জীবন কী এভাবে যাবে, নাকি থমকে যাবে

মো. খালিদ সাইফুল্লাহ ফয়সল

প্রকাশিত : আগস্ট ১২, ২০১৮

‘আর কতদিন` জহির রায়হানের একটি বড় গল্প। উপন্যাসিকাও বলা চলে। এর প্রেক্ষাপট যে ঠিক ক, তা বলা মুশকিল। আপাত দৃষ্টিতে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বলা গল্প বলে মনে হতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের গল্পে চিরচেনা যেসব চিত্র আমরা ফুটে উঠতে দেখি, সেসবের উপস্থিতি আছে এ গল্পে। এরপরও গল্পটি শুধু একাত্তুরের মুক্তিযুদ্ধকেই ধারণ করেনি, এ গল্পের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী যে যুদ্ধ-বিগ্রহ হচ্ছে, সামগ্রিকভাবে সেটিকেই তুলে ধরা হয়েছে।

তোমার আমার দেশ আলাদা, চলো তবে যুদ্ধ করি। ধর্ম আলাদা, চলো দাঙ্গায় নামি। বর্ণ আলাদা, তোমার রক্ষে নেই। যুগে যুগে, দেশে দেশে জাতীয়তাবাদ, ধর্ম, বর্ণ, জাতের নামে যত অন্যায়, খুনোখুনি হয়েছে তার একটা সামগ্রিক চেহারা উঠে এসেছে এ গল্পে। বাকসোবন্দি কতগুলো মানুষকে ছেলেমেয়ের বাধা তুচ্ছ করে দিনের পর দিন বাঁচিয়ে রাখেন এক মা, খুঁজে ফেরেন তার হারিয়ে যাওয়া ছেলে তপুকে। এখানটায় মনে হবে, আপনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কোনো গল্প পড়ছেন।

কিন্তু তাড়া খেয়ে পাগলের মতো ছোটা তপুর সাথে যখন একইভাবে তাড়া খেয়ে পালানো লোকদের দেখা হয়ে যায়, আর তাদের বলতে শোনা যায়, ‘ওরা আমার ছেলেটাকে হত্যা করেছে হিরোশিমায়। ওরা আমার মাকে খুন করেছে জেরুজালেমের রাস্তায়। আমার বোনটাকে ধর্ষণ করে মেরেছে আফ্রিকাতে। আমার বাবাকে মেরেছে বুখেনওয়াল্ডে গুলি করে...’ ভুল ভেঙে যায়। খুনি ও ধর্ষকের আলাদা কোনো চেহারা, দেশ, ধর্ম, জাত নেই। তবু মানুষ ভুলে যায়, ভুল করে। আর তাই তপুর মা ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে মুহূর্তে বদলে যান।

ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাকসোবন্দি মানুষগুলোর উপর চড়াও হতে যান দা, ছুরি, লোহার শিক নিয়ে। কারণ? যারা তপুকে খুন করেছে তাদের আর এদের আশ্রয়ে নির্ভয়ে ঘুমন্ত মানুষগুলোর ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, ভাষা এক। অতএব, প্রতিশোধ অনিবার্য!

নিজের ব্যক্তিগত পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখতে গিয়ে ভরাক্রান্ত মন হয়ে উঠছে। এ গল্পের মাধ্যমে খোঁজা হয়েছে সেই প্রশ্নের উত্তর যে, পৃথিবীব্যাপী চলা এই যুদ্ধ থামবে কবে? আর কতদিন নিরীহ মানবপ্রেমী মানুষেরা নির্যাতিত হতে থাকবে?  

কিন্তু অপেক্ষার পালা যেন আর শেষই হয় না। সেইসাথে গড়ে ওঠা ধর্ষিত আর খুন হয়ে যাওয়া মানুষগুলো, তাড়া খেয়ে পালানো মানুষগুলোরও আলাদা কোনো জাত নেই। মনে হয়, যেন দুটো জাত আছে। একটা জাত মার খায়, আরেকটা জাত মার দেয়। জীবন কী এভাবে চলে যাবে, নাকি একসময় থমকে যাবে?

জানার কৌতূহল মিটিয়ে নিতে পাঠককে অনুরোধ করব, বইট পড়ুন।

একুশে বইমেলা ২০১৮