হিজড়াদের বিষয়ে ইসলামি বিধান

আরিফ আব্দুল্লাহ

প্রকাশিত : নভেম্বর ০৮, ২০২০

হিজড়া নিয়ে আমাদের বিশেষ শ্রেণির একটু হিজিবিজি লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে যারা নাস্তিক, এগনেস্টিক। তাদের মুখ থেকে কিছু প্রশ্ন প্রায়ই শোনা যায়। তাদের ভাষ্য হলো—
• আল্লাহ পাক হিজড়াদের বানিয়ে তাদের উপর `অবিচার` করেছেন।
• ইসলাম যদি পূর্ণাঙ্গ ধর্ম হয়, তাহলে ইসলামে হিজড়াদের কথা কই?
• তারা কি বোরখা পরবে? নাকি জুব্বা-টুপি পরবে?  কোনটা?

এসব প্রশ্নের জবাব নিয়েই মূলত এই নিবন্ধ। প্রথম কথা হলো, হিজড়া সম্প্রদায় আল্লাহ তাআলারই বান্দা বা বান্দি। তারাও আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব। আর অবিচার শব্দটা তখনই আসবে যখন কোনো পাওনাদারকে তার পাওনা বুঝিয়ে না দিয়ে তার হক নষ্ট করা হয়।

ভেবে দেখুন, আমরা কিন্তু আল্লাহর কাছে কিছুরই পাওনাদার নই। আমাদেরে যা দেয়া হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আল্লাহর অনুগ্রহ মাত্র। তাই যে যতটুকুই পেয়েছে সেটাই আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ পাক চাইলে আমাদের কুকুর বানাতে পারতেন।

আর হিজড়াদের ব্যাপারটা এমন নয় যে, তারা আল্লাহ পাককে পুরোপুরি নারী বা পুরোপুরি পুরুষ হওয়ার জন্যে কয়েক কোটি টাকা দিয়েছিলো, কিন্তু আল্লাহ পাক তা দেননি! তাই এখানে অবিচার কথাটি আসতেই পারে না। আল্লাহ পাক কাউকে অন্ধ, কাউকে বোবা, কাউকে অটিস্টিক, কাউকে হিজড়া হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই এতে গভীর কোনো হিকমাহ রয়েছে। অবশ্যই কোনো উদ্দেশ্য লুকায়িত আছে।

দ্বিতীয় ব্যাপারটি হলো, ইসলাম পূর্ণাঙ্গ ধর্ম। এবং তাদের জন্যেও ইসলামে বিধান আছে। সেটা কীরকম দেখুন এবার—

মৌলিকভাবে ইসলামে পুরুষ ও নারীকেই গণ্য করে থাকে। আর যারা উভলিঙ্গ হয়ে থাকে তারাও মূলত হয় নারী বা পুরুষ। তাই তাদের ব্যাপারে আলাদা কোনো বিধান আরোপ করা হয়নি। যে উভলিঙ্গের অধিকারী ব্যক্তির মাঝে যেটি বেশি থাকবে, তিনি সেই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত হবে। তাই তাদের ব্যাপারে আলাদা কোনো বিধান আরোপ হবার প্রয়োজন নেই।

হযরত আলীকে (রা.) এমন এমন একটি শিশুর বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, যার ছেলে বা মেয়ে হওয়া পরিষ্কার নয়। তখন হযরত আলী (রা.) বললেন, সে যেভাবে পেশাব করে সে হিসেবে মিরাস পাবে। (সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদিস নম্বর ১২৯৪, কানযুল উম্মাল, হাদিস নম্বর ৩০৪০৩, মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস নম্বর ১৯২০৪)

হিজড়াদের ক্ষেত্রে বিধান হলো, তাদের নারী বা পুরুষের যে কোনো একটি ক্যাটাগরিতে ফেলতে হবে। রাসূল (ﷺ) এ ব্যাপারে একটি মূলনীতি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সেটা হলো, দেখতে হবে হিজড়ার পেচ্ছাব করার অঙ্গটি কেমন। সে কি পুরুষদের গোপনাঙ্গ দিয়ে পেচ্ছাব করে, নাকি নারীদের মতো গোপনাঙ্গ দিয়ে পেচ্ছাব করে। গোপনাঙ্গ যাদের মতো হবে, হুকুম তাদের মতোই হবে। অর্থাৎ গোপনাঙ্গ যদি পুরুষালি হয় তাহলে পুরুষ। যদি নারীর মতো হয় তাহলে নারী। আর যদি কোনোটিই বোঝা না যায়, তাহলে তাকে নারী হিসেবে গণ্য করা হবে। সেই হিসেবেই তাদের উপর শরয়ী বিধান আরোপিত হবে। ঠিক সেভাবেই তারা হয় বোরখা মেনে পরদার বিধান অনুসরণ করবে, নয়তো পুরুষদের সুন্নত গ্রহণ করবে।

আর আট-দশটি স্বভাবিক মানুষের মতো সেও সামাজিক মর্যাদা পাবে। উত্তরাধিকার সূত্রে পরিবার থেকে সেও সম্পদের ভাগ পাবে। দেখা যায়, হিজড়া হওয়ার কারণে অনেক বাবা-মা লোকলজ্জায় তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এটা ইসলামি বিধান নয়। এজন্য ওই পিতা-মাতাকে শেষবিচারে আল্লাহর বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। অণু পরিমাণ কারো অধিকার বঞ্চিত করা হলে আল্লাহ তা ক্ষমা করবেন না।

ঢাকার কামরাঙ্গিচরে সম্প্রতি হিজড়াদের জন্যে মাদ্রাসা তৈরি করা হয়েছে। এটা অবশ্যই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। আল্লাহ পাক তাদের এবং আমাদের সবাইকে কবুল করুন।