১৯৯৪ সালে পুস্তক আকারে নাটকটি প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পরপরই নাটকটি দেশের সুধীমহলের দৃষ্টি কাড়ে। নাটকটার পটভূমি প্রাচীন যুগের কাল্পনিক এক গ্রীকরাষ্ট্রকে ঘিরে। থিউস রাষ্ট্রটাই কাল্পনিক, ভিতরের বাকি সার কথাগুলোর প্রায় সম্পূর্ণটাই ঐতিহাসিক। মহাত্মা আহমদ ছফা নাটকটি পাঠের পর মন্তব্য করেছিলেন, ‘বহুদিন পর আমি গ্রিক ধ্রুপদী নাটক পাঠ করার আনন্দ পেয়েছি। নাটকটা আমি ইংরেজিতে অনুবাদ করাবো। সারা বিশ্বকে আমি নাটকটা পড়াতে চাই, বাঙালিরা যে নাটক লিখতে জানে, সেটার প্রমাণ দিতে চাই।’ ছাড়পত্রের পাঠকদের উদ্দেশ্যে নাটকটি পুনর্মুদ্রণ করা হলো:

জোকাস্তা: হায় দেবরাজ জিউস! যা দেখছি তা কি সত্যি না স্বপ্ন!
জেকোনেত্তা: চমৎকার। ঐ যুবককে হত্যা করে চমৎকার প্রতিশোধ নিয়েছো। যাও পুত্র, এবার ঐ নারীকে নিয়ে যাও এবং ভোগ করো। নিষ্ঠুরতা কাকে বলে ওকে বুঝিয়ে দাও।

হিস্টাফাস: চলো জোকাস্তা, তোমার প্রেমিক নিহত। এবার আমি তোমাকে জোর করো ভোগ করবো।
জোকাস্তা: জেকোনেত্তা, তুমি নারী হয়ে নারীর সর্বনাশ করতে দিচ্ছ। এখনো তোমার স্কন্ধে তুমি নারীর মুখ বহন করে চলেছো। তোমার সামনে নারী লাঞ্ছিত হলে এ লজ্জা তুমি রাখবে কোথায়?

জেকোনেত্তা: হিস্টাফাস, আমি ওর কোনো কথা শুনতে চাই না। ওকে এখান থেকে নিয়ে যাও। মধু ভোগ করা হলে ওকে যেন জীবন্ত ছেড়ে দিও না। তাহলে ও পরে আবার দংশন করবে।
জোকাস্তা: রানী জেকোনেত্তা, তুমি নিজের হাতে আমায় হত্যা করো। যখন আমার দ্বিতীয় প্রেমিক নিহত, তখন আমার আর বাঁচার কোনো অর্থ নেই। কিন্তু ওর হাতে আমাকে ছেড়ে দিও না। এইটুকু দয়া করো।

জেকোনেত্তা: দয়া! আমার পুত্রকে যখন হত্যা করা হয় তখন তোমার কাছ থেকেও আমি দয়া আশা করেছিলাম। সে কথা বলতে পারতো না, তবুও তাকে আমি বুকের মধ্যে আগলে রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তোমরা কেউ সেদিন আমায় দয়া করনি।
জোকাস্তা: সে ছিল হত্যাকারী। তার মৃত্যর জন্য তোমরা আমাকে শাস্তি দিতে পারো না। জেকোনেত্তা, পুনর্বার ভেবে দেখো। অন্ধকার কুঠরিতে সে আমায় ছিন্নভিন্ন করে ফেলবে। নারী হয়ে নারীর লজ্জা কি তুমি বুঝতে পারো না?

জেকোনেত্তা: সন্তানের চেয়ে মাতার কাছে বড় কিছু নেই, সে সত্য সেদিন তুমিও বুঝতে চেষ্টা করোনি। যাও হিস্টাফাস, তোমার কামনা চরিতার্থ করো। তোমার হাতে ও যত বেশি নিগৃহীত হবে, ততই তোমার ভ্রাতৃ-হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য আমি তোমার ওপর খুশি হবো।
হিস্টাফাস: চলো থিউসের সুন্দরী, জেসাস ক্রাইস্টের নামে আমি তোমায় ভোগ করবো। দেবতা জিউস আর আমার হাত থেকে তোমায় রক্ষা করতে পারবে না।

(হিস্টাফাস জোকাস্তাকে টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে)
জোকাস্তা: (জোকানেত্তাকে) ধ্বংস হবে তুমি। কেউ তোমার ধ্বংসকে রোধ করতে পারবে না।
জেকোনেত্তা: তাহলে শুনে রাখো, ধ্বংস হবে তোমরা। তোমার ভ্রাতা ক্রোনাস এবং তার পরিবার। আর তোমাদেরকে সমূলে ধ্বংস করার জন্যই আমি হলোফারনেসকে বিয়ে করেছিলাম। আমার দেহ তাকে ভোগ করবার সুযোগ দিয়েছিলাম।

(জেকোস্তাকে নিয়ে হিস্টাফাস চলে যায়। জেকোনেত্তাও বের হয়ে যায়। প্রায় মৃত সস্ত্রাতাস মাথা তোলে।)
সস্ত্রাতাস: জোকাস্তা, রাজনীতির লড়াই চলে রাজার রাজায় আর বড় বড় ব্যক্তিদের মধ্যে। কিন্তু প্রাণ দেয় তোমার আমার মতো নিরীহ ব্যক্তিরা, এ খেলায় যাদের কোনই লাভ নেই। পেছন থেকে ছুরি মেরে ওরা আমাকে হত্যা করলো জোকাস্তা। পিছন থেকে যারা ছুরি মারতে শিখেছে পৃথিবীতে শুধু তারাই জয়ী হতে পেরেছে। মনে হচ্ছে, বোকারাই শুধু মুখোমুখি দাঁড়াতে চেষ্টা করে। চলবে