পাখির ডানায় ভোর

তমিস্রা তিথি

প্রকাশিত : মার্চ ২৩, ২০১৮

ভোরের আলো ফুটবে কিছুক্ষণ পর।
সকালটা একটু অন্যরকম। জ্বরের ঘোর কেটে গেলে যেমন, তেমন এক ঘোর কেটে যাওয়া বিষণ্ণ সকাল। বাবা যেদিন মারা গেলেন ভিনদেশে, সেদিনও সারারাত জেগেছিলাম। বারান্দায় বসে একা। মায়ের কান্নার শব্দে ভোর হয়েছিল। যেদিন মায়ের লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলাম, সেদিনও খুব ভোরবেলা পৌঁছে গেছি আমরা।

সবুজ স্নিগ্ধ এক ভোর। কান্নার শব্দে জেগে উঠেছিল পাড়া। আমি চুপচাপ ছিলাম। ওই রাতগুলো কেটে গেছে। ওই ভোরবেলার স্মৃতি আজকাল খুব মনে পড়ে না। কত সুখ সুখ মন নিয়ে জেগেছি। প্রজাপতির মতো উড়ে উড়ে কতপথ ধরে হেঁটে গেছি। ক্লান্ত হয়ে জোনাকি পোকার নদীর পারে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যা পার করে ঘরে ফিরেছি।

ঘরকে বিদেশিরা বলে, সুইট হোম। ঘরছাড়া হওয়ার মাঝে শুধু কষ্টই নয়, মুক্তিও আছে। কোথাও ফেরার নাই। কোথাও অপেক্ষা নাই। শুধু বয়ে যাওয়া অথবা কোনও বিষণ্ন ভোরে ছোট্ট কালো তিলের মতো ফুলস্টপ দিয়ে থেমে যাওয়া। জীবন কার হাতের মুঠোয় নেই? পথের যে ভিখিরি, সেও পারে ভিক্ষার থালা ছুড়ে ফেলে শেষমেষ এককাপ চা খেয়ে চাঅলাকে কিছু বাড়তি খুচরো হাতে দিয়ে সম্রাটের মতো ওই ফুলস্টপের দিকে গটগট করে হেঁটে যেতে।

প্রকৃতি উদার অকৃপণ মানুষকে ওইটুকু ঐশ্বর্য দিয়েছে। হয়তো জানে, অসংখ্য মৃত্যূর পথ ধরে যেতে যেতে কখনো কখনো ওইটুকু তার প্রাপ্য হয়ে যায়। পৃথিবীর সুখিমানুষেরা জাগবে। জেগে থাকা কিছু অসুখি মানুষও তাদের ভিড়ে মিশে যাবে। তাদের চোখের কূলে বসে যাওয়া ধ্যাবড়ানো কালি কারো চোখে পড়বে না। তারা প্রাণপণ জেগে থাকবে। তাদের রাত্রি ফুরাবার নয়। তাদের ভোর কখনো পাখির ডানায় নেমে আসে না।