কোরিওগ্রাফার হতে চান রবিন শেখ

শামীউল আলীম শাওন

প্রকাশিত : জুলাই ০৫, ২০১৮

২০১০ সালের শেষের দিকের ঘটনা। পরিচিত এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে হঠাৎ-ই কথা প্রসঙ্গে একটি নৃত্য সংগঠনের বিষয়ে কথা হয়। এরপর তার সঙ্গে আমি তাদের নৃত্য সংগঠনের অনুশীলন দেখতে যাই। সেখানে গিয়ে তাদের নৃত্য অনুশীলন দেখি। অনুশীলন চলাকালীন নৃত্যের পোষাকের বিষয়ে তারা আলোচনা করা শুরু করে। তখন আমি কৌতহল বশত তাদেরকে বলি, আমার জন্যেও যেন একটা পোষাক তৈরি করে। আসলে আমার ইচ্ছে হচ্ছিল তাদের মতো পোষাক পরবো। কিন্তু সেটা নৃত্য করার উদ্দেশ্যে নয়, এমনিতেই। তখন তাদের মধ্যে একজন আমাকে বলে, এ পোষাক তো এমনিতেই পরা যাবে না। এককাজ করো, তুমি আমাদের সাথে নৃত্য অনুশীলন শুরু করো। তাদের কথা মতো আমিও যুক্ত হয়ে যায় তাদের দলে। এভাবেই নৃত্যাঙ্গনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। এভাবেই নিজের নৃত্যচর্চা শুরুর গল্প বলছিলেন রবিন শেখ।

রবিন শেখ রাজশাহীর একজন সম্ভবনাময় ও উদীয়মান তরুন নৃত্য শিল্পী ও ডান্স কোরিওগ্রাফার। তিনি বর্তমানে রাজশাহীর সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র ‘ভঙ্গী নৃত্য শিল্পালয়’র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। ‘সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চর্চা করি, অপসংস্কৃতি মুক্ত সমাজ গড়ি’ এ স্লোগান নিয়ে রাজশাহীর ভদ্রা আবাসিক এলাকায় ‘ভঙ্গী নৃত্য শিল্পালয়’ নামের নৃত্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন বয়সী শিশু-কিশোর ও নারী-পুরুষকে নৃত্য প্রশিক্ষন দেন এবং বিভিন্ন নৃত্য নির্দেশনাও করেন।

নৃত্যাঙ্গনে যাত্রা শুরুর দিকের কথা বলতে গিয়ে রবিন শেখ বলেন, “ঘাস ফড়িং নৃত্য শিল্পী গোষ্ঠীতে যুক্ত হওয়ার পর আসিফ ভাই আমাকে নৃত্য প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। আমি তার দেয়া নির্দেশনা মোতাবেক নৃত্য চর্চা করতে থাকি। এভাবেই চলতে থাকে আমার নৃত্য প্রশিক্ষণ। দেখতে দেখতে কেটে যায় তিন বছরের বেশি সময়। এরই মধ্যে বিভিন্নস্থানে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবশেন করি। প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়েই পাই এক সুর্বণ সুযোগ। সুযোগটি ছিল বাংলাদেশের বেসরকারী স্যাটালাইট টিভি চ্যানেল ‘একুশে টিভি’র একটি নৃত্যানুষ্ঠানের নৃত্য পরিবেশনের। চ্যানেলের লোকজন এসে রাজশাহীতে আমাদের নৃত্য রেকেডিং করে নিয়ে যায়। অতপর সেই নৃত্যটি প্রচারিত হয় টিভিতে।

