চিত্রকর্ম: কাহলিল জিবরান

চিত্রকর্ম: কাহলিল জিবরান

জাহানারা পারভীনের গদ্য ‘প্রফেট’

পর্ব ১

প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৯

১৯১৮ সালের এপ্রিল। এলিয়ট যাকে বলেছেন নিষ্ঠুর মাস, জিবরানের কাছে তা এক মহাকাব্যিক সময়। এপ্রিল এলিয়টকে দিয়েছে বন্ধুর মুত্যুশোক। জিবরানকে ফিরিয়েছে লেখার কাছে। এ এক কঠিন বৈপরীত্য: একই দেশে, কাছাকাছি সময়ে বড় হওয়া দুই কবির জীবনে।

তারুণ্যে যে লেখার পরিকলন্পনা, একটু একটু করে যার বীজ বুনেছেন, ১৯১২ সালে যে লেখার শুরু, সাত বছর পর তৈরি হলো সেই লেখার কাঠামো। এর মাঝে কেটে গেছে সময়। লিখতে না পারার যন্ত্রণার সঙ্গে যোগ হয়েছে ভাষা খুঁজে না পাওয়ার আক্ষেপ। এর মাঝে চলেছে অন্য সব লেখা। শুধু বারবার বিরতি এসেছে এই একটি লেখায়। এত সময় আর কোনও লেখার জন্য নেননি। দীর্ঘদিন পর খুঁজে পেলেন প্রত্যাশিত ভাষা। নবীন অভিযাত্রীর হিমালয় জয়ের মতো এই আবিষ্কার। জিবরান চিরকালই এক নিঃসঙ্গ মানুষ। চারপাশের ভিড় বাঁচিয়ে একলা হেঁটেছেন।

কারো হৃদয় যখন ছোট পৃথিবীতে রূপান্তরিত হয়, তখন সে সবার কাছ থেকে একা হয়ে যেতে চায়। একা থাকাই যেন নিয়তি তার। যেন তিনি অচেনা অভিযাত্রীদের মাঝে পর্বতের চূড়ার দিকে হেটে যাওয়া নিঃসঙ্গ শেরপা। নতুন ভাষার খোঁজ তাকে পৌঁছে দেয় নতুন কাব্যিক গন্তব্যে। এ যেন পর্বতের শীর্ষে উড়িয়ে দেয়া নিজের পতাকা। বরফের ক্যনভাসে স্বাক্ষর করা নাম। বাতাসে ছড়িয়ে দেয়া সত্তার প্রতিধ্বনি। মহাবিশ্বের পটভূমিতে মৃত্যুর মতো একাকিত্বে এ যেন নিজের সঙ্গে নিজের যুদ্ধ। যুদ্ধের পর আবিস্কৃত হয় এক পরম ভাষা। যে ভাষা চিরকল্যাণকামী। যেখানে পাওয়া যায় আনন্দময় জগৎ। অভিজ্ঞানের আলো অন্ধকারে মানুষ খুঁজে পায় আশা-ভালোবাসার পবিত্র পৃথিবী। এ পৃথিবীর প্রধান বাসিন্দা একজন কবি। অন্যদের কাছে যিনি দূরত্বের দৃষ্টান্ত। অনুকরণীয় জন। তার কাছে ভিড় করে হাজারো মানুষ। অন্ধকার গুহা থেকে যুক্তির আলোয় তারা খোজে আত্মার মুক্তি।

মানুষকে জিবরান খুঁজতে চেয়েছেন প্রথার বাইরে। মানুষের প্রতি তার অগাধ আস্থা। এখানে তিনি এঁকেছেন ব্যতিক্রম জীবনের মানচিত্র। আলোকিত এপ্রিলে। শহর থেকে দূরের বাগান বাড়িতে। ধনী বন্ধুর আতিথেয়তায় কাটানো দিনে চূড়ান্তভাবে ফেরা সম্ভব হয়েছে অসমাপ্ত লেখার কাছে। সেই দ্বীপের ঈশ্বরের কাছে। ছয় বছর আগে যার কথা প্রথম লিখেছেন। সেই নবীর গল্প। যে নির্বাসিত এক দ্বীপে। দ্বীপের পাশে সমুদ্র, পর্বত। তার মনে হয়েছে প্রফেটের নির্বাসনের জন্য দ্বীপই হবে উপযুক্ত স্থান। কারণ দ্বীপে থাকতে পারে পর্বত, সমুদ্র। মেরিকে বলেছেন, এই দ্বীপে একটা পর্বত বসাতে পারি। পর্বতের ওপরতো আর দ্বীপ বসাতে পারব না। দ্বীপ মানে অনেক সম্ভাবনা। দ্বীপ প্রধান জনপদ থেকে কাছে হতে পারে; যেখান থেকে নগর দেখা যাবে।

