রোজা হচ্ছে মুত্তাকি হওয়ার পথে ট্রেনিং

সাগর শাহ

প্রকাশিত : মে ২৩, ২০১৮

ইসলাম বস্তুত আনুষ্ঠানিক ধর্ম নয়। গভীরভাবে পড়াশোনা করলে জানতে বুঝতে সহজ হয় যে, ইসলাম একটি `দীন` অর্থাৎ জীবনব্যবস্থা। এর মূল হচ্ছে তাওহীদ, অর্থাৎ আল্লাহর একক সত্তার ঘোষণা দেয়া এবং সে-ঘোষণা থেকে যেন ঘোষক (মুসলিম) সরে যেতে না পারে, এজন্য সবসময় `তাকওয়া` অবলম্বন করা জরুরি।

তাকওয়া`র আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ্ভীতি। অর্থাৎ আল্লাহকে এমনভাবে ভয় করা যেন তিনি দেখছেন এবং পরকালীন বিচার দিবসের সময় তিনি আমার কাছে কৈফিয়ত চাইবেন। এটা জেনে-বুঝে সকল ধরনের খারাপ ও অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকাই তাকওয়া।

আল কুরআনে সূরা `বাকারা`তে আল্লাহ বলেন, “রোজা তোমাদের জন্য ফরজ করা হয়েছে, যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।" এতে বোঝা যায়, আল্লাহর মনন ও ইচ্ছা হচ্ছে, মুসলিমরা তাকওয়া সম্পন্ন হিসেবে গড়ে উঠুক।

কীভাবে সম্ভব? উত্তর হচ্ছে, আল্লাহ্ আমাদের দেখছেন, এই অনুভূতির জন্য ও আল্লাহ্ভীতির জন্যই রোজা পালনকারী ব্যক্তি খানাপিনা ও বৈধ যৌনকাজ ছেড়ে দেন নির্দিষ্ট সময়ের গণ্ডির ভিতরে। যে ব্যক্তি তাকওয়া সম্পন্ন হিসেবে গড়ে ওঠে, তিনিই ইসলামি পরিভাষায় `মুত্তাকি`। মুত্তাকি শব্দ ওই ব্যক্তিকে নির্দেশ করে আমরা সচরাচর যাকে `পরহেজগার` বলি।

আল্লাহর সোজাসাপটা বক্তব্য হচ্ছে, রোজার উদ্দেশ্যই হচ্ছে মুসলিমরা যেন পরহেজগারি শিখতে পারে। আর আমরা সচরাচর (সবাই নন, অনেকেই কঠোর আল্লাহঅলা ও পরহেজগার) রোজাও রাখি, মিথ্যাও বলি, অন্যকে কষ্টও দিই, অন্যদের জমিও দখল করি, অন্যদের ভোটও চুরি করি, বাকি খেয়ে টাকা মেরে দিই, সারাদিনই কমবেশি গীবত (অন্যের অগোচরে সত্য কথা হলেও তা বলে অন্যকে হেয় করা) করি।

এছাড়া অধিনস্ত কর্মচারীদের বেশি খাটাই, কাজ কমিয়ে দিই না, খুন রাহাজানি মারপিট গালিগালাজ তো চলছেই এবং উপরন্তু নামাজও পড়ি রোজাও রাখি কিন্তু গুনে গুনে পাই-পয়সা হিসেব করে যাকাত দিই না। যা দিই তা বস্তুত থাকে বরাদ্দ, আবার যাও দিই তাও গোপনে দিতে পারি না। ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা না-করার ফলে এটাকে অনেকেই আনুষ্ঠানিক ও আনুমানিক `ধর্মাচার` পর্যায়ে নিয়ে গেছে। অথচ এটা ছিল পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা।

আফসোস, রমজান এলেই কিছু পাইকারি ও সুযোগসন্ধানী খুচরা ব্যবসায়ী সরবরাহ ঠিক থাকার পরেও জিনিসপত্রের দাম অনেক অনেক বেশি বাড়িয়ে দেন দ্রুত মুনাফার জন্য। আফসোস সেইসব নামাজি ও রোজাদারদের জন্য যারা মুনাফা বৃদ্ধির জন্য কোনো সঙ্গত কারণ ছাড়াই নিত্যদিনের খাদ্যমূল্য যাচ্ছেতাইভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে।

রাসুল (সা.) বলেছেন, "সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ীদের কিয়ামতের মাঠে নবি-রাসুলদের সঙ্গে হাসর হবে।" আমরা যার যার অবস্থানে থেকে অধীনস্থ কর্মচারীদের কাজ যেন কিছু না কিছু কমিয়ে দিই, যেন তাদের রোজা পালন সহজ হয়। ডাক্তাররা গরিব-অসহায়দের ভিজিট কমিয়ে দিতে পারেন এই মাসে, আর ব্যবসায়ীরা বছরের অন্যান্য সময়ের মতো লাভ করে, অন্তত রোজার মাসে সাধারণ মানুষের ক্রয়যোগ্যতার উপরে চাপ তৈরি না করেন।

আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, পানাহার আর বৈধ যৌনকাজ পরিহার করাই রোজা নয়, রোজা হচ্ছে সার্বিকভাবে পরহেজগার (মুত্তাকি) হওয়ার কার্যক্রমের পথে একটা ট্রেনিং প্রোগ্রাম মাত্র।