স্ত্রী এবং রক্ষিতা

পর্ব ১৩

সরদার মেহেদী হাসান

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ০৫, ২০১৮

কয়েকদিন ধরে মিতালীর মাথা থেকে রিক্তার কথাগুলো সরছে না। ঘুরেফিরে বিষয়টি মিতালীকে বেশ পীড়া দিচ্ছে। সে বেশ কয়েকবার বাদলকে রিক্তার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছে, কিন্তু বিভিন্ন তালবাহানায় এড়িয়ে গেছে বাদল। বিষয়টি নিয়ে বেশ বড় রকমের ঝগড়াও হয়েছে তাদের মধ্যে। বাদল এসব কারণে কয়েকদিন বাসায়ও নিয়মিত ফিরছে না। কোথায় থাকে, কোথায় যায়, কী করছে, কিছুই মিতালীকে বলে না।

বাদল মাসির বাসায় গিয়ে, রিক্তা যে ঘরে থাকত সেই ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছে। সে মিতালীর উপর বেশ রেগে আছে। রিক্তার কথা জানার পর থেকে মিতালী ও তার ছেলেমেয়েরা তার সাথে প্রায়ই খারাপ ব্যবহার করছে। সে মনের দুঃখে মাসির বাড়ি এসে শুয়ে আছে। দিনটা ভালো যাচ্ছে না, ঘড়ির কাঁটার চেয়ে দ্রুত চলছে সময়। সে কোনোভাবেই ভুলতে পারছে না রিক্তাকে। বাদল যোগাযোগের জন্য রিক্তাকে একটা মোবাইল কিনে দিলেও, সেটা এখন বন্ধ।

দেয়ালে ঝুলন্ত ঘড়িটার টিকটিক শব্দ বাদলের কাছে খুবই যন্ত্রণাদায়ক বলে মনে হচ্ছে। তার জীবনটা দেয়াল ঘড়ির ঘণ্টার কাঁটার মতো থেমে থেমে চলে। সে কয়েকদিনে বহুবার রিক্তাকে ফোন পাবার চেষ্টা করেছে কিন্তু রিক্তা ফোন রাখায় বাদল তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি।

দরজায় ঠকঠক আওয়াজ।
কে?
আমি মাসি, দরজা খোলো।
বাদল অনেকটা বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে দাঁড়ায়।
কী মিয়া, একা একা ঘরে কি করো? আমারে ডাকো না, আবার অন্য মাইয়ারেও ডাকো না, সমস্যা কি মিয়া?
বাদল কথা না বলে বিছানায় গিয়ে বসে পড়ে।
ওই মিয়া, তোমারে আগেই কইছিলাম, মাইয়াডারে যাইতে দিও না। কচি শরীর, যতদিন পারো মজা করো। এমন আনকোড়া মাল ঘরে থাকলে লোকের অভাব হয় না। তুমি কীনা তারে যাইতে দিলা? তুমি মিয়া আমার অনেক লস কইরা দিছো। নিজেও চুদলানা, অন্যরেও চুদতে দিলা না...
বাদল চুপ।
শোনো মিয়া, কতদিন এই ঘর হুদাই হুদাই ভাড়া নিয়ে ফেলে রাখবা, ছাইড়া দাও। নতুন মাইয়া আইনা ওঠাই। ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। নতুন নতুন মাইয়া না আনলে ব্যবসা হয়? তুমি কি রাতে এহানে থাকবা?
বাদল মাথা নাড়ায়, হ্যাঁ।
আচ্ছা ঠিকাছে, আমি গেলাম। দরকার হইলে ডাইকো। বিড়বিড় করতে করতে মাসি ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

মাসি মাঝবয়সী। বয়সে বাদলের চেয়ে কয়েক বছরের বড় হবে। এই মাসির সাথেও বাদল বেশ কয়েকবার মেলামেশা করেছে। পুরুনো মাল বেশিদিন ব্যবহার করেনি বাদল। সে নতুন নতুন মেয়েদের সাথে মেলামেশা করত। কিন্তু শরীরের স্পর্শ পাবার পর থেকেই পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন তার অন্যকোনো মেয়েকে ভালো লাগে না। তার মনের ভিতর রিক্তার চিন্তাই ঘুরপাক খায়। দরজায় আবারও ঠকঠক আওয়াজ। ধুত্তেরি, আবার কে! কে?
আমি খোলো।
আবারও মাসি ঘরে এসে হাজির।
তোমার কোনো কাম নাই?
থাকবো না ক্যান? ক্যা কী হইছে?
একটু রেস্ট নেব সেইটা তো তোমার কারণে পারতেছি না।
অ তাই, তা কইলেই হয়। শরীর ম্যাসেজ কইরা দিমু, আরাম পাইবা।
না না লাগবে না। আমি এমনিতেই একটু একা একা শুয়ে রেস্ট নিতে চাই।
রাতে কি খাবা?
তোমাদের যা হয়, তাই খাবো।
আচ্ছা ঠিকাছে, বলে মাসি ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। বাদল অনেকটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। নাহ, দিনটা ভালো গেল না। শুধুই ঝামেলা। এরই মধ্যে মোবাইলের মিতালীর ফোন এসেছে কয়েকবার। সে ফোন রিসিভ না করে সাইলেন্স করে রেখেছে। বাদল এবার ঘরের দরজাটা আটকে অশান্ত মন নিয়ে, বিছানার উপর শরীরটা বিছিয়ে দিল। ঘরের মধ্যে নিঃস্তব্ধতা। হালকা করে ফান ঘুরছে মাথার উপর। চিৎ হয়ে দু পা প্রসারিত করে অনেকটা নির্ভার হয়ে শুয়ে আছে সে। হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। ঠকঠক ঠকঠক। বাদল চুপ করে আছে। আবারও ঠকঠক ঠকঠক।

অশান্তির শেষ নেই। বাদলের মেজাজ গরম হয়ে গেল। মনে হচ্ছে দৌড়ে গিয়ে দরজার বাইরে দাঁড়ানো মানুষটাকে লাথি দেবে। কিন্তু বাইরে কে! বাদল চিৎকার করে বলল, কে?
আমি রিক্তা।

চলবে