প্রাথমিক ভাবনাই থেকে যায় সিদ্ধান্তে। মোস্তাফার নির্বাসনের জন্য বেছে নেন শহর থেকে দূরের দ্বীপ। যেখান থেকে পুরো এলাকা দেখা যায়। যার চারপাশে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। সমুদ্রের আদিগন্ত জলরাশি। ১৯১২ সালের জুন মাসে মেরির জার্নালে প্রথম পাওয়া যায় এই লেখার প্রসঙ্গ। আজকে তার নতুন লেখার প্রথম লাইনটি লিখেছে। দ্বীপের ঈশ্বরকে নিয়ে। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই নির্বাসন হবে একটা দ্বীপে। প্রথম অধ্যায়ের নাম হবে আরবিতে। নতুন চাঁদের নামে। সাত হাজার বছর শেষে নগরীর কাছাকাছি সমুদ্র তীরে সে তার নৌকা ভিড়িয়েছে। একা। আমরা জানতে পারি কেন সে ঈশ্বরকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে। অন্যসব মানুষের মাঝে। এবং শেষ পর্যন্ত কেন সে সবাইকে ফেলে চলে যাচ্ছে। কারণ সে আগুনকে গ্রহণ করতে সক্ষম। একদিনেই কাজ অনেকটা এগিয়েছে। এই গডের নাম সে রেখেছে আল-মোস্তাফা।

মেরির সঙ্গে আলাপে এই লেখাকে কখনও আমার বই, কখনও আল-মোস্তাফা, কখনও বা কাউনসেল বলে সস্বোধন করেছেন। তার কথায় নানা সময়ে এসেছে সেই ঈশ্বর, তার নির্বাসনের প্রসঙ্গ। ধীরে ধীরে এগিয়েছে কাহিনি। এর মাঝেই লেখা হয়েছে ম্যাডম্যান, ফোররানার। লেখা শেষ হলে মাসের পর মাস ফেলে রেখেছেন। কিছু ছাপতে দিয়েছেন। ফেলে রাখা পাণ্ডুলিপি থেকে কয়েক লাইন উদ্ধৃত করা মানে সেটা ছাপার উপযুক্ত। নানা সময়ে নতুন লেখার অগ্রগতির কথা জানিয়েছেন মেরিকে। আলাপে এসেছে আল-মোস্তাফার কথা।

মেরিকে জানান কিভাবে আল-মোস্তাফা দ্বীপে বারো বছর অপেক্ষা করেছেন। বেগুনি পাল তোলা জাহাজের। কিভাবে নিজের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছে শহরের সঙ্গে জুড়ে থাকা পোশাকি বেদনা। আল মোস্তাফা নামের পুনরাবৃত্তি সম্পর্কে বলেন, লেখার শুরুতে মাত্র একবার ব্যবহার করা হবে আল মোস্তাফা নাম। এরপর পুরো লেখায় তাকে হি বলে বোঝানো হবে। আরবি শব্দ আল মোস্তাফার অর্থ বিশেষ কিছু। এমনকি দা চোজেন ও দা বিলাভেড শব্দের অর্থও আলাদা। ইংরেজীতে এসব বোঝানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ শব্দ নেই। সিদ্বান্ত হয়, শুরতেই আল মোস্তাফা নামের পর যোগ করবেন দা চোজেন এন্ড বিলাভেড।

