অক্টাভিও পাজ

অক্টাভিও পাজ

অক্টাভিও পাজের কবিতা ‘যেমন কেউ বৃষ্টির কথা শোনে’

ভাষান্তর: মুহাম্মদ আবদুল বাতেন

প্রকাশিত : আগস্ট ১৭, ২০২৫

আমার কথা শোনো,
যেমন কেউ বৃষ্টির কথা শোনে,
মনোযোগী নয়, বিক্ষিপ্তভাবে নয়,
হালকা পদচিহ্ন, মন্থর বৃষ্টিপাত,
জল যা বাতাস, বাতাস যা সময়,
দিন এখনও চলে যাচ্ছে,
রাত এখনও আসেনি,
কুয়াশার মূর্তি
কোণের মোড়ে,
সময়ের মূর্তি
এই বিরতির মোড়ে,
আমার কথা শোনো,
যেমন কেউ বৃষ্টির কথা শোনে,
শুনে না শুনে, কী বলি তা শোনো
চোখ খোলা রেখে, ঘুমিয়ে
পাঁচটি ইন্দ্রিয় জাগ্রত রেখে।
বৃষ্টি হচ্ছে, হালকা পদচিহ্ন,
উচ্চারণের গুঞ্জন,
বাতাস এবং জল, ওজনহীন শব্দ:
আমরা কী এবং কী আমাদের অস্তিত্ব
দিন এবং বছর, এই মুহূর্ত,
ওজনহীন সময় এবং ভারী দুঃখ,
আমার কথা শোনো,
যেমন কেউ বৃষ্টির কথা শোনে,
ভেজা পিচ জ্বলজ্বল করছে
বাষ্প উঠে চলে যাচ্ছে,
রাত্রি উন্মোচিত হয়ে আমার দিকে তাকায়,
তুমি তুমি এবং তোমার বাষ্পের শরীর,
তুমি এবং তোমার মুখ  রাত,
তুমি আর তোমার চুল, অবিচলিত বিদ্যুৎ,
তুমি রাস্তা পার হও এবং
আমার কপালে প্রবেশ করো,
আমার চোখে জলের পদচিহ্ন,
আমার কথা শোনো
যখন কেউ বৃষ্টির শব্দ শোনে,
ডামার জ্বলজ্বল করছে,
তুমি রাস্তা পার হও,
এটা কুয়াশা, রাতে ঘুরে বেড়ানো,
এটা রাত, তোমার বিছানায় ঘুমাচ্ছে,
এটা তোমার নিঃশ্বাসে ঢেউয়ের ঢেউ,
তোমার জলের আঙুল
আমার কপালকে ভিজিয়ে দেয়,
তোমার শিখার আঙুল
আমার চোখ পোড়ায়,
তুমার বাতাসের আঙুল
সময়ের চোখের পাতা খুলে দেয়,

দর্শন এবং পুনরুত্থানের ঝর্ণা,
তুমি কি বৃষ্টির শব্দ শোনো,
বছর চলে যায়, মুহূর্তগুলো ফিরে আসে,
তুমি কি পাশের ঘরে পদচিহ্ন শুনতে পাও?

এখানেও না, ওখানেও না:
তুমি তাদের শুনতে পাও
অন্য সময়ে যা এখন,
সময়ের পদচিহ্ন শুনো,
কোনও ওজন ছাড়াই
স্থানের আবিষ্কারক,
বারান্দার উপর দিয়ে
বৃষ্টির শব্দ শোনো,
রাত এখন আরও রাতের মতো,
পাতার মাঝে বিদ্যুৎ এসে বসল,
একটি অস্থির বাগান ভেসে গেল-ভেতরে যাও,
তোমার ছায়া এই পাতা ঢেকে রাখবে।

কবি পরিচিতি: মেক্সিকান কবি, লেখক ও কূটনীতিবিদ অক্টাভিও পাজ লোজানো ১৯১৪ সালের ৩১ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। পিতা অক্টাভিও পাজ সলোরজানো ও মা জোসেফিনা লোজানো। অল্প বয়সেই পাজ তার পিতামহের মেক্সিকান ও ইউরোপীয় সাহিত্য সমৃদ্ধ লাইব্রেরির মাধ্যমে সাহিত্য জগতের সাথে পরিচিতি লাভ করেন।

১৯২০ এর দশকে পাজ ইউরোপীয়ান কবি জেরারদো ডিয়োগো, রোয়ান রেমন জিমেনেজ ও এন্তোনিও মাচোদা প্রমুখের কবিতার সাথে পরিচিত হন। পাজের প্রারম্ভিক সাহিত্যে স্প্যানিশ লেখক আন্তোনিও মাচোদার প্রভাব গভীরভাবে পরিলক্ষিত হয়। তার সৃষ্টিকর্ম পৃথিবীর অনেক ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

১৯৩১ সালে ডি এইচ লরেন্স অণুপ্রাণিত কিশোর পাজ ক্যাবেরেল্লাসহ তার প্রথম জীবনের কিছু কবিতা প্রকাশ করেন। দুই বছর পরে ১৯ বছর বয়সে পাজ তার কবিতা সংগ্রহ লুনা সিল্ভেস্টার (বুনো চাঁদ) প্রকাশ করেন। ১৯৩৯ সালে পাজ নিজেকে প্রধানত কবি হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করেন। পাজ ১৯৯৮ সালের ১৯ এপ্রিল ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান।