রাদ আহমদ

রাদ আহমদ

রাদ আহমদের গুচ্ছকবিতা

প্রকাশিত : এপ্রিল ০৭, ২০২৪

কোরমা

কোরমা জিনিসটা আসলে বাদাম, ঘি, দুধ আর
সামান্য ঘন চিনির মিশ্রণে বানানো অনেকটা
মিষ্টান্নের মতো
সাথে দারুচিনি, অল্প দু`চার দানা এলাচি

`দই` জিনিসটার কিছু ম্যারিনেট করার ক্ষমতা (সম্ভবত) আছে
রান্নার উপরে বিজ্ঞানের বই বহুদিন ধরে খুঁজতেছি

তোমার দাঁতের সুগন্ধি অনেক দিন ধরে খুঁজতেছি

আসলে দাঁতের গন্ধ নিতে হয় দাঁত দিয়ে।

দুই.
আর বাদামও সম্ভবত এমন বুঝে যে
মানুষের দাঁতে এক সুগন্ধির মতো

মানুষের গন্ধ নিতে নিতে বাদাম এখনও তার জাতপাত ধরে রাখে
কাঠবাদামের ধরন এক প্রকার, কাজুর আরেক

কোরমার মধ্যে অবশ্য মাংস আছে। কাঁচা মরিচও, ফলত কোরমাকে
পুরাটা মিষ্টান্ন বলা যেতেছে না বরঞ্চ পেঁয়াজ পুড়িয়ে
তার বেরেস্তার খয়েরি চেহারাগুলা ছড়িয়ে দেয়া হতেছে দেখলাম
এতে পরিবেশন সুন্দর হয়েছে।

তিন.
মসলা একটু ঘন হয়ে গেলে সমস্যা থাকতেছে
কিছু কিছু রান্নায় সমস্যার উপস্থিতিটা মেইন
কতটা ঘন, কতটা হালকা

রসুন আদার বাটা মিশ্রণ কষিয়ে যতক্ষণ না
`তেল ভেসে ওঠে` আমার নিজের ব্যক্তিগত কোনো কথা

বলা হলো না এতক্ষণেও। পাঁচ লাইন পার হয়ে গেছে।

আমি এক কোর্মা খাওয়া কর্মবীরের উল্লেখ করতে চাইতেছিলাম
যিনি মার্সিডিজে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়
যাওয়ার রাস্তায় সরকারি
রেস্ট হাউজে বিরতি নেন
আর সেখানে ঝিলমিল ঝিলমিল
ঢেউয়ের জলে ঢেউ খেলিয়া যায় রে
ঝিরঝির ঝির হাওয়ায়
রে ঢেউ খেলিয়া যায়

চার.
বান্দরবানে লাইট ছিল চাঁদের আলোয়
এপারচার বাড়িয়ে নগ্ন বা নগণ্য
যুবাদের ছবি তোলা একটা
রসিক ছেলেকে চিবিয়ে খাওয়ার আহ্বান ছিল
হেমন্তের ঝরা পাতার হলুদ আকস্মিকতায়—

তো এইসব আর কী মশলা
গাঢ় হয়ে গেলে এ ধরনের ছোটোখাটো সমস্যাগুলা
সামনে চলে আসে

চৌকা চোয়াল

চৌকা না বরঞ্চ পানপাতার অবয়বে এসে ক্রমেই থুতনি ছোটো হয়
এবং লাল ঠোঁটে আরও চার দশক আগেকার এনিগমার
sadness গানটাকে বারবার
বাজাতেসে এরা

আমি পারলে ইতিহাস বলতাম তোমাকে
ধরো এমন বাসায় যেখানে গৃহকর্তা ঘুমিয়ে পড়ে
এবং পাহারাদার চড়ুই পাখির মতো চঞ্চল

আফ্রিকান মাঠ থেকে ছেঁটে আনা সুর
আমাদের ক্রমশ স্বাধীনতা দিতে দিতে
হাফ ছাড়া শ্বাস নারীকণ্ঠে শীৎকার সংশ্লিষ্ট

এবং আশি নব্বইয়ের বাংলাদেশের বিকল্পধারার সিনেমার
উঁইপোকা, ছাড়পোকা, শ্বাস ফেলা কাফলিংক
কামিজের কারুকাজ করা
হাতা হাতা না চলো আমরা
হাতিরঝিলের
পানিতে প্রতিফলিত
আলো আসা ভালো বাসা আসাকার ভল্লুক ভল্লুক
ওরা স্বাস্থ্যবান হয় শীতপ্রধান দেশগুলায়

ব্যথার বোতাম পরিচিতজন

মনে হতেছে ব্যথার বোতাম পরিচিতজন।
 
আমাদের এ সোনার সকাল লবণাক্ততা।
যতটাই না ভিতরের দিকে হেঁটে যাবে কেউ
সাদাটে আর শুনশান এক মাথাব্যথা ধরে
পরিচিতেরা সবুজ কোমল লতানো কেমন

