আকরাম খান

আকরাম খান

আকরাম খানের একগুচ্ছ কবিতা

প্রকাশিত : জুন ২২, ২০২০

করোনা ভূত

একটা ভৌতিক স্বপ্নে জেগে উঠি
নাকি আছি এখনো স্বপ্নের ভিতরেই!
মুগধা`র বারোশো তিন নম্বর কেবিনে
আমি পটল তুলেছি
তুমিও আজ বিগত
তদন্তে জানা গেছে, সর্ষের ভেতরে ভূত নাই
প্রতিবেদনে স্পষ্ট মুদ্রিত—
আজ থেকে আমরা করোনার ভূত!
লম্বা লম্বা করিডোরে মাস্ক, পিপিই পড়ে ভেসে বেড়াই
এগারো তলার বারান্দা থেকে মিয়া-বিবি উড়াল দেই
শহরের দিকে
রাতের আন্ধারে সাদা সাদা প্রেতাত্মা,
খুঁজে-ফিরি নষ্ট লিভার পচা ফুসফুস
ইস, পাইতাম যদি একটা ডায়বেটিস!
দরজা জানালায় খিল দিয়ে ঘরে বসে আছে
নাজুক ছোরা-ছুরি বুড়া-বুড়ি
জানালায় জানালায় উঁকি দেই আর
অম্বিকাপুরের শ্মশানে শেখা মন্ত্র জপি
গুড়ার লগে পারুম না, বুড়ারে ছাড়ুম না
বুড়ারে ছাড়ুম না, গুড়ার লগে পারুম না...!

প্লাস্টিক

নিসর্গপ্রেমী আমি চিৎকার করে বলেছি, প্লাস্টিকেই সর্বনাশ
কী প্রহসন! প্লাস্টিকময় জীবন তাহার সাথেই এখন সহবাস
প্লাস্টিক পরে সঙ্গমের ইলিয়াসের কাছে
জানতে চাওয়া হয়েছিল অভিমত
রসিক ইলিয়াসের চুটকি... রেইনকোট পরে বৃষ্টি বিলাস!
প্লাস্টিকে সারি স্নান
তাহার প্রশস্তিতে কাব্য রচনা আর গান
প্লাস্টিক মুড়িয়ে জন্মনিরোধ
প্লাস্টিক বিপ্লব
প্লাস্টিকেই মহামারি প্রতিরোধ!

বসরাই গোলাপ

জীবন আর জীবিকার মেলাতে সমীকরণ
লেফট রাইট, লেফট রাইট কমরেড সামনে মরণ।
চাল নাই, নাই চুলা পাই না সমাধান
ভিনদাস! হেরে গলায় ধরি তব গান।
৫৭ ধারায় ফিসফাস, হাওয়ায় মুর্দার গন্ধ
বালিশের তলায় নজরুল, ঘুম হারাম মেলাতে ছন্দ।
গোড়া থেকে সব বিদ্বেষই আসলে জাতিগত
কবিতা আমার কিসের আবার বালের ব্যক্তিগত।
ধুতুরার বীজে মাটিচাপা যত প্রলাপ
ফুটবে-ফুটবেই একদিন হয়ে বসরাই গোলাপ।

আমার চোখের চিকিৎসক
ডা. জাহাঙ্গীর আলম মুকুটকে

আমার চোখের চিকিৎসক
ঈসা নবির মতো যার স্পর্শে বাড়ে দীপ্তি!
মহামারিতে ঘরবন্দি আমি ভাঙা চশমা চোখে
তার অভাব হাড়ে হাড়ে টের পেতাম।
বই পড়তে খুব কষ্ট হতো
ভাতের দানাগুলোকে যখন আলাদা করতে পারতাম না
মনে হতো, কবে চোখ দেখিয়ে চশমা নিব।
তার মুখে লেগেছিল পরিচিত ভরসার হাসি,
ধবধবে অ্যাপ্রোনের শুভ্রতায় চোখের পীড়া দূর হয়ে যায়!
পরিষ্কার নখ কিন্তু হাতের গড়নে স্পষ্ট
গাইবান্ধায় পরদাদারা লাঙলের ফলায় অনেক উপড়েছে
ক্ষেতের শক্ত মাটি।
করোনা নিরাময়ের পর চোখ দেখাতে গিয়েছিলাম,
সম্মানি নিয়ে একটু জোর করতেই দিলো কপট ধমক।

দিনরাত দিয়েছে সেবা, অসহায়ের শুশ্রূষা
অমূল্য তার দরদি হৃদয়
ডাক্তারতো জানে আসলে হৃদযন্ত্র!
কলকব্জায় জং ধরেছিল
অবহেলায় বসে গেল।
চলে গেল আরেকটা আস্ত খাঁটি মানুষ!