টাইফয়েডের নতুন রূপ, কাজ হচ্ছে না অ্যান্টিবায়োটিকেও
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : অক্টোবর ১২, ২০২৫
আগের মতো অ্যান্টিবায়োটিকে টাইফয়েড এখন আর কমছে না। ধীরে-ধীরে বদলে যাওয়া এই ব্যাকটেরিয়া এখন অনেক বেশি শক্তিশালী ও বিপজ্জনক।
এ নিয়ে যুক্তরাজ্যের হাসপাতালগুলোতে (ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও উত্তর আয়ারল্যান্ড) উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। একে সাময়িক বা মৌসুমি বৃদ্ধি বলা যাচ্ছে না।
স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ইউকে হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সি (ইউকেএইচএসএ) জানিয়েছে, শুধু ২০২৪ সালেই টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েডের ৭০২টি নিশ্চিত রোগী শনাক্ত হয়েছে। যা আগের বছরের চেয়ে ৮ শতাংশ বেশি। এটি এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যা।
এই সংক্রমণ স্থানীয় নয়। যুক্তরাজ্যের কোনো শহর থেকে নয়, বেশির ভাগ রোগীই বিদেশ ভ্রমণের পর এই ব্যাকটেরিয়া বহন করে ফিরেছে। যেসব দেশে পানি ও খাবারে এখনও টাইফয়েড ছড়ায়, সেখান থেকেই রোগ ফিরে আসছে।
কিন্তু এবার ওষুধ আর কাজ করছে না। টাইফয়েড এমন এক রূপ নিয়েছে যা বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন ‘ওষুধ-প্রতিরোধী শিকারি, যাকে কোনোভাবেই বাধ দিয়ে রাখা যাচ্ছে না’।
সবচেয়ে ভয়ংকর রূপটি ছড়াচ্ছে পাকিস্তানে। সেখানে যে টাইফয়েড ছড়াচ্ছে তা এখন কোনো অ্যান্টিবায়োটিকেই ভয় পাচ্ছে না। এমনকি নতুন ওষুধেও নয়। এই ধরনের জীবাণুকে এখন বলা হচ্ছে ‘এক্সটেনসিভলি ড্রাগ-রেজিস্ট্যান্ট টাইফি’ বা ‘এক্সডিআর টাইফি’।
এটি অ্যামপিসিলিন, ক্লোরামফেনিকল, ট্রাইমেথোপ্রিম, ফ্লুরোকুইনোলন কিংবা সেফালোসপরিন— কোনো ওষুধেই কাজ করছে না।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. জেসন অ্যান্ড্রুজের নেতৃত্বে গবেষকেরা ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে নেপাল, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান থেকে সংগৃহীত প্রায় ৩,৫০০ ব্যাকটেরিয়া নমুনা বিশ্লেষণ করেন। তাদের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ওষুধ-প্রতিরোধী টাইফয়েডের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে এবং তা আগের স্বাভাবিক জীবাণুগুলোর জায়গা নিয়ে নিচ্ছে।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, এই পরিবর্তিত জীবাণুগুলো এখন আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। ১৯৯০ সালের পর থেকে অন্তত ২০০টি আন্তর্জাতিক সংক্রমণ ধরা পড়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব আফ্রিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা— এমনকি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাতেও এই ভয়ংকর টাইফয়েড ধরা পড়ছে।
বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েডে আক্রান্ত হয়। তাদের মধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়, যাদের বেশির ভাগই এশিয়া ও আফ্রিকার শিশু। এত বড় সমস্যা হয়েও টাইফয়েডকে সাধারণত সংবাদে খুব কমই দেখা যায়।
এখনও মুখে খাওয়ার কিছু অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে। কিন্তু তার শক্তিও দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। ৩ দশক ধরে ব্যাকটেরিয়া ধীরে-ধীরে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। তারা শিখে নিয়েছে কীভাবে ওষুধকে হারাতে হয়, এবং এখন সেই জ্ঞান সীমান্ত পেরিয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে নিজেদের মধ্যে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আফ্রিকা ও ওশেনিয়া অঞ্চলে গবেষণার তথ্য অনেক কম। অনেক দেশেই নমুনা নেওয়া হয় সীমিত জায়গা থেকে, যা দিয়ে পুরো চিত্র বোঝা সম্ভব নয়। এর মানে আমরা হয়তো এই সংক্রমণের প্রকৃত মাত্রা ও বিস্তারের গতি ঠিকমতো বুঝতে পারছি না।
ড. অ্যান্ড্রুজ বলেন, “এটি সত্যিই উদ্বেগের বিষয়। টাইফয়েড নিয়ন্ত্রণ এখন একটি বৈশ্বিক জরুরি সমস্যা। নজরদারি বাড়াতে হবে, নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি খুঁজতে হবে এবং টিকা পৌঁছে দিতে হবে যেখানে সংক্রমণ শুরু হয়, শেষ হয় না।” সূত্র: জি নিউজ