দেখতে দেখতে একসময় সেখানে নৃত্য প্রশিক্ষণ শেষ করি। এরই মধ্যে একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে আমরা যে স্থানে নৃত্য প্রশিক্ষণ ক্লাস করতাম, সেই স্থান পরিবর্তন করা হয়। নগরীর ভদ্রা আবাসিক এলকার একটি স্কুলে আমারা আগে ছিলাম। পরে স্কুলের পাশের একটি ভাড়া বাড়িতে যাই। সে বাড়ির একটি রুমে আমরা নৃত্যচর্চা করতে থাকি। তবে এ বাড়িতে আসার কয়েক মাস পরে সৃষ্টি হয় একটি সমস্যা। সমস্যাটি ছিল ঠিক এমন, সেই বাড়িতে ভাড়া যাওয়ার পরে চার (চার) মাসের বাড়ি ভাড়ার টাকা আসিফ ভাই বাড়িওয়ালাকে দিতে পারেননি। পরবর্তীতে বাড়িওয়ালা সেই বাড়িতে আসিফ ভাইকে রাখতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। যা নিয়ে তৈরি হয় এক ধরণের সংকট। সেই সংকট থেকে বের হওয়ার জন্য আমি বাড়িওয়ালার সঙ্গে আলাপ করতে যায়। এরপর বাড়িওয়ালা আমার কথায় প্রভাবিত হয়ে সেখানে আমাদেরকে নৃত্যচর্চা করার সুযোগ দিতে রাজি হন। তবে বাড়ির ভাড়ার সকল দায়িত্ব আমাকেই নিতে বলেন। পরে সবদিক বিবেচনা করে একপ্রকার বাধ্য হয়ে দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিই। চলতে থাকে নৃত্যচর্চা। যেহেতু বাড়িওয়ালার কথা মোতাবেক আমাকে নতুন ভাবে ভিন্ন নামে শুরু করতে হয়। তাই ঘাস ফড়িং নৃত্য শিল্পী গোষ্ঠী নাম বাদ দিয়ে ‘ভঙ্গী নৃত্য শিল্পালয়’ নামকরণ করি। সেটা নিয়ে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। একসময় আসিফ ভাই সেখানে যাতায়াত বন্ধ করে দেন। এভাবেই ‘ভঙ্গী নৃত্য শিল্পালয়’ প্রতিষ্ঠা লাভের কথা বলছিলেন রবিন শেখ।

রবিন শেখ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত ভঙ্গী নৃত্য শিল্পালয় বর্তমান সময়ের একটি আর্দশ নৃত্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সেখানে প্রায় ২৫ থেকে ত্রিশজন বিভিন্ন বয়সী শিশূ-কিশোর ও নারী-পুরুষ নিয়মিত নৃত্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। সম্প্রতি সময়ে ভঙ্গী নৃত্য শিল্পালয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাংলাদেশ শিশু একাডেমি রাজশাহী ও জেলা শিল্পকলা একাডেমি রাজশাহীর নথিভূক্ত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি নৃত্য প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে আয়োজিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করেছে। এছাড়াও বাংলাদেশ শিশু একাডেমি রাজশাহীর কর্তৃক আয়োজিত প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে।

সম্ভবনাময় ও উদীয়মান তরুন নৃত্য শিল্পী রবিন শেখ নৃত্য নিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘আমি ভবিষ্যতে চাকরী বা ব্যাবসা যাই করি না কেন, নৃত্যাঙ্গন কোনও দিন ছাড়তে পারবো না। ভালো মানের নৃত্য প্রশিক্ষকদের কাছে থেকে নিজে আরো যুগোপযোগী নৃত্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবো। যাতে আমি নিজে আরো উন্নতমানের নৃত্য কোরিওগ্রাফি ও পরিবেশন করতে পারি। তার মাধ্যমে আমি আমার ‘ভঙ্গী নৃত্য শিল্পালয়’-এ নৃত্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে আসা প্রশিক্ষণার্থীদের যুগোপযোগী নৃত্য প্রশিক্ষণ প্রদান করতে পারবো। এভাবেই আমি ও আমার প্রতিষ্ঠান সমগ্র রাজশাহী তথা বাংলাদেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চাই।’