শিক্ষাবিদ হুমায়ুন কবিরের আজ প্রয়াণদিবস

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : আগস্ট ১৮, ২০১৯

শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, লেখক ও দার্শনিক হুমায়ুন কবিরের আজ প্রয়াণদিবস। ১৯৬৯ সালের ১৮ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। অবিভক্ত বাংলার ফরিদপুরের কমরপুর গ্রামে ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯০৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তার জন্ম।

তিনি দুই দফায় ভারতের শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। প্রথম দফায় জওহরলাল নেহেরুর মন্ত্রিসভায় এবং এর পরবর্তীকালে আরেকবার। এছাড়া তিনি বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

ফরিদপুর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খান বাহাদুর কবিরুদ্দিন আহমদ তার পিতা। নওগাঁ কেডি. স্কুল থেকে ইংরেজিতে লেটারসহ প্রথম বিভাগে হুমায়ুন কবির ম্যাট্রিক (১৯২২) পাস করেন। এরপর কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন।

এই কলেজ থেকে ইংরেজিতে লেটারসহ প্রথম বিভাগে তৃতীয় স্থান অধিকার করে আইএ (১৯২৪), ইংরেজিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে বিএ অনার্স (১৯২৬) এবং ইংরেজিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে এমএ (১৯২৮) ডিগ্রি লাভ।

সরকারি বৃত্তি পেয়ে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য ইংল্যান্ড গমন (১৯২৮)। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একসেটর কলেজে ভর্তি। অক্সফোর্ড ইউনিয়নের সেক্রেটারি নির্বাচিত। অক্সফোর্ড থেকে দর্শন, ইতিহাস ও অর্থনীতিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে বিএ অনার্স ডিগ্রি লাভ (১৯৩১)।

হুমায়ুন কবির চতুরঙ্গ সাহিত্য পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ছিলেন। মার্কসবাদ ও শরৎচন্দ্র সম্পর্কেও তার মূল্যবান রচনা আছে। দর্শন ও সমাজতত্ত্ব সম্পর্কে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় তিনি বহু গ্রন্থ ও গবেষণামূলক প্রবন্ধ রচনা করেছেন।

তার নির্বাচিত রচনাবলি হচ্ছে, স্বপ্নসাধ (কবিতা), সাথী (কবিতা), নদী ও নারী (উপন্যাস), ইমানুয়েল কান্ট (১৯৩৬), শরৎ সাহিত্যের মূলতত্ত্ব (১৯৪২), বাংলার কাব্য (১৯৪৫) (সমালোচনা গ্রন্থ), মার্ক্সবাদ (১৯৫১), মীর্জা আবু তালিব খান (১৯৬১), Poetry, Monads and Society (1941), Muslim Politics in Bengal (1943) এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৯৪৫)।

 

হুমায়ুন কবিরের বিখ্যাত একটি কবিতা ‘মেঘনার ঢল’। তার প্রয়াণদিবসে শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে কবিতাটি এখানে পুনর্মুদ্রণ করা হলো:

শোন্ মা আমিনা, রেখে দে রে কাজ ত্বরা করি মাঠে চল,
এল মেঘনায় জোয়ারের বেলা এখনি নামিবে ঢল।
নদীর কিনার ঘন ঘাসে ভরা
মাঠ থেকে গরু নিয়ে আয় ত্বরা
করিস না দেরি- আসিয়া পড়িবে সহসা অথই জল
মাঠ থেকে গরু নিয়ে আয় ত্বরা মেঘনায় নামে ঢল।

এখনো যে মেয়ে আসে নাই ফিরে- দুপুর যে বয়ে যায়।
ভরা জোয়ারের মেঘনার জল কূলে কূলে উছলায়।
নদীর কিনার জলে একাকার,
যেদিকে তাকাই অথই পাথার,
দেখতো গোহালে গরুগুলি রেখে গিয়েছে কি ও পাড়ায়?
এখনো ফিরিয়া আসে নাই সে কি? দুপুর যে বয়ে যায়।

ভরবেলা গেলো, ভাটা পড়ে আসে, আঁধার জমিছে আসি,
এখনো তবুও এলো না ফিরিয়া আমিনা সর্বনাশী।
দেখ্ দেখ্ দূরে মাঝ-দরিয়ায়,
কাল চুল যেন ঐ দেখা যায়-
কাহার শাড়ির আঁচল-আভাস সহসা উঠিছে ভাসি?
আমিনারে মোর নিল কি টানিয়া মেঘনা সর্বনাশী।