নভেরা হোসেন
নভেরা হোসেনের পাঁচটি প্রেমের কবিতা
প্রকাশিত : জুন ১৮, ২০২০
রাত্রির স্নিগ্ধতা আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখে
রাত্রির স্নিগ্ধতা আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখে।
তুমি এসেছিলে স্বপ্নে চোখে চুমু মেখে
অসার ক্লান্তিহীন মৃত্যুর পরে
তোমার নিঃশব্দ উন্মীলন ধুয়েমুছে দেয়
মেঘহীন শ্রাবণের অখণ্ড রাত।
ঘনঘোর বর্ষণে ভেসে গেছ
প্রেমহীন কল্পনার শয্যায়;
তোমার নিস্প্রাণ বিহঙ্গ-ভ্রমণে
উবে গেছে মদিরা মাখা উন্মাতাল দিন
ঝরে গেছে অপরিণত শিউলির রাত
চোখবুজে একদিন বুঝেছিলাম
প্রেম স্বর্গীয় এবং গোল
দায়হীন হৃদয়ের কথালাপ
ছুঁয়ে দিলেই বিষাক্ত সাপ
কর্পূরের গন্ধ বিলীয়মান বাতাসে
তার জন্য সঞ্চিত উচ্ছ্বাস প্রেমিকের
বুকে জমে থাকে
ঘন হয়ে আসা নিঃসঙ্গ রাতের আকাশে।
নেশা
ঘুমের ভেতর দিয়ে চলে যাই
কোমল পেলব সবুজাভ বনে,
অপ্রত্যাশিত ভোর হয়ে
এসেছিলে তুমি
স্বাপ্নিক চোখজোড়া নিয়ে।
বহুদিন অপেক্ষায় আছি—
এমন দীর্ঘ নয় স্রোতোধারা,
ক্ষণিকের মতো বুদবুদও নয়
মিলিয়ে যাবে আকস্মিক
এ এক সৃষ্টিছাড়া মাতাল সুর
রক্তের ভেতর নাচন জাগিয়ে
উদ্বেল হাওয়ার কথা বলে।
ঘুমের ভেতর চোখ বুজে ভাবি
এই ঘোর কেটে গেলে
খুঁজে পাব কি কোনো হরিণাভ নেশা?
তোমার সঙ্গ পাব বলে
তোমার সঙ্গ পাব বলে
আনন্দে নেচে ওঠে প্রাণ
পরানে ডাকিছে বান
তুমি কেন দূরে দূরে থাকো?
ট্যাক্সির বাম কোণে চেপে
কি দূরত্ব রাখো?
খুলে ফ্যালো পা-মোজা, বুটজুতা
পোশাক হারানোর দিনে
পেয়েছ কি কোনো ছুতা?
লেকের জলের আড়ালে লুকিয়ে মুখ
কেন করো নিকষ কালো?
আলো, ও আমার আলো।
শোনো মোর প্রাণসংহার
মনে যত গ্লানি আছে
করো চুরমার
আজি পথে পথে ঘুরি
নাচি এবং উড়ি
সখা মোর বাঁধা পড়ে আছে
স্রোতস্বিনী করতোয়ার কাছে।
জলজতা
এক.
ঝুম বৃষ্টির কণা ঝরছে
ক্লান্তিহীন বর্ষার রাতে
রক্তের প্রতিটি বিন্দু
অস্ফুট বেদনার মতো ঝরে পড়ছে
সমস্ত আকাশে
দুই. বর্ষিত হচ্ছে সুকঠিন
উত্তাপ, আনন্দ, বেদনা
ফোঁটা ফোঁটা ভারি জল হয়ে
ঝরে পড়ছে ক্লেদজ বিষণ্ণতা
তিন. দুকূল প্লাবিত করে
ভেসে গেছে চরাচর
মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য
অ্যাকুয়ারিয়ামে বদ্ধ জলজ-মীন
সেও ভেসে গেছে
সেই রাতে
ইস্রাফিলের বাঁশি
দমকা হাওয়ায় উড়ে গেছে
কাগজের ছেঁড়া টুকরা
ধুলো ধুলো সব কণারা, উদ্বিগ্ন মন।
সে এক ধূসর ঝড় উঠেছে আকাশে
উবে গেছে সমস্ত জারিজুরি, রঙিন ফানুস
মুখোশে-ঢাকা সাবধানি চোখ।
আহা! নেশালাগা ঝড়
তোমার উদ্বেল হাওয়ার সাথে আজ
ভেসে যেতে চাই
কোথায় জানি না ঠিক
আর ফিরবার সাধ নাই।
