মেরি আল মিত্রা নামের অর্থ জানতে চাইলে বলেন, এর মানে স্মৃতির জমিন। বলেন, এখানে যা লেখা হয়েছে সবই মনের বিভিন্ন বিষয়। প্রতিটি বিষয় বৃহত্তর অর্থে জীবনের প্রতীক। বলেন, আমাদের বর্তমান আরও বড় ভবিষ্যতের বিপরীতে আমাদের বহন করে বেড়ায়। মেরির পরামর্শে শেষ পর্যন্ত জাহাজের বর্ণনা থেকে বেগুনি পাল শব্দটি বাদ দেন। মেরিকে জানান, আরও বছর পাঁচেক লেখাটা আমার সঙ্গে থাকবে। কাঠামো ঠিকঠাক হয়ে আছে। এর মধ্যে আরও দু’তিনটি বইয়ের কাজ শেষ হয়ে যাবে।

বছর শেষে মেরি জার্নালে লেখেন, এই লেখার নতুন নাম রাখা হয়েছে কমনওয়েলথ। ১৯১৩ সালের এপ্রিল নাগাদ তিনটি অধ্যায় শেষ শেষ হয়েছে। ১৯১৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর মেরির জবানিতে জানা যায়, সারারাত সে কমনওয়েলথ নিয়ে পড়েছিল। একটুও ঘুমায়নি। টানা লিখে গেছে। জন্ম, শিক্ষা, জীবন, বিয়ে মৃত্যু নিয়ে বিস্তারিত ভাবনা। এসব ভাবনার পেছনে কোনও ব্যক্তিত্ব বা কাছ থেকে দেখা চরিত্র প্রভাব ফেলেছে কীনা জানতে চাইলে না বাচক উত্তর দেন। বলেন, এই লেখার ফর্ম প্রফেটিক। একটা বড় ফর্ম। শক্তি নিয়ে যা বলেছেন তা খুব সহজ। তারা সম্মত হয়েছে যে স্টেনফোর্ড হাইটের খুনী হোইকে দুই মিলিয়ন ডলার দিতে হবে স্টেনফোর্ডের পরিবারকে। সেই কৃষককে খুন করা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধ সেই পরিবারের যতটা ধ্বংস করেছে, যত ক্ষতি হয়েছে তাদের তা পূরণ করতে বাধ্য করতে হবে। সেই কৃষক বেঁচে থাকলে যতটা অর্থ উপার্জন করত তত টাকা দিতে হবে তার পরিবারকে। এটা খুব সহজ সমাধান।

জিবরান আরও বলেন, জীবনের অন্য অর্থও ভেবে দেখেছেন। শেষ পর্যন্ত বেছে নিয়েছেন সহজ বাস্তবতা। সহজ, স্বতন্ত্র এবং প্রকৃত অবস্থা বলতে পাগলামি বোঝায়। তাই সহজ বাস্তবতাকেই বলা যায় মেডনেস বা পাগলামি। মেরি প্রশ্ন করেন, তোমার কমনওয়েলথ তাহলে পাগলদের রাজ্য?

ঠিক ধরেছ, বলেন জিবরান। মেরি জানতে চান, তুমি কি শুধু বাহ্যিক সম্পর্কের কথা বোঝাতে চাইছ? নাকি এ সবই অন্তর্গত সম্পর্কের সংকেত? জিবরান বলেন, এসব নিয়েও ভেবেছি। আমার মনে হয় এসব বিষয়ের মধ্যে সংযোগ ছাড়া এগুলো অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এসব নিয়ে একটু বিস্তারিত বলেছি। যদিও সবকিছু হবে সংক্ষিপ্ত। আমার বিবেচনায় প্রকৃত বই হবে ছোট। কাজ নিয়ে অধ্যায়টা কত ছোট, দেখ!

বারবার লেখার অগ্রগতির কথা জানিয়েছেন মেরিকে। তার মতামত চেয়েছেন। ১৯১৪ সালের ১৪ নভেম্বর বলেন, যতটা এঁকেছেন, তার চেয়ে বেশি লিখেছেন। আঁকার চেয়ে লেখার সংখ্যা বেশি। কিছু লিখেছেন যুদ্ধের সময়। কিছু কমনওয়েলথ এ। বাকিগুলো আলাদা। মেরি জানেতে চান বিয়ে সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি কমনওয়েলথ এ আছে কীনা। জিবরান জানান, কমনওয়েলথ এ বিয়ে বিষয়ক অধ্যায়টাই বিয়ে সম্পর্কে তার ভাবনা। সাধারণ, আটপৌরে অথচ বড় বিয়য়গুলো নিয়েই কথা বলেছেন এখানে। মনে হয় এটা তার জীবনের সেরা কাজ। মোস্তাফার লেখাটার মতো। মনে হয়, এই দুটো লেখাই সেরা কাজ, সব লেখার প্রতিনিধি। ১৯১৫ সালের এপ্রিলে একটা জার্নালে কমনওয়েলথ ও আল মোস্তাফা ছাপা হয়। এ দুটোকে মিলিয়ে একটা লেখায় পারিণত করার কথা ভাবেন।

