আলোকচিত্রঃ রিফাত বিন সালাম

আলোকচিত্রঃ রিফাত বিন সালাম

সকালে হঠাৎ

এস এম শাহরুখ পিকলু

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৮

কিছুক্ষণ আগে ফজরের জামাত শেষ হয়েছে। মসজিদে এখনও অনেকে বসে আছে; আলোচনা চলছে তবে তার বিষয়বস্তু জানি না। আকাশে আলো ফুটেছে, রোদ উঠলো বলে, গ্রীষ্মকালে যা হয়। ঘর থেকে বেরিয়ে কেমন যেন গা ছম ছম করে উঠলো, একটা প্রেমোনিশনের (Premonition) আভাস পেলাম। তাও বের হলাম।

 

কাছেই নিত্য দেখা কুকুরগুলোকে কেমন নীল নীল লাগলো; একটা কুকুর নিজের লেজের পিছে ছুটছে, তার অফুরন্ত এনার্জি, ছুটছে আর ঘুরছে, ছুটছে আর ঘুরছে কিন্তু মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছে না। অন্য কুকুরটা আমার একেবারে কাছে চলে আসলো। আমার জুতোর নীল ফিতা দেখে তার বিস্ময়ের শেষ নেই। অনেক দূর পর্যন্ত আমার পিছে পিছে আসলো। ওদের মাথায় “আমি পাগল” লেখা ছিল, খেয়াল করিনি।

 

কিছুদূর এগিয়ে সিটি কর্পোরেশানের ঝাড়ুদার মেয়েদের দেখা পেলাম। লম্বা লম্বা ডান্ডাতে লাগানো ঝাড়ু। তাদের প্রত্যেককে ঘিরে রেখেছে ধূলোর ছোট ছোট ঝড়। কেনই-বা ঝাড়ু দিচ্ছে তা জানে না কেউ, যেখানের ধূলো সেখানেই পড়ছে। তাতে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই তবে তারা নাচছে, তাও আবার ফ্লেমেঙ্কো। ঢাকার রাস্তার ঝাড়ুদার কোত্থেকে স্প্যানিশ নাচ শিখলো তা জানি না। তারা আপন মনে ধূলোঝড় সৃষ্টি করে নেচেই চলেছে।

 

বড় মসজিদের দেয়াল ঘেষে এক পেশাদার ফকির একটা পেপার খুলে পড়ছে; পড়ছে বলাটা বেশি বলা হবে, দেখছে বলাই ভালো। তার পাশে আরেকজন ফকির তবে পেশাদার না কিন্তু প্রতিবন্ধী। তার মুখ দিয়ে লালা পড়ছে আর সে সবার দিকে তাকিয়ে হাসছে। চারদিকে তাকিয়ে মজার কিছু চোখে পড়লো না। আরো সামনে মসজিদ ছাড়িয়ে একজন ফুটপাথে শুয়ে আছে। গায়ে ছেঁড়া জামা আর ময়লা লুঙ্গি কিন্তু কাছেই একটা চকচকে বাঁশের লাঠি। বোধ হয় রাতে ভূত আসে, তাদের পেটাতে চকচকে লাঠি লাগে। ঠিক জানি না।

 

সিটি কর্পোরেশানের ময়লা ফেলার স্থান সকাল সাতটার সময়েও ভরপুর, কাকগুলোর ভুঁড়িভোজ চলছে; সেখানে মরা পচার গন্ধ। সুবেহ্ সাদিকে তা সরানোর কথা কিন্তু কেউ সরায়নি। এত সকালে তারা ঘুম থেকে উঠতে পারবে না, ব্যস। পাশ দিয়ে নাক চেপে হাঁটতে হচ্ছে, জীবিত অবস্থায় কেউ নরকের গন্ধ পেতে চায় না। স্কুলে বাচ্চাদের নাক চাপা, আতর মাখা মাওলানা সাহেবের নাক চাপা, তবে রিকশাওয়ালার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই; সে দু ঘন্টা রিকশা চালিয়ে এরই মধ্যে পঞ্চেন্দ্রীয় খুইয়ে বসেছে।

 

বাসার কাছে দেখলাম লোকের জটলা। কাছে গিয়ে বুঝলাম একজন ফুটপাথে মরে আছে। ঘিরে থাকা লোকগুলো উহ্ আহ্ করছে। মৃতদেহের কাছে বসেই একজন হাসছে।আজব, এ তো দেখি মরা মানুষটাই বসে আছে এবং সে হেসেই চলেছে। গা আবার ছম ছম করে উঠলো।গত কয়েকদিন ধরে সে কাতড়েছে কিন্তু দু একটা টাকা দেওয়া ছাড়া কেউ পাত্তা দেই নি, আজকে সবাই সম্মিলিত দুঃখ দেখাচ্ছে। সম্মিলিত দুঃখ সংগীত যত বাড়ে, মৃতের হাসিও আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পায়।

 

প্রায় আধা দৌড়ে বাসায় চলে আসলাম।ঘরে ঢোকার সময় ভাবলাম - যে শহরে মানুষ কুকুরকে কামড় দেওয়ার চেষ্টা করে সেখানে গা ছম ছম করারই কথা।