নিতির গল্প

উপন্যাস ৩১

অমিত কুমার কুণ্ডু

প্রকাশিত : জুন ০৭, ২০২০

হঠাৎ আদনানের ফোনে রিমি খুশিও হলো আবার দুশ্চিন্তাও মাথায় জেঁকে বসল। কি বলবে আদনান, কে জানে? সেদিন রেস্টুরেন্টের ওই অদ্ভুতুড়ে পরিবেশে আদনানের চোখে নেশা ছিল। পুরুষ মানুষের এই চোখ দেখলে যে কোনও নারী আঁতকে উঠবে। এ না প্রেম, না ভালোবাসা। নারীকে ব্যবহার করার এক আদিম কামনার আগুন চোখমুখে।

আদনানের কেমন আছ প্রশ্নের উত্তরে রিমি বলে উঠল, ভালো আছি, আপনি কেমন আছেন?
আমিও ভালো। শোনও, আজ প্রযোজকের সাথে নাটকের ডিলটা ফাইনাল হয়ে গেল। এবার শুটিং শুরু করতে হবে।
কবে থেকে শুরু করবেন?
আজ তো এক তারিখ। আমরা পাঁচ তারিখে কক্সবাজার পৌঁছাতে চাচ্ছি। সেক্ষেত্রে চার তারিখ রাতে ঢাকা থেকে বাসে উঠতে হবে।
কে কে থাকছে?
তোমার পরিচিত অনেকেই থাকবে। যেমন ধরো তুমি থাকছ, শোভা থাকবে, তপু থাকবে, আরো অনেকে।
আমি থাকছি? রিমি একটু খুশি হলো।
হ্যাঁ, তুমি তো থাকছই। হয়্যার অ্যাজ, সেন্ট্রাল ক্যারেকটার হিসেবে থাকবে?
কি বলছেন, এসব কি সত্যি?
না, সত্যি না, ধপ দিচ্ছি। আদনান হো হো করে হেসে উঠল। হাসি সংক্রমিত হয়, রিমিও খিলখিল করে হাসতে থাকল।

ঘণ্টাখানেক পর খালাম্মার হোস্টেলে শোভা এলো। এসেই বলল, কি খবর? আমাদের হিরোইনের মুখ যে লজ্জায় লাল হয়ে গেল?
এ্যাই, ভালো হবে না বলছি। একদম ইরিটেট করবি না?
ইরিটেটের দেখেছিস কি? কেবল তো শুরু হলো।
মানে?
মানে এত বড় একটা চাঞ্চ পাচ্ছিস। ট্রিট দিবি নে?
আগে কাজটা হোক। পেমেন্টটা পায়। তারপর না ট্রিট।
ততদিনে সব ভুলেটুলে যাবি। আমার মতো সাধারণ অ্যাকট্রেসের কথা কি মনে থাকবে তোর?
আবার দুষ্টমি, থাপ্পড় খাবি একটা?
আচ্ছা বাদ দে। গোছগাছের কী করলি?
আরে কেবল আদনানের ফোন পেলাম। এখনই কী গোছগাছ করব? তাছাড়া হাতে তো এখনো তির চার দিন আছে।
তা আছে। তবুও, এখনই প্রস্তুতি নে, এ ক`দিন দেখতে দেখতেই চলে যাবে।
হ্যাঁ, কী কী নেব বল তো একবার?
তুই কখনো কক্সবাজার গিয়েছিস?
না?
ঢাকার বাইরে এটাই তো তোর ফার্স্ট শুটিং?
হ্যাঁ।
চিন্তা করিস না। আমিও তো যাচ্ছি। সব ম্যানেজ করে নেব।
হ্যাঁ, তুই আছিস বলেই তো নির্ভাবনায় আছি।

কিছুক্ষণ গল্পগুজব করার পর শোভা চলে গেল। কক্সবাজার আগের তিন দিন শপিং করা, প্রয়োজনীয় টুকটাক জিনিসপত্র কেনকাটা, পার্লার থেকে লুক ঠিক করে নেয়া, এসবেই কেটে গেল। শোভা ছায়ার মতো সাথে ছিল। আদনান কিছু টাকা অগ্রীম পাঠিয়েছিল। কস্টিউম কেনা, কস্টিউমের সাথে মানানসই কিছু ইমিটেশনের অর্নামেন্টস্ কেনা, আর টুকটাক কসমেটিক্স কেনাকাটা করতেই তার বেশিরভাগ টাকা খরচ হয়ে গেল।

গল্পের প্রয়োজনে যেসব কস্টিউম দরকার, সেগুলো কস্টিউম ডিজাইনার সাথে নিয়ে যাবে। মাসখানেক আগে ও একবার পোষাকের মাপ দিয়ে এসেছিল। সেটের লোকজন থাকবে। শোভা বলল, তুই চিন্তা করিস না। আমাদের যা যা দরকার তা আমরা কিনে নিয়েছি। বাকী সবকিছুর দায়িত্ব সেটের ম্যানেজারের।

নির্দিষ্ট দিন পূর্ব নির্ধারিত সময়ে ওরা গাড়ি ছাড়বার জায়গায় পৌঁছে গেল। আদনান ও বাকি কী আর্টিস্টদের সাথে একটা চোদ্দ সিটের এসি হায়াসে উঠে বসল ওরা। বাকিরা একটা রিজার্ভ বাসে উঠল। টোটাল টিমে সেটের মানুষজন, ক্যামেরাম্যান, টেকনিশিয়ান, ম্যানেজার, বিভিন্ন বিষয়ের সহকারীরা, রান্নার বাবুর্চি, বিউটিশিয়ান, কোরিওগ্রাফার, মেকাপ র্টিস্ট, ট্রলি ম্যান, ইলেকট্রিশিয়ান, জেনারেটার ম্যানসহ প্রায় পঞ্চাশ-ষাট জনের একটা বহর। এলাহি কাণ্ডকারখানা।

একটা জেনারেটর নিয়ে মাঝারি সাইজের একটা পিকাপ দাঁড়িয়ে। রিফ্লেকটর, লাইট, চেয়ার-টেবিল, হাঁড়ি-পাতিল, ছাতা, তাবু, মোটরসাইকেল সহ বিস্তর জিনিসপত্র নিয়ে আরেকটি ট্রাক। সবমিলিয়ে চারটা গাড়ির একটা বহর ছুটল কক্সবাজারে।

এদিকে, রাধার মাকে দিয়ে ডা. সুনন্দ খবর পাঠিয়েছিল। মায়ের অনুরোধে একদিন নন্দ বাবুর বাড়িতে এলো সে। মা এ বাড়ি কাজ করলেও, বাড়ির প্রত্যেকের ব্যবহার বেশ সাবলীল। নন্দ বাবুর স্ত্রী শেফালী দেবী যথেষ্ট আন্তরিক। কাজের লোকের মেয়ে হিসাবে তাকে কেউ দেখছে না।

ডা. সুনন্দ রাধাকে বেশকিছু গাইডলাইন দিল। কিছু কিছু পড়া দেখিয়ে দিল। রিপ্রেজেন্টেটিভদের কাছ থেকে পাওয়া অনেকগুলো কলম, প্যাড, কিছু কমন ওষুধ, এমনকি একটা ছাতাও দিল ওকে। যদিও উপহারের জিনিস উপহার পেল সে, তারপরও খুব ভালো লাগছে ওর। এ জীবনে আর কেউ তো কখনো কিছু দেয়নি। এই প্রথম, এক চিলতে আনন্দ, সম্মান, উপহার, সব যেন একসাথে এল। কি যে অনুভূতি এই সামান্য উপহার পাওয়ার মধ্যে, তা যদি কাউকে জানান যেত। চলবে