ফিরোজ এহতেশামের একগুচ্ছ কবিতা
প্রকাশিত : মে ১৪, ২০১৮
এই রাতে
কুয়াশায় সমাহিত চরাচর
শীতের গভীর কোনো রাত্রে
হাতে ধরা কোথাকার উলুখড়
এসেছি দিগ্বিদিক হাতড়ে
বাঁশঝাড়, ধানক্ষেত পেরিয়ে
হাতে-পায়ে কাদামাখা, ক্লান্ত
আঁধারের চোরাফাঁদ এড়িয়ে
যেতে হবে, ডাকে ওই প্রান্ত
যেন এক পলাতক আসামী
বহুদিন পরে এলো পাড়াতে
এ বাড়ি কি তার বাড়ি? আয়েশা
দরজাটা খুলে যদি দাঁড়াতে
কিন্তু কোথাও কোনো সাড়া নাই
নিঃসাড় পড়ে আছে চারিধার
তাহলে কি ফিরে যাব? ফিরে যাই
এই রাতে আমি কার, কে তোমার...
অহল্যা
তোমাকে দেখেছিলাম জগতের বিপণিবিতানে
সেই রূপ! আমি মুগ্ধ, সচকিত, তুমি নির্বিকার।
তবু ঘুরে ফিরে আমি তোমার কাছেই চলে আসি
কিছুই বলো না তুমি, হাত ছুঁই গোপনে তোমার।
লোক সমাগম ভুলে, আমি চেয়ে থাকি তোমা পানে
তোমার উজ্জ্বল চোখ, নীল ঠোঁটে মৃদুমন্দ হাসি
বাকরুদ্ধ হয়ে আছো বিগত জন্মের অভিমানে
হে নিশ্চলা, স্থবিরতা, তোমাকে এখনও ভালোবাসি।
লোকে বলে জড়বস্তু, লোকে বলে তুমি ম্যানিকিন
তাদের অজ্ঞতা আমি নিজগুণে ক্ষমা করে দেই
কবে তুমি সাড়া দেবে, অপেক্ষায় আছি বহুদিন
আমার শাশ্বত প্রেম তোমার জড়তা ঘোচাবেই
একদিন হঠাৎ উপেক্ষা করে সকল ভ্রুকুটি
পলক ফেলবে তুমি, অবনত চক্ষু ছলোছলো
নিজেকে জাগিয়ে তুলে, নিশ্চলতা থেকে নিয়ে ছুটি
চেপে রাখা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রেখে বলবে তুমি, চলো।
দ্বৈরথ
কী যে হবে, যা হয় তা হোক
ওঠে ঝড়, হাওয়া সর্বগ্রাসী
আমার বিষণ্ন হন্তারক
এখনও তোমার কাছে আসি
ঘুমন্ত পাড়ার পাশ দিয়ে
মানুষের ক্লান্ত শ্বাস শুনি
পাশে তারা বালবাচ্চা নিয়ে
শুনতেছে ঘুমপাড়ানি...
আমি তবু জাগ্রত আছি
হেলায় হারাই নাই পথ
নিশ্চয় আছ কাছাকাছি
জাগতেছে তাই দ্বৈরথ
হত্যাকারীর কাছে আসা
ভাবি নাই এত মনোহর
এখনও কি সেই সর্বনাশা
ডাক দেয় তোমার ভিতর?
অর্থ না বুঝতে পেরে
যেন ঝুমু নামে মেয়েটির
ঝুমুরের দিকে তাকিয়ে বললাম,
এটা ঝুমুর।
আমি কি তাকে চিনতাম
মনে নাই
পাশ দিয়ে চলে যাবার সময়
শুধু তার শব্দ শুনি
কিন্তু কোনো অর্থ না বুঝতে পেরে
শুয়ে আছি।
ভেসে আসছে কর্পূরের ঘ্রাণ,
মুর্দাফরাশের হাসি।
প্রেমিকার হাজবেন্ড
প্রেমিকাকে তার হাজবেন্ডের কাছে
নিরাপদে পৌঁছে দিয়ে
ফিরে যাচ্ছে বোকাচোকা প্রেমিক
তরুপল্লবের ফাঁক-ফোকর দিয়ে
এই দৃশ্য অবলোকনের কালে
হেসে উঠছে বিধি অন্তরালে
চিৎকার করে ডাকছে পাখিগুলো
প্রেমিক হাঁটে চক্ষু টলোমলো
এমনও বেদনও হায় কে বহিতে পারে?
তুমিও দিয়েছ আজি যারে।
আজিজারে তার পাওয়া তো হলো না আর
তবুও আজিজ হেঁটে চলে বেশুমার
কী কাঁটা লুকানো ছিল যে মাটির তলে
সেই কণ্টক পায়ে ফোটে কৌশলে
খুঁড়িয়ে হাঁটছে প্রেমিক পুরুষ, পাখি মাতে সংগীতে
বড় বড় শিশুগাছে
প্রেমিক ভাবছে আসবে আবার প্রেমিকাকে তুলে দিতে
হাজবেন্ডের কাছে।