আমি কাউরে পুছি না

এহসান হাবীব

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৯

সকালটা মিষ্টি। এইরকম মিষ্টি সকালে নিজের সম্পর্কে কিছু বলা যায়। প্রথম কথা আমারে দিয়া হইবো না। মানে আপনি যে উদ্দেশ্যে আমার সাথে মিশতে চান। অনলাইনে অফলাইনে বন্ধুত্ব করতে চান বা চেয়েছেন, তা আমার দ্বারা পূরণ হবে না। আমি লাইক কমেন্টের ব্যবসা করি না। আমি কোথাও যাই না, কারো সাথে যেচে পড়ে বন্ধুত্বও করি না এ কারণে। কারো অ্যাক্টিভিটিজ যদি আমার ভালো লাগে আমি তার সাথে মিশি, তারে রিকু পাঠাই। সম্পূর্ণ আমার খেয়ালে। বিনিময় প্রত্যাশা করি না। কবিতাটা আমার মজ্জাগত, এটা আমি ভাবি। এবং কবিতাকে আমি আমার মতো করেই জাজ করি। ব্যক্তি সম্পর্ক দিয়ে কবিতা বাছাই করার করার শিক্ষা আমি আমার তিন দশকের পড়াশুনায় পাই নাই। ফলে আপনার কবিতা আমার ভালো না লাগলে আপনি আমার বন্ধু বা আপনি আমার কবিতার প্রশংসাকারী এই বিবেচনায় আপনার কবিতার নিচে আমি `আহা` `উহু` `দারুণ` এই সমস্ত কমেন্ট আমি লিখতে পারবো না। যদি আপনার কবিতা আমার ভালো লাগে তাহলে আপনি আমার বন্ধু না হলেও, আপনি আমার কবিতা না পড়লেও আমি আপনার কবাতার প্রশংসা তো করবই এমনকি সেই কবিতার ফেরিওয়ালাও আমি হইতে রাজি আছি। ফলে এই সমস্ত বিষয় বাদ দেন। পাঁচ দশ বছর আমার সাথে বন্ধুত্ব করে, দিনরাত আমার সাথে আড্ডায়, বন্ধুত্বে মেতে থেকে যখন আমার দ্বারা আপনাদের উদ্দেশ্য হাসিল হয় নাই দেখে যারা সটকে পড়েছেন তাদের জন্য আমার কোনো আফসোস নাই।

অতীতের কোনো কিছুর জন্যই আমার কখনো আফসোস হয় না। কিন্তু সটকে গিয়ে যারা আমার নামে আকথা কুকথা বলে বেড়ান, যারা আমার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ট্যাগ লাগাইতে চান, লাগাইতে পারেন। আপনাদের এইসব ট্যাগিং আমি চুদি না। আমি তো কারো কাছে যাই না। ফলে এইসব ট্যাগিং এ আমার কিচ্ছু আসে যায় না। আমি সিণ্ডিকেট করি না। আমি সিণ্ডিকেটের ফসলও না। সিন্ডিকেট করে শেয়ালেরা হুক্কাহুয়া তোলে। আর বাঘ একাই গর্জন করে- খুব শৈশবে একদিন এইরকম এক মিষ্টি সকালে এইটা আমি টের পাইছিলাম। সেই থেকে একাই তো আছি। যদিও বলছি আপনাদের ট্যাগিং আমি পুছি না। তবুও আমি আমার অনাগত বন্ধু ও বর্তমানের কিছু প্রাণের বান্ধব যারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সময় আমার হয়ে কথা বলে, ফাইট করে, তাদের জন্য আমি কিছু বলে যেতে চাই।

আমার অল্প বিস্তর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা আছে। তা আমার জীবনের ১৯ বছরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আজ থেকে ১৯ বছর আগে যখন আমার বয়স ১৯ ছিলো তখনই রাজনৈতিক জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। আমি সেই ক্ষুদ্র সময়টুকুতেই বাংলাদেশের রাজনীতির, ক্রিয়াশীল, প্রতিক্রিয়াশীল, প্রগতি, বুর্জোয়া, বিপ্লবী সব কয়টা ধারার রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের ভেতর বাহির অবলোকন করেছি। ইচ্ছে আছে তার বিস্তারিত অন্য একটা লেখায় লিখবো। আজকে শুধু এটুকু বলি, আমি হচ্ছি টোটালি তাই যা আপনারা আমাকে বাইরে থেকে এক পলকে দেখে আন্দাজ করতে পারেন। অর্থাৎ আমি যা বিশ্বাস করি, আমি যা ধারণ করি তার সবটুকু আমি আমার আচরণ, কর্মকাণ্ড, এবং আমার চেহারায় তা প্রকাশ্য করে রেখেছি। ভেতরে জামাত, বাইরে প্রগতি এইটা আমি না। ভেতরে জামাত বাইরে বিএনপি/আওয়ামী লীগ এইটা আমি না। ভেতরে জামাত বাইরে কমুনিস্ট এইটা আমি না। ভেতরে জামাত বাইরে জামাত এইটা আমি না। বাংলাদেশের আলো অন্ধকারের সব কয়টা গলিপথে হাঁটার অভিজ্ঞতা যেহেতু আমি ১৯ বছরে সঞ্চয় করেছি ফলে আমি জানি কার চরিত্র কি? কিন্তু অন্যের চরিত্র পোস্টমর্টেম করার দায় এবং রুচি যেহেতু আমার নেই সেইহেতু আমি সৈকত হাবিব ও কাজী নাসির মামুন এবং মনির ইউসুফের মতো আরো আরো যারা আমার বন্ধু আছে তাদের উদ্দ্যেশে বলছি আপনারা যারা স্কুলিং করেন, আপনারা যারা বলয় নিয়ে চলেন, সিণ্ডিকেট মানেন আপনাদের পথের সাথে আমার পথের ফারাক আছে। আপনাদের আমাকে নিয়ে বাইরে বাইরে এই যে প্রচারণা, শাহবাগে, কাঁটাবনে এই যে আমাকে নিয়ে চর্চা করেন এইটা আমার পুলক জাগায়। তবে আপনাদের এইসব আলোচনা চর্চা আমি পুছি না।

শুধু আপনাদের কেন? কারোরটাই আমি পুছি না। হ্যাঁ, আমি সমতার রাজনীতির দর্শন লালন করি, আমি বিপ্লব সমর্থন করি, ন্যায়যুদ্ধ কামনা করি। আমি নিপীড়তের পক্ষে দাঁড়াই, কথা বলি, নিপীড়ক যতো শক্তিশালী হয় তার বিরুদ্ধে আমার প্রতিবাদের ভাষা ততো উচ্চকিত হয়। এইটাই আমার রাজনৈতিক আদর্শ। কবিতায় শুদ্ধতার চর্চা করি, বাংলা কবিতার পঙ্‌ক্তি আমি পড়েছি, আমি বিশ্বাস করি, কবিতার জন্য সিন্ডিকেটের চেয়ে সাধনা জরুরি। এই রাজনৈতিক দর্শন আর কবিতার বাস্তবতায় যারা আমার বন্ধু হবেন তাদের আমি অবশ্যই ওয়েলকাম করি। বাকিরা প্লিজ তফাৎ যান।

লেখক: কবি