থির হয়েছে ও চেপে বসেছে বাসি হয়ে যাওয়া
গোল ধরনে বাটির ভিতর সন্তরণে
তরকারিতে হলুদ মেশানো ভাসতে আছে
পরিচিতেরা। মৃতমাছ সব ত্রিকোণাকারের
খুব লালচে ছোট্ট আকারে চেরি বসানো

মিষ্টি চেরি লালচে এবং মন ভালো করা
বাতাস বহে, আত্মীয়জন, কিন্তু আমি
গুমরে থাকা চাপা ধরনের মাথাব্যথা

সততাকে নিয়ে যাই মৎস্য ভবন

আপাতত সততাকে নিয়ে যাই মৎস্য ভবন
আমাকে ইঞ্জিনিয়ারস ইন্সটিটিউশনের সামনে দিয়ে যেতে হতেসে, ঘুরানো ব্রিজের একটা অবয়ব মতো আছে
ঢালু ভঙ্গিমাতে ঝরে যেতেসে অনেক ফুল নাক ফুল লম্বা লম্বা গাছে আর
সারা জাহানের রাত্রকর্মীরা গোসল করার জন্যে লেকের পাড়

একটা আধা অন্ধকার গলিতে কিসের চা এটা অদ্ভূত রকমের
গলিত লাভার হলুদ টেনিস বল। বিকালে পুরাটা রাস্তা জুড়ে ক্রিকেট হতেসে
তরুণেরা ইয়াং হতেছে ইয়াঙেরা শিশুকালে আঙুলের চারধারে মুখ

লাগিয়ে শুষে নিতেসে দোকানের কোলে গাঁট হয়ে বসে থাকা বাহারি জিনিসে
দোকানদার ফুটে থাকে ফুল মতো

লাইন লাইন টানা রাস্তা ধরে তুমি টেনে আনো গ্রীন রোড
লম্বা লম্বা ত্রিকোণাকারের টিউব লাইট

স্যেলুট দেওয়ার ভঙ্গি করে কোনাকুনি তারা আকাশে উত্থিত আর ওই যে রাস্তাগুলা পুরানা বা মধ্যকালের এই ঢাকা শহরের গায়ে

অল্প আস্তে লেগে থাকা মাছের পিছল আঁশ

দুই.
আপাতত সততাকে একটা ওভারকোটে আবৃত ও শীর্ণকায়া
মেয়ে মানুষের মতো মনে হতেসে তির তির করে কাঁপতে কাঁপতে জিজ্ঞাসা করেছি

আচ্ছা সন্ধ্যাকালে এই যে ধূসর রঙ এটা কি কোনো ছাই থেকে উদ্ভূত কিনা তোমার কী মনে হয় তোমাকে প্রোটেক্ট করার

আমার তো কোনো দরকার নাই তোমারও নাই যদি ধরি আত্মা আত্মা ফলে আছে গাছে তাইলে চলো দেখি

শরীরবৃত্তীয় সততা গোসল করতে দেখি চলো রমনা পার্কে

তিন.
আসলে জীবন গোলাকারের এক টেনিস বল ওটাকে যখন
টেপ দিয়ে খুব নিশ্ছিদ্র করে পেঁচানো হতেসে তখনকার ক্র্যাকগুলা দেখ

ফেটে ফেটে যাওয়া আঁকাবাঁকা ফল্টের লাইন মানে যেই
ভূমির অভ্যন্তরের বড়ো বড় টুকরার ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে লাভা সেই ভূমিগুলা

যার যার থেকে খুব সাবধানে ব্যবধানে থাকে আর তুমি পর্যবেক্ষক তুমি তো আকাশের থেকে একীভূত করে দেখা আর খুব একা একা

উড়তে থাকা লিলিথের মতো একসময় ভাবসিলাম লিলিথকে নিয়ে পঙক্তি রচনা সম্ভব

চার.
কিন্তু না, মধ্যযুগের ইউরোপীয়রা পরের কালে লিলিথের চিত্রকল্প খুব একটা ভালো হিসাবে রাখেনি শিশুদের
নানারকম রোগের পিছে লিলিথ বিশেষ করে পেটের পীড়ার অসুখের জন্য উড়তে থাকা আত্মাভিমানী

ডানাওয়ালির জন্ম দিয়েসে ওরা আর মেরে ফেলেসে এইভাবে পেটের পীড়ায় এসে সন্ধ্যাকালে
সত্য চুরি করে নিয়ে গেসে কোল থেকে খুব যত্ন করে কোলে করে নড়তে থাকা শিশু

তাকে নিয়ে যাব ভাবি মৎস্য ভবনে