আফগানিস্তানে আবারও পাকিস্তানের গোলাবর্ষণ, বাড়ছে উত্তেজনা

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : নভেম্বর ০৭, ২০২৫

আফগান ভূখণ্ডে আবারও গোলাবর্ষণ চালানোর অভিযোগ উঠেছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার আফগান সামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা ও স্থানীয় বাসিন্দারা ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন।

 

তারা জানিয়েছেন, পাকিস্তানি সেনারা সীমান্তবর্তী বেসামরিক এলাকায় হালকা ও ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট ধরে গোলাবর্ষণ চালায়। এখন পর্যন্ত আফগান বাহিনী কোনো পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আফগান সামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, “ইস্তাম্বুলে চলমান শান্তি আলোচনার কথা বিবেচনা করে আমরা এখনো জবাব দিইনি।”

 

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। গত মাসের প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর যুদ্ধবিরতি চূড়ান্ত করতে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের প্রতিনিধি দল তুরস্কে আলোচনায় মিলিত হয় এর মধ্যেই সীমান্তে সংক্ষিপ্ত গোলাগুলি বিনিময় হয় এবং উভয় দেশই একে অপরকে দোষারোপ করে।

 

৬ নভেম্বর ইস্তাম্বুলে শুরু হওয়া এই আলোচনার উদ্দেশ্য ছিল ১৯ অক্টোবর দোহায় অনুমোদিত যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে কার্যকর রূপ দেওয়া, যা পূর্ববর্তী সপ্তাহে সংঘটিত সহিংসতা ও প্রাণহানির অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছিল।

 

আফগান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, “ইস্তাম্বুলে আলোচনার তৃতীয় দফা শুরু হলেও আজ বিকেলে পাকিস্তানি বাহিনী আবারও স্পিন বোলদাকের ওপর গুলি চালিয়েছে, যা স্থানীয় জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।”

 

তিনি আরও বলেন, “আফগান বাহিনী আলোচনায় অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এখনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। স্পিন বোলদাক আফগানিস্তানের দক্ষিণ কান্দাহার প্রদেশে অবস্থিত।”

 

পাকিস্তানের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে জানায়, গোলাগুলি শুরু করেছিল আফগান বাহিনী। চামান সীমান্তে আজকের ঘটনায় আফগান পক্ষের প্রচারিত দাবি আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।

 

পাকিস্তানি সেনারা জানায়, তারা পরিমিত ও দায়িত্বশীল উপায়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

কান্দাহারের তথ্য বিভাগের প্রধান আলি মোহাম্মদ হাকমাল বলেন, “সংঘর্ষ সংক্ষিপ্ত হলেও তাতে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়। বাসিন্দাদের বরাতে জানা যায়, গোলাগুলি প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট স্থায়ী হয়েছিল। পাকিস্তান জানিয়েছে, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত।”

 

অক্টোবরের শুরুতে কাবুলে একাধিক বিস্ফোরণের পর সীমান্তে তীব্র সংঘর্ষে প্রায় ৭০ জন নিহত হয়। এর মধ্যে অন্তত ৫০ জন আফগান বেসামরিক নাগরিক।

 

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এটি দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

 

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী জানায়, সেই সংঘর্ষে তাদের ২৩ সৈন্য নিহত ও ২৯ সৈন্য আহত হয়। যদিও কোনো বেসামরিক হতাহতের তথ্য তারা প্রকাশ করেনি।

 

২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই ইসলামাবাদ ও কাবুলের সম্পর্ক ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে। সীমান্তে জঙ্গি হামলা, পাল্টা অভিযান এবং পারস্পরিক অভিযোগে দুই দেশের উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে।

 

ইসলামাবাদ অভিযোগ করছে, কাবুল তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) মতো গোষ্ঠীগুলিকে আশ্রয় দিচ্ছে, যারা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা চালায়। তবে আফগান তালেবান সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

 

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৯ অক্টোবর দোহায় তুরস্ক ও কাতারের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তবে ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত এর বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত বৈঠক গত সপ্তাহে স্থবির হয়ে পড়ে। উভয় পক্ষই একে অপরের প্রতি অবিশ্বাস ও চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ তোলে।

 

বৃহস্পতিবার আলোচনার আরেক দফা বসার কথা থাকলেও স্থানীয় সময় রাত পর্যন্ত বৈঠক হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, আলোচনায় অগ্রগতি না হলে সীমান্তে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সূত্র: আল জাজিরা