হয়ত কমনওয়েলথ আলাদা করে ছাপব না। মোস্তাফার মুখ দিয়ে এসব কথা বলিয়ে নেব। আমি কোনও চিন্তাবিদ নই। আমি একজন স্রষ্টা। কমনওয়েলথ এর ভাষা আমার ভাষা নয়। এই ভাষায় বলেছি, কারণ যা বলতে চাই তা অন্য মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ এই ভাষা ধরতে পারবে। তবে এই লেখার জন্য একটা সর্বজনীন ভাষা দরকার। সেই কাঙ্ক্ষিত ভাষার খোঁজ করছি। একদিন অবশ্যই খুঁজে পাব সেই পরম ভাষা। যা আমার জন্য উপযুক্ত। আপাতত অপেক্ষা ছাড়া উপায় নেই। আগে কখনও এভাবে ভাষা খুজে খুঁজে হয়রান হইনি।

অবেশেষে শেষ হয় অপেক্ষা, ছুটির অবসরে খুঁজে পেলেন সেই পরম ভাষা। যে ভাষায় লেখা হয় তার শ্রেষ্ঠ লেখা। ১৯১৮ সালের গ্রীষ্ম। এপ্রিলের নরম রোদে উড়ে যায় দীর্ঘদিন ফেলে রাখা অসমাপ্ত পাণ্ডুলিপির ধুলো। দীর্ঘদিন ধরে যে লোখা বয়ে বেড়াচ্ছেন, দুবছর ধরে যা তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে, সেই আল মোস্তাফা, দ্বীপের নির্বাসিত ঈশ্বরে আচ্ছন্ন হয় মন। এখানে দুপুর, বিকেলগুলো অপূর্ব। দিনের পুরোটা সময় নিজের দখলে। হাতের মুঠোয় জীবনের নির্যাস বোঝার যোগ্য সময়ে মেসাচুসেটসের ফার্ম হাউস থেকে মেরিকে জানান, এই লেখাটা তার সত্তাকে গ্রাস করে রেখেছে।

নিজের সবটুকু দিয়ে এই লেখার পরিচর্যা করতে চাই। এর আগে তুমি আর আমি মিলে যতটা যত্ন করেছি; তার চেয়ে বেশি যত্ন দিতে চাই এই লেখাকে। এটি হবে ইংরেজিতে। তোমার সাহায্য ছাড়া আমার ইংরেজিতে লেখা কীভাবে সম্ভব? প্রফেট তার ইংরেজিতে লেখা তৃতীয় গ্রন্থ। এর আগে প্রকাশিত হয়েছে মেডম্যান ও ফোররানার। তৃতীয় গ্রন্থে এসেও কাটেনি সংকোচ। মুক্তি মেলেনি ভিন্নভাষায় লেখার মানসিক চাপ থেকে। প্রফেট লেখার সময়ও সতর্ক থেকেছেন যে একটি বিদেশি ভাষায় লিখছেন। জিবরানের মাতৃভাষা আরবি। প্রথমদিকের বইগুলোও লেখা হয়েছে আরবিতে। ইংরেজিকে কখনও নিজের ভাষা মনে হয়নি। ইরেজিতে লেখার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর থেকেই এই ভাষা নিয়ে অস্বস্তি, ভয় ছিল মনে।

