চাঁদ সোহাগীর ডায়েরী

পর্ব ৪৭

শ্রেয়া চক্রবর্তী

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২০

মেয়েটির জীবনে এতকিছুর প্রয়োজন ছিল না হয়তো। একজনকে ভালোবেসেই জীবনটা কাটিয়ে দেয়া যায়, যেত। এখন মনে হয়, ভেতর ভেতর মেয়েটি খুব থিতু সংসারী একটা মানুষ। কেবল যার ভালোবাসার আকাঙ্ক্ষা গগনচুম্বী। এই আকাঙ্ক্ষা সকল সাধারণের ভালোবাসার নয়। একান্ত নিজস্ব এক প্রেমিকের। কেবল যা না পেলে সরল সাধারণ মেয়েটিও অতিকায় হয়ে ওঠে। তার পথ বেঁকে যায় অযুত সম্ভাবনার দিকে।

মেয়েটি হয়তোবা কারোর পথ আগলিয়ে দাঁড়াতে চেয়েছিল। এ মহা পৃথিবীতে কেই বা কার পথ আটকাতে চায়! কার জন্য কারো কিছু এসে যায়! ভালোবাসা ছাড়া? তবু যে পথ চৌকাঠ ডিঙিয়ে বহুদূর চলে যায় আরো বহু চৌকাঠের নিবিঢ় স্পর্শ নিয়ে, এই যে সত্য, তা মেনে নিতে শিখে মেয়েটি যতই না চৌকশ হয়ে উঠলো, ভেতর ভেতর রয়ে গেল সেই সে এক পথ আগলানো মেয়ে, ঘর বাঁধতে চাওয়া মেয়ে।

মেয়েটির জীবনে এতকিছুর প্রয়োজন ছিল না হয়তো। কোনও এক একান্ত নিজস্ব প্রেমিকের বুকের ওমটুকু দিয়ে তৈরি যে অর্বুদ, কেবল যদি তাই দিয়ে তাকে আগলে রাখা যেত, দ্বন্দ্বহীন ভালোবাসায়। যে মেয়ের অনেক প্রেমিক, হয়তো সেই মেয়েটিই আসলে বড় প্রেমহীন এই সন্ধ্যায়।

দুই.
ব্যাকসিট থেকে দৃশ্যমান হয় কেবল কানের লতিটুকু। কাচে লাগা হলুদ আলোয় অনুমেয়, ছেলেটি ফর্সা, গালে চাপদাড়ি। লুকিং গ্লাসে চোখে চোখ লাগে পাছে, তাই সরে বসি একপাশে।

হঠাৎ কেন মনে পড়ে যায়, উল্টোদিকের বাড়ির ছাদে পঞ্চাশোর্ধ কাকিমার কলাগাছের গুড়ির মতো স্থূল ফর্সা পায় ধ্যাবরা করে মাখানো আলতার আশ্চর্য আবেদন আমাকে ঠাঁয় জানলায় দাঁড় করিয়ে রেখেছিল পৌনে পাঁচ মিনিট!

বাড়িতে আজ তুমুল কলহ। শুধু মানিব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছি। কোথায় পৌঁছলাম তাতে কি এসে যায়, যখন বেরিয়ে পড়াটাই একমাত্র পথ?

ওহে ছেলে, জানলার কাঁচ তুলে দে।
হাওয়ায় হাওয়ায় খবর ছড়াক ওদের
আমাদের তাতে প্রয়োজন কি?
সারা শহরে আজ ভালোবাসার উদযাপন
হোক, তাতে আজ আমাদের প্রয়োজন আছে কিছু?
যারা ভালোবাসে, বাসুক
যারা চুমু খেতে চায়, খাক
যারা তারও অধিক কিছু, ঢলে যাক
ব্যাকসিট থেকে আমি কেবল তোর কানে কানে
দু’কলি গেয়ে শোনাবো
উড়ন্ত পুড়ন্ত জীবনের গান—

চিন্তা করিস না ছেলে। তুই স্টিয়ারিংয়ে থাক যতক্ষণ আমি চাই।
ভাড়াটা আমি ঠিক মিটিয়ে দেব।