
দিল্লিতে সহিংস বিক্ষোভ
তুহিন খানের কলাম ‘ক্ষতিগ্রস্ত সেই হয়, যার দোষ নাই’
প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০
মসিবতের সময়ে মানুষের রাগ, হিংসা ও বোকামিগুলা বারবার মাথাচাড়া দিয়া ওঠে। বারবার মানুষ মানুষের মসিবতরে ক্যাশ করতে চায়। কিন্তু খালি `ক্যাশ` করার ভিতরে এই মসিবত শেষ হবে না।
এইরকম মসিবতের সময় অনেকেই ইগোর ব্যারামে ভোগে। মসিবত নয়, তাদের কাছে নিজের ইগোটাই বড় হয়ে ওঠে। তারা ইগোর চর্চা করতে করতে মসিবতটারেও ভুইলা যায় শেষমেশ। অনলাইনে এরা দেখবেন নানান অর্থহীন বিতর্ক করতে থাকে। প্রতিবাদের মঞ্চ ডিভাইড করতে থাকে, ভাগ ভাগ খেলতে থাকে। এইগুলা এড়াইতে না পারলে আসলে কাজের কাজ হয় না কিছুই।
অনেকে বাংলাদেশের হিন্দুত্ববাদী দলগুলার ছবি ও মতাদর্শ শেয়ার করতেছে। তাদের মোদি ও ভারতপ্রীতির বিরুদ্ধে বলতেছে। খুব ভালো কথা। কিন্তু আমার সবিনয় জিজ্ঞাসা, বাংলাদেশে ভারতের হেজিমনি ও তাবেদারির বাইরে, এখন ঠিক কোন রাজনৈতিক দলটা আছে? যে সরকার দেশ চালায়, তারা আছে কী? নাই। তাইলে পরিস্থিতিটা বোঝা দরকার। এদেশের সাধারণ হিন্দু জনগণ আমাদের ভাই। তারা সেই সমস্ত লোক, যারা দুই দুইবারের সুযোগেও দেশটা ছাড়ে নাই। এই দেশেই থেকে গেছে।
পুরা দেশটা যখন এইরকম একটা ফ্যাসিবাদের কবলে পইড়া রাজনীতিহীন, তখন সাম্প্রদায়িকতাসহ আরো নানারকমের কু-রাজনীতির উত্থানই তো হবে, না? অতীতের যেকোনো সময়ের চাইতে ভারতের গ্রিপ এখন অনেক শক্ত বাংলাদেশের উপর। তা কি এই হিন্দু সংগঠনগুলার কারণে? না। কে সেই সুযোগ দিল ভারতেরে? সেইটা আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দল আওয়ামী লীগের কারণেই।
খেয়াল করেন, আবরাররে খুন করল কারা? ছাত্রলীগ। কিন্তু হঠাৎ এমন এক `ইসকন` গুঞ্জন শুরু হইল, যেন ইসকনই খুনটা করছে। এইভাবেই আওয়ামী লীগরে ক্যামোফ্লাজের সুযোগ দিই আমরা। আপনে ভারতের দালালির বিরুদ্ধে বলবেন? তো আওয়ামী লীগের কথা বলবেন না কেন? ডিজিএফআইয়ের কথা বলবেন না কেন? কেন বলবেন না সিপিবির কথা, যারা যেকোনো ইস্যুতে ভারতের নাম মুখেই আনতে চায় না? কেন খালি গুটিকয় হিন্দু সংগঠন, যারা দেশের এই ঘোলা পরিস্থিতি, এই রাজনীতিহীনতার সুযোগে নিজের আখের গুছায়, তাদেরকে প্রচার কইরা বেড়াবেন? এরা `কজ` না, `ইফেক্ট`— এইটা বোঝা লাগবে।
প্রিয়া সাহা বা রাণা দাশগুপ্তের কি এই দেশের সাধারণ মানুষের জন্য কোনো মমতা আছে? প্রিয়া সাহারা এসব করে একান্ত ব্যক্তিগত ধান্দায়, ট্রাম্পের কাছে নালিশের ঘটনার পিছনে আসলে কী ছিল, সবাই জানেন। তাদের প্রচার করার ফায়দা কী? ইতিহাস দেখেন, ক্ষতিগ্রস্ত সবসময় সেই হয়, যার কোনো দোষ নাই। প্রিয়া সাহাদের কাজের দাম চুকাইতে হয় হরিদাস পালদের। সবসময়। আপনি মোদি বা রানা দাশগুপ্তের কিছুই করতে পারবেন না আদতে, যদি আসল ব্যাপারগুলা না বোঝেন।
তাইলে যে দেশের সরকারই ইন্ডিয়ার দালাল, সে দেশে অন্যরা কী হবে? আমাদের দেশে আগে তো এই `বাংলাদেশ জনতা পার্টি` ছিল না, যারা কিনা মোদি-অমিত শাহর ছবি টানায়ে রাখে কভারে। এই পার্টিরা গজায় কীভাবে? সেইটা বোঝা যায় তখন, যখন এই পার্টির সভাপতিরে প্রশ্ন করা হয় যে, এইটা কি ধর্মভিত্তিক দল? আর উনি বলেন, এটা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দল।
তো, এই রেটোরিক কার? `মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি` রেটোরিকের তলেই আছে হিন্দুত্ববাদ, উগ্র জাতিবাদ আর ভারতের দালালি করার সমস্ত যুক্তির হদিশ। তাইলে এইটা কি এদেশের সাধারণ হিন্দুরা বানাইছে? নাকি পুরা দেশই আসলে ডুইবা আছে ওই কাদায়? ব্যাপারটা যতটা না হিন্দুদের, ইসকন বা এই টাইপের ষড়যন্ত্রতত্ত্বের, তারচাইতে বেশি আমাদের জাতীয় রাজনীতির প্রশ্ন— এইটা বোঝা দরকার। হইতে পারে, আপনার রাগের সুযোগটা আওয়ামী লীগই নেবে। হামলা করবে হিন্দুদের উপর। নাম হবে আপনার।
এই দেশের সবাই-ই তো এখন ভারতের দালাল। শুধু অন্যদের দোষ দেয়া কেন? আপনি দালাল না? তাইলে মাঠে নামেন। খুনি মোদিরে বাংলাদেশ চায় না— পষ্টভাবে বলেন। মোদির ইন্ডিয়া আর শেখ হাসিনার বাংলাদেশের বিপক্ষে কথা বলেন। দালালির মাপকাঠি হবে ওইটাই। তা আপনে মুসলমান হন, আর হিন্দুই হন।