ক’বছর আগে মেরি তাকে পড়তে দেন এরিস্টিক পেটরিডের কবিতার বই। লাইটস অব ডন। পড়তে গিয়ে মনে প্রশ্ন ওঠে, কোনও কবির পক্ষে কি সফলভাবে দ্বিতীয় ভাষায় লেখা সম্ভব? জিবরানের মনে হয় ইংরেজিতে ভালো কবিতা লিখতে পারবেন না। যদিও চেষ্টা চলছে। প্রফেট লেখার সময়েও কাটেনি ভয় ও সংকোচ। আমেরিকান বন্ধু মেরির কাছে জানতে চান, আমার ইংরেজি কি আধুনিক? নাকি পুরোনো আমলের? ইংরেজি এখনও আমার কাছে বিদেশি ভাষা। এখনও আমি শুধু আরবিতেই চিন্তা করি। আমি ইংরেজি শিখেছি শেক্সপীয়ার, বাইবেল আর তোমার কাছে।

সংকোচ সারানোর চেষ্টা করেন মেরি। বন্ধুর ইংরেজির পাশে দাঁড়ান। বলেন, তার ইংরেজি সাবলীল। সহজ কাঠামো। ছোট ছোট বাক্য। বাইবেলের স্টাইলের কথা মনে করিয়ে দেয়। বাইবেলের মুগ্ধ পাঠক জিবরান মেরির প্রশংসায় আস্বস্ত হন। মেরি বলেন, আরবির মতো ইংরেজিও এক সৃষ্টিশীল ভাষা। মেরির মতে এটা তারও ভাষা। মেডম্যান ও ফোররানারের ধারাবাহিতকায় প্রফেটও লেখা হয় ইংরেজিতে। এই একমাস কোনও ছবি আঁকেননি। অন্য কোনও লেখায় হাত দেননি। শুধু থেকেছেন আল মোস্তফাকে নিয়ে। এখানে দিনরাত নির্বিঘ্নে লেখালেখির সুযোগকে কাজে লাগান। এখানেই শেষ করেন দুই তৃতীয়াংশ লেখা। মেসাচুসেটস এ মিসেস মেরি ট্যুডর গারেলন্ডের ফার্ম হাউসের নির্জন কটেজে বসেই লেখেন সেই বড় ভাবনার লেখা, পরে যার নাম রাখা হয় প্রফেট।

ফার্ম হাউস থেকে লেখা নিয়ে চলতে থাকে মেরির সঙ্গে পত্রালাপ। প্রফেটে আল মোস্তাফার মাধ্যমে সবকিছু বলেছি। এখানে কবিতা লেখার চেষ্টা করছি না। চেষ্টা করছি ভাবনার প্রকাশ ঘটাতে। শব্দের সুরটা সঠিক হওয়া চাই। যেন তারা নজর এড়িয়ে না যায়। যেন তারা ডুবে যায়। পানি যেমন কাপড়ের সঙ্গে মিশে যায়। ভাবনাও তেমনই। নিবন্ধিত হওয়া জরুরি। শব্দের আদালতে। বড় সৃষ্টির জন্য চাই উপযুক্ত পরিবেশ। ফার্ম হাউসে কাটানো চব্বিশ দিনের অবসরে শেষ করেন প্রফেটের প্রথম পর্বের খসড়া। এই একমাস কেটেছে ছুটির আমেজে। মিসেস গারল্যান্ডের কটেজগুলো শিল্পী ও লেখক বন্ধুদের জন্য উন্মুক্ত। অবসরে তারা এখানে আসেন, ছবি আঁকেন লেখেন। এমন পরিবেশে কিছুদিন কাটানো এক দারুণ অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতা তুলনা করা যায় ইতালির আন্দিয়াতিক সমুদ্রের উপকূলে বন্ধু রাজকুমারী মেরি ভন থার্ন হোয়েরলোহির পরিত্যক্ত প্রাসাদ ডুয়িনো দুর্গে বসে লেখা ডুয়িনো এলজির সঙ্গে। কিংবা সুইজারল্যান্ডে ধনী বন্ধুর পাথুরে বাড়িতে বসে ডুয়িনো এলজি শেষ করার সঙ্গে। আয়ারল্যান্ডের প্রত্যন্ত গ্রামে বেলিলি দুর্গে বসে ইয়েটসের লেখালেখির পরিবেশের কথাও আসতে পারে। চিকিৎিসকের পরামর্শে অবসর কাটানো অবকাশে সমুদ্রতীরের নির্জন বাড়িতে বসে এলিয়টের ওয়্যাস্টল্যান্ড শেষ করার কথাও মনে পড়ে যায়। চলবে