ফাঁস প্রশ্নে ডাক্তার

দীপ্ত উদাস

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৮

ফাঁস প্রশ্নে ভেসে ওঠে অসুস্থ মায়ের মুখ!
অনেকদিন আমরা কোনো ভালো সংবাদ পাই না। কেউ রাতে ঘুমোতে পারে না প্রশ্ন পেয়ে, আর কেউ পারে না প্রশ্ন না পেয়ে। কোন ঘুমটা সার্থক হবে, তা মূলত সময় বলে দেবে, এমন নির্ধারণ এ প্রসঙ্গে অনুমান করা একেবারেই অমূলক! কেননা এর সুদূরপ্রসারী ফল অভিভাবকরা যেমন বোঝেন তেমনি শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসের অবস্থাও নিচু হয়ে যায়। একটি গল্প লেখা যেত এ বিষয়টি নিয়ে। কিন্তু গণিত করতে ইচ্ছে করছে। এতে লাভ সহজে বোঝা যায়। না ধরলে নাকি গণিতের মজা থাকে না! আসুন, ধরি, যে প্রশ্নটি ফাঁস হলো তার উত্তর তৈরি করতে ৩০ পৃষ্ঠার বইয পড়া দরকার হলো। এখন ওখান থেকে সংগ্রহ করে মোট ৩০ পৃষ্ঠার পড়া প্রশ্নক্রেতা ছাত্রছাত্রী মুখস্ত করলো বা জ্ঞানার্জন করে পরীক্ষা দিলো।

আবার ধরলাম, সেই জ্ঞানও তার ভেতর থাকলো। কিন্তু একটি বইয়ের পৃষ্ঠার সংখ্যা তো আর ত্রিশ নয়! ধরুন একশো পৃষ্ঠা। তাহলে ছাত্র বা ছাত্রীটির ৭০ পৃষ্ঠা সম্পর্কে কোনো জানাশোনা নেই, তাই জ্ঞানও নেই। নাকি? এভাবে সে অভিভাবককে, দেশকে এ প্লাস এনে দিয়ে সবার মুখ উজ্জ্বল করলো। আবার ধরুন, যে বাবা কিংবা মা ভাবছে তার ছেলে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা এমনটা কিছু হয়ে তাদের ও দেশের সেবা করবে, সেই অভিভাবক প্রশ্ন কিনছে এ প্লাসের জন্য কিংবা স্বপ্ন পূরণের জন্য। ধরুন, এভাবে প্রশ্ন কিনে ওই ত্রিশ শতাংশ জ্ঞান নিয়ে নিয়ে সে পড়ার সুযোগ পেলো মেডিকেলে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ডাক্তার হলো। পাশের জনের খাতা দেখে, হাতপা ধরে নম্বর নিলো শিক্ষকের কাছ থেকে। ডাক্তার হতে হতে সেই অভিভাবকদের বয়সও নিশ্চয়ই থেমে থাকবে না।

বৃদ্ধ হবে তারা, শরীরে রোগ বাসা বাঁধবে। তারা ভাববে, সন্তানকে তো ডাক্তার বানিয়েছি সে যে করেই (প্রশ্ন কিনে) হোক। আমার রোগ সে সারাবে। সন্তানও প্রস্তুত মায়ের সেবা করার জন্য। সেই মোক্ষম সময়ও প্রস্তুত, দেনাপাওনা মেটানোর আলামতস্বরূপ সেই অভিভাবক (প্রশ্নক্রেতা) অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ছেলেই তার চিকিৎসা করবে। শেষবারের মতো শক্ত করে ধরুন, মায়ের যে রোগটি হয়েছে তা তার ডাক্তার সন্তান আর ধরতে পারছে না। কারণ তার জ্ঞান তো বইয়ের একশো পৃষ্ঠার মধ্যে ত্রিশ পৃষ্ঠায় সীমাবদ্ধ আর তার মায়ের যে রোগ তা বাকি পৃষ্ঠাগুলোর একটি। এইবার আর ধরতে হবে না ছেড়ে দিন। এই ডাক্তার এবার দৌড়াক। তার ও তার মায়ের দৌড়ানোর অধিকার আছে। শিক্ষার আলোহীন একজন মানুষ যেমন ধরণা দ্যায় এখানে সেখানে, সেও দিক। এই সম্মানিত বাঙালি অভিভাবকরা বেঁচে থাকুক সন্তানের হাতে মৃত্যুবরণ করার আগমুহূর্ত পর্যন